Main Menu

রিজিক বৃদ্ধির আমল

মো. আবু তালহা তারীফ:
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব না।’ তিরমিজি

রিজিকের সন্ধানে আমরা দিশেহারা। পরিশ্রম করে ঘাম ঝরিয়ে রিজিক তালাশ করি। ইবাদতের সময়কে ভুলে গিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকি। অথচ এই রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর অপর একটি নাম রাজ্জাক, যার অর্থ হলো রিজিকদাতা। ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয়ই আমার রব তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ সুরা সাবা-৩৯। রিজিক বৃদ্ধির জন্য আমাকে প্রথম আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য তার প্রিয় বান্দা হওয়া চাই। এক্ষেত্রে ক্ষমা চাওয়ার বিকল্প নেই। ক্ষমার মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দার রিজিক বৃদ্ধি করে দেন, যা হাদিসে প্রমাণিত। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার পড়বে, আল্লাহ তাকে দুশ্চিন্তা ও সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেবেন এবং ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন।’ আবু দাউদ।

মৌমাছি আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টিমৌমাছি আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি
রিজিক বৃদ্ধির জন্য সহজ একটি আমল হলো আল্লাহর প্রতি ভয় এবং তাকওয়া অর্জন করা। ভালোমন্দ সবকিছুই তারই নির্দেশনায় হয়। আল্লাহ আমার রব, আল্লাহ আমার সব। তিনি সবকিছুরই মালিক। আমাকে অবশ্যই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা অর্জন করে নিজ কর্মে নিয়োজিত থাকতে হবে, যা আমরা পবিত্র কোরআনের সুরা তালাকের ২ ও ৩ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে জানতে পারি। ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’

আমরা সম্পদ বৃদ্ধির জন্য পরিবার কিংবা নিজ আত্মীয়দের তেমন খোঁজ রাখি না। এমনকি অধিক সম্পদের জন্য তাদের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়। অথচ আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্কের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি প্রিয় নবিকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ বুখারি ও মুসলিম।

জাকাত বোর্ড ও দারিদ্র্য দূরীকরণজাকাত বোর্ড ও দারিদ্র্য দূরীকরণ
আত্মীয়দের পাশাপাশি প্রতিবেশী ও গরিব অসহায় এবং আল্লাহর রাস্তায় দানের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি হয়। তাই আমাদের রিজিক বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত দান সদকা এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া বিবাহের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সত্কর্মশীল দাসদাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ সুরা নূর, আয়াত-৩২।

রিজিক বৃদ্ধির জন্য একটি তাসবিহ আমল রয়েছে, যা প্রত্যহ সুবহে সাদিকের সময়ে ১০০ বার পাঠের মাধ্যমে আয়ে বরকত পাওয়া যায়। তাসবিহটি হলো, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম, আস্তাগফিরুল্লাহ।’ রিজিক বৃদ্ধি করতে চাইলে আল্লাহর ইবাদতকে প্রাধান্য দিতে হবে। ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে আল্লাহর ইবাদতে নিজকে সঁপে দিতে হবে। রিজিকের পেছনে নয়, যিনি রিজিক প্রদান করেন সেই রাজ্জাকের দেওয়া নিয়মে ছুটতে হবে। হালাল উপায়ে উপার্জন করতে হবে। তাহাজ্জুদ নামাজসহ সর্বদা রিজিক বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব না।’ তিরমিজি।

লেখক: শিক্ষক, ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাবেক খতিব






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *