Main Menu

জোড়া সেঞ্চুরিতে চালকের আসনে বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক:
সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে টেনে তুলে রীতিমত চালকের আসনে বসিয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিত আছেন দুজনেই।

এই দু’জনের জোড়া সেঞ্চুরি এবং রেকর্ড গড়া জুটিতে চড়ে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষে ওই ৫ উইকেটেই ২৭৭ রান জড়ো করেছে বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট শতক হাঁকানো লিটন দাস ক্যারিয়ার সেরা ১৩৫ রানে এবং টানা দ্বিতীয় শতক হাঁকানো মুশফিকুর রহিম অপরাজিত আছেন ১১৫ রানে।

চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে আধিপত্য বিস্তার করে ড্র করলেও সোমবার থেকে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া টেস্টের প্রথম সেশনটি ছিল বাংলাদেশের জন্য ঠিক দুঃস্বপ্নের মত।

ওই ম্যাচে ফিফটি ও সেঞ্চুরি হাঁকানো দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও তামিম ইকবাল এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। এরপর নাজমুল হোসাইন শান্ত ৮, অধিনায়ক মোমিনুল হক ৯ ও সাকিব আল হাসান শুন্য রানে ফিরলে মাত্র ২৪ রানেই পাঁচ টপ অর্ডারকে হারিয়ে খাদের কিণারে পড়ে যায় দল।

শ্রীলঙ্কার দুই পেসার কাসুন রাজিথা ৩টি ও আসিথা ফার্নান্ডো ২টি উইকেট নিয়ে টাইগারদের মাজা ভেঙ্গে দেন। রীতিমত ছেলে খেলায় মাতে সফরকারী দল। তবে তা ছিল ওই পর্যন্তই। এরপরের গল্প শুধুই লিটন-মুশফিক ও বাংলাদেশের।

কেননা, ওই ধ্বংসস্তুপের মাঝ থেকেই বুক চিতিয়ে লড়াই করে পরের দুটি সেশনসহ পুরো দিনটিই নিজেদের করে নেন মুশফিক ও লিটন। দৃষ্টিনন্দন সব কাভার ড্রাইভ, পুল ও সুইপ শটে চারের ফুলঝুরি ছোটান দুজনেই।

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম ৪৫ মিনিট বাদে পুরোটা সময় লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম ব্যাট হাতে দর্শকদের যে বিনোদন দিয়েছেন, আনন্দদায়ী শটে মন ভরিয়েছেন, ব্যাট হাতে তুলির আঁচড়ে সবুজ গালিচায় যে শিল্প অঙ্কন করেছেন, জোড়া শতকে উদযাপনে ভেসেছেন-ভাসিয়েছেন, রেকর্ড গড়ে দলকে স্বস্তি দিয়েছেন, তাতে চোখ বন্ধ করে বলাই যায়- মাঠে লিটন-মুশি ক্রিকেটটা যতটা উপভোগ করেছেন, তার চেয়েও হাজারগুণ বেশি চোখের এবং মনের শান্তি পেয়েছেন টাইগার ভক্তরা।

সকালে লঙ্কান তোপে ৫ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে সারাদিনে অবিচ্ছিন্ন থেকে ২৫৩ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটা নিজেদের করে নিলেন লিটন ও মুশফিক।

ঢাকার কোনো মাঠে ৭৩ বছর আগে গড়া এক রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছেন এই দুজনে। সঙ্গে দুই ব্যাটারই তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। যাতে খাদের কিনার থেকে এখন চালকের আসনে উঠে বসেছে বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ খেলেও অল্পের জন্য শতক বঞ্চিত হন। আচমকাই বাইরের একটি বল তাড়া করার মাশুলটা শতক মিস করেই দিতে হয়েছিল লিটন দাসকে। ফিরেছিলেন ৮৮ রান করে। তবে হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে এবার আর সেই ভুল করলেন না।

ডানহাতি এই ব্যাটার লঙ্কানদের বিপক্ষেই তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। ইনিংসের ৬৩তম ওভারের শেষ বলে পাঁচ রান নিয়েই ১৪৯তম বলে পৌঁছে যান তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। ১৪টি বাউন্ডারির সাহায্যে দুর্দান্ত এই শতক তুলে নিয়ে অপরাজিত আছেন ১৩৫ রানের ইনিংস খেলে। ক্যারিয়ার সেরা এই ইনিংস খেলার পথে লিটন হাঁকিয়েছেন ১৬টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কাও।

অন্যদিকে, মাত্র ২৪ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর লিটনকে নিয়ে দলের হাল ধরা মুশফিকও ছুটেছেন সঙ্গীর পথেই। এ দুজনের রেকর্ড গড়া ২৫৩ রানের রেকর্ড জুটিতে খাদের কিনার থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের ইনিংসও।

যে জুটি গড়ার পথে লিটন-মুশফিক টপকে গেছেন ২০০৭ সালে কলম্বোয় সাগতিকদের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে গড়া ১৯১ রানের জুটি। সেই জুটিতেও অবশ্য নায়ক ছিলেন মুশফিক, আর সঙ্গী ছিলেম মোহাম্মদ আশরাফুল।

এদিন লিটনকে নিয়ে নিজেরই সেই রেকর্ড ভাঙ্গেন মুশফিক। নতুন রেকর্ড গড়া এই জুটিতে মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত এই লিটল মাস্টারের অবদান ১০৮ রান। সেইসঙ্গে ২১৭ বলে ১১টি চারের সাহায্যে লঙ্কানদের বিপক্ষেই টানা দ্বিতীয় শতক হাঁকানোর পাশাপাশি তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ৯ম শতকটিও।

১১৫ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে অপরাজিত আছেন চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা এই ব্যাটার।

এদিন অবশ্য আলোক স্বল্পতার কারণে পাঁচটি ওভার কম খেলা হয়েছে। অর্থাৎ ৮৫ ওভারে ওই রান তুলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ৭৮.১ ওভারই মোকেবিলা করেছেন লিটন-মুশফিকই।

মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে এই জুটি কোথায় গিয়ে থামে, তার উপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ইনিংসের ব্যাপ্তি। যদিও এখনও ক্রিজে নামার অপেক্ষায় আছেন মাত্র একজন স্বীকৃত ব্যাটার। আর তিনি মোসাদ্দেক হোসাইন সৈকত। মাত্র ৪টি টেস্ট খেলা এই ব্যাটার অবশ্য এই লঙ্কানদের বিপক্ষেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।

এছাড়া ব্যাট হাতে নামার অপেক্ষায় আছেন তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসাইন ও খালেদ আহমেদ।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *