Main Menu

ভারতে রিমান্ডে হালদার, গ্রেফতারের বিষয়ে কিছু জানেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগর থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলার মূল অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতারের পর তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রদেশের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে পি কে হালদারকে শনিবার দুপুরের দিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে তুলে রিমান্ডের আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর করা হয়।

শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে আদালতে তোলে ইডি। এক বিবৃতিতে ইডি বলেছে, হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদার নাম পাল্টে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে বসবাস করতেন। প্রদেশের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

শনিবার সেখান থেকে পি কে হালদারসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এর আগে, শুক্রবার দিনভর কলকাতা ও উত্তর চব্বিশ পরগনার অন্তত ৯টি স্থানে অভিযান চালায় ইডি। সেসময় উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পোলেরহাটে দু’টি বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার অবৈধ সম্পত্তির খোঁজে অভিযান শুরু করে ভারতের এই সংস্থা। কর্মকর্তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে প্রচুর নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন।

পি কে হালদারের সন্ধানে শুক্রবারও দিনভর কলকাতা ও উত্তর চব্বিশ পরগনার অন্তত ৯টি স্থানে অভিযান চালায় ইডি।

পরে শনিবার পি কে হালদারের সম্পত্তির খোঁজে দ্বিতীয় দফায় আবারও অভিযান শুরু করে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত মুম্বাই এবং রাজধানী দিল্লিতেও অভিযান চালায় ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী এই সংস্থা।

ইডি বলেছে, ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার সহায়তায় পি কে হালদার পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক রাজ্যে বিপুল সম্পদ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থপাচারের মাধ্যমে ভারতে একাধিক অভিজাত বাড়িসহ বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে খোঁজ পেয়েছে ইডি।

দেশটির কেন্দ্রীয় এই তদন্ত সংস্থা বলছে, তারা ইতোমধ্যে পি কে হালদারের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছেন। এসব নথিতে প্রাথমিকভাবে ভারতে তার ২০ থেকে ২৫টির মতো বাড়ির মালিকানার তথ্য মিলেছে। এছাড়া অভিযানের সময় পি কে হালদারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থও জব্দ করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে ইডি বলেছে, বাংলাদেশি নাগরিক প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। প্রশান্ত কুমার হালদার নিজেকে শিব শঙ্কর হালদার নামে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন।

বাংলাদেশি এই অর্থপাচারকারী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে ভারতীয় রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান এবং আধার কার্ডও সংগ্রহ করেছিলেন। প্রশান্ত কুমার হালদারের অন্য সহযোগীরাও ভারতীয় এসব কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করেন।

পি কে হালদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বাংলাদেশি এই নাগরিকরা প্রতারণার মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসায়িক কোম্পানি চালু করেন। কোম্পানি পরিচালনার পাশাপাশি কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইডির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার অন্তত তিনটি বাড়ি রয়েছে অশোকনগরে। এই এলাকায় তিনি মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।

দুর্নীতি দমন কমিশন ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, পলাতক পি কে হালদার তার নামে অবৈধ উপায়ে এবং ভুয়া কোম্পানি ও ব্যক্তির নামে প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন।

অবৈধ সম্পদের অবস্থান গোপন করতে ১৭৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করেন পি কে হালদার। তিনি এসব অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা জমা রাখেন। পাশাপাশি এসব অ্যাকাউন্ট থেকে তার নামে ও বেনামে আরও ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। দুদকের তথ্য বলছে, পি কে হালদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

হালদারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু জানেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য জানেন না বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তবে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শনিবার (১৪ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ সময় পিকে হালদারের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানি না। এ বিষয়ে অমি ডিটেইল জানি না। কিছু পত্রপত্রিকায় গ্রেপ্তারের খবর দেখলাম। এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে ভালো হয়। ওনারা আমাদের জানালে যা যা করার দরকার সেটা আমরা করব।’

পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। আমরা জানি না সেটা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কে এখনও কিছু জানে না। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য নেই। গ্রেপ্তারের বিষয়টা নিশ্চিত হলে মন্ত্রণালয় থেকে যে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন হবে সেগুলো নেওয়া হবে।

যারা দেশ থেকে বড় অংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, দুদক এ ব্যাপারে অনেক দিন ধরে কাজ করছে। আমাদের দেশের অনেক লোক নামে-বেনামে বিদেশে টাকা পাচার করছে। এরা দেশের শত্রু। সুতরাং যারা পাচার করছে তাদের ধরে নিয়ে আসা ভালো।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *