Main Menu

হজযাত্রা : ঘণ্টায় ৭ হাজার ডলারে বিদেশি উড়োজাহাজ ভাড়া!

নিউজ ডেস্ক:
হজযাত্রী বহনে বিদেশি উড়োজাহাজ ভাড়া করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। লিথুনিয়ার হেস্টন এয়ারলাইন্সের দুটি ‘এয়ারবাস এ-৩৩০ এস’ মডেলের উড়োজাহাজ ওয়েট লিজিংয়ে (স্বল্প সময়ের জন্য ভাড়া) আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থাটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেস্টনের উড়োজাহাজ দুটি আনলে অতিরিক্ত খরচ পড়তে পারে ২০০ কোটি টাকা। অন্য যেকোনো দেশ থেকে উড়োজাহাজ লিজে আনলে খরচ আরও কম পড়ত।

 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, এপ্রিলের ৩০ তারিখ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের ২৭৬তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২৬৬ আসনের ওই দুটি উড়োজাহাজ ওয়েট লিজিংয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। বোর্ড সভায় বিমানের চেয়ারম্যান-এমডি, বিমানের করপোরেট প্ল্যানিং ও ট্রেনিং বিভাগের আট কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন না বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচজন।

হেস্টনের উড়োজাহাজ দুটি আনলে অতিরিক্ত খরচ পড়তে পারে ২০০ কোটি টাকা। অন্য যেকোনো দেশ থেকে উড়োজাহাজ লিজে আনলে খরচ আরও কম পড়ত
পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে জানান, বিমানের করপোরেট প্ল্যানিং ও ট্রেনিং বিভাগ থেকে গত মাসে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাবে লিজের সঙ্গে সেই এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানের ক্রু, ইঞ্জিনিয়ার ও ইন্স্যুরেন্স নেওয়ার কথা ছিল। তবে বিমানের পক্ষ থেকে সেটি আগেই নাকচ করা হয়। নাকচের কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘ল্যাক অব এ ফেইথফুল স্টাডি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস’ (পর্যাপ্ত গবেষণা না থাকা)। তবে একই প্রস্তাবে যখন হেস্টন এয়ারলাইন্সের কথা উল্লেখ করা হয় বোর্ড তখন সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। শিগগিরই হেস্টনের সঙ্গে চুক্তি করবে বিমান।

ওই সদস্য আরও জানান, বোর্ড সভায় তিন সদস্য এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিলেন। পাঁচজন ছিলেন পক্ষে। বিপক্ষে থাকা তিনজনের দুজন সভায় বলেন, বিমানের বহরে বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। সেগুলো দিয়েই হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব।

আমি ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম না। সৌদি আরবে ছিলাম, এখনও আছি। সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমার কোনো কিছু জানা নেই
এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান, চেয়ারম্যান, বেবিচক
পর্ষদের অন্যতম পরিচালক ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম না। সৌদি আরবে ছিলাম, এখনও আছি। সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমার কোনো কিছু জানা নেই।’

বিমান সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশের কাছে হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য মোট ১১টি এয়ারলাইন্স উড়োজাহাজ লিজ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ফ্রান্সভিত্তিক এয়ারলাইন্স লিজ দেওয়া-নেওয়ার ব্রোকার এভিকো ও এয়ার এশিয়া উড়োজাহাজ ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে সেসব প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বিমান। অথচ ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এভিকোর দেওয়া উড়োজাহাজ এবং ২০১৭ সালে এয়ার এশিয়ার উড়োজাহাজ লিজ নিয়েছিল বিমান।

বর্তমানে বিমানের অনেক বড় বহর রয়েছে। তাদের বোয়িং-৭৭৭ মডেলের ভালো উড়োজাহাজ আছে। এগুলো হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য যথেষ্ট। পৃথক উড়োজাহাজ আনার দরকার আছে বলে মনে করি না। এত টাকা দিয়ে উড়োজাহাজ এনে বিমান কতটা মুনাফা করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম
সূত্র আরও জানায়, হেস্টন এয়ারলাইন্স বিমানকে ‘ব্লক আওয়ার’ সুবিধার মাধ্যমে উড়োজাহাজ ভাড়া দেবে। ব্লক আওয়ার বলতে বোঝায় উড়োজাহাজটি ব্যবহার করে বিমান যত ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা করবে, তত ঘণ্টার টাকা পরিশোধ করবে। এক্ষেত্রে হেস্টন এয়ারলাইন্স প্রতি ঘণ্টায় বিমানের কাছ থেকে সাত হাজার ডলার নেবে। সভায় পর্ষদ সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিলেন। তবে ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া সাত হাজার ডলারের অঙ্ক ছাড়া চুক্তির বিস্তারিত তথ্য বোর্ড সদস্যদের কাছে তুলে ধরা হয়নি।

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বর্তমানে বিমানের অনেক বড় বহর রয়েছে। তাদের বোয়িং-৭৭৭ মডেলের ভালো উড়োজাহাজ আছে। এগুলো হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য যথেষ্ট। পৃথক উড়োজাহাজ আনার দরকার আছে বলে মনে করি না। এত টাকা দিয়ে উড়োজাহাজ এনে বিমান কতটা মুনাফা করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এয়ারবাস এ-৩৩০ এস মডেলের উড়োজাহাজ বিমান আগে কখনও ব্যবহার করেনি। যদিও এটা ওয়েট লিজে আনা হবে, তবুও ঢাকা এয়ারপোর্ট এ এয়ারবাসের কতটুকু টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিতে পারবে, সে প্রশ্নও থেকে যায়।

হজে এয়ারক্রাফট লিজ নেব কি নেব না, এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পরিবর্তনের সুযোগ আছে
এয়ার কমোডোর মো. মাহবুব জাহান খান, পরিচালক, বিমান ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পর্ষদের এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমান ২০১৮ ও ২০১৯ সালে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হজ ফ্লাইট পরিচালনা করে। ওই দুই বছর বিমানের প্রায় ২০০ কোটি টাকা মুনাফা হয়। দুবারই ৫০ হাজারের বেশি যাত্রী বহন করে বিমান। এবার আনুমানিক ২৭ থেকে ৩১ হাজারের মতো হজযাত্রী পরিবহন করবে। এতে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার মতো মুনাফার পরিকল্পনা করছেন তারা। তবে ভাড়া করা বিমানে আদৌ এ অঙ্কের মুনাফা করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

হজযাত্রী বহনে হেস্টন এয়ারলাইন্সের দুটি উড়োজাহাজ আনার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে পর্ষদের অপর সদস্য ব্যারিস্টার তানজিবুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি যুক্তরাজ্যে থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, এ বিষয়ে সাড়া দেননি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার।

পর্ষদের কাছে হেস্টনের নাম প্রস্তাবকারী বিমানের করপোরেট প্ল্যানিং ও ট্রেনিং বিভাগের পরিচালক এয়ার কমোডোর মো. মাহবুব জাহান খান বলেন, ‘হজে এয়ারক্রাফট লিজ নেব কি নেব না, এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পরিবর্তনের সুযোগ আছে।’

হজে যাত্রী পাঠাতে বহরে থাকা বড় উড়োজাহাজগুলো ব্যবহার করতে হবে। এগুলো ব্যবহার করলে ঢাকা থেকে আবুধাবি, মাস্কাট, দোহা, কুয়েত ও কাতারের স্বাভাবিক ফ্লাইট অপারেশন ব্যাহত হবে। ওই সব রুটে ফ্লাইট সংখ্যা কমাতে হবে অথবা ছোট উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। ফ্লাইট অপারেশন আগের মতো সচল রাখতেই আমরা লিজে উড়োজাহাজ আনার প্রস্তাব করেছি
লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
যে কারণে লিজে উড়োজাহাজ আনতে চায় বিমান

বিমানের উড়োজাহাজ লিজ আনার বিষয়ে পর্ষদের সদস্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. আবু সালেহ্‌ মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকা পোস্ট। তিনি বলেন, ‘একটি মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব।’ পরবর্তী সময়ে কথা হলে তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করেননি।

তবে বিমানের লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হজে যাত্রী পাঠাতে বহরে থাকা বড় উড়োজাহাজগুলো ব্যবহার করতে হবে। এগুলো ব্যবহার করলে ঢাকা থেকে আবুধাবি, মাস্কাট, দোহা, কুয়েত ও কাতারের স্বাভাবিক ফ্লাইট অপারেশন ব্যাহত হবে। ওই সব রুটে ফ্লাইট সংখ্যা কমাতে হবে অথবা ছোট উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। ফ্লাইট অপারেশন আগের মতো সচল রাখতেই আমরা লিজে উড়োজাহাজ আনার প্রস্তাব করেছি।’

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির কারণে হজ পালনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে সৌদি আরব। দুই বছর পর এবার ৫৭ হাজার ৮৫৬ বাংলাদেশিকে হজ পালনের অনুমতি দিয়েছে দেশটি। হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্বে থাকবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স। হজে যাওয়া-আসার বিমানভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *