Main Menu

ধানের মাঠে ‘ম্লান’ কৃষকের ঈদ আনন্দ

নিউজ ডেস্ক:
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর আজ পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। তবুও কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে নেই আনন্দ। নতুন জামা কাপড়েও নেই তাদের কোনো আগ্রহ। হবিগঞ্জে এবার কৃষকের ঈদ আনন্দ ধানের মাঠে বিলীন হয়ে গেছে। আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা, নারী, পুরুষ সবাই ব্যস্ত বোরো ধান গোলায় তুলতে। ঝড়-বৃষ্টি আসতে পারে এমন আশঙ্কায় তারা ধান কাটা, মাড়াই দেওয়া, সিদ্ধ আর শুকানোর কাজে কোমর বেঁধে নেমেছেন। বড়দের সঙ্গে সঙ্গ দিচ্ছেন শিশু, কিশোর, কিশোরীরাও।

কৃষক মো. আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের আবার ঈদ! যদি ঠিকমতো ধান তুলতে পারি তাহলেই শুকরিয়া। ঈদ করার মতো পরিবেশ এখন নেই। ধানের মাঠেই ঈদ করতে হবে। যদি ঈদ করতে যাই আর ঝড়-বৃষ্টি আসে তহলেতো আমাদের সবই শেষ হয়ে গেলো।

সদর উপজেলার ভোমাপুর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, গরিবের কিছুই নেই। বড় লোকেরাই সব খেয়ে বড় হয়। আগে থেকেই আমাদের বিক্রি করে তারা খাচ্ছে। এখনও বিক্রি করেই চলছে।

একই গ্রামের কৃষক মো. ফারুক মিয়া বলেন, এ বছর ধান কিছু রোগ শোকে নষ্ট হয়েছে। তবুও যা হয়েছে ফলন ভালোই হয়েছে। তাতেই আমরা সন্তুষ্ট। এগুলো ঘরে তুলতে পারলেই হয়।

কৃষক আব্দুল বলেন, আমাদের আবার কিশের ঈদ। আমাদের ঈদ ধানের মাঠেই। ধান ঘরে তুলতে পারলেই ঈদ হলো। আমাদের ঈদ করার মতো কিছুই নেই। ঈদের দিকে তাকিয়ে আমাদের হবে না। তবে শ্রমিকের অভাবের কারণে ধান কাটতে পারছি না।

কৃষাণী মোছা. জুলেখা বেগম বলেন, ধান ভালো হয়েছে। এ ধান যদি ঘরে এনে তুলে রাখতে পারি তাহলেতো খেয়ে চলতে পারবো। ঈদ আমাদের কাছে বড় নয়। আরোজা খাতুন বলেন, আমাদেরতো ঈদ করার সময় নেই। আমরা এখন ধান তুলাই বড়।

মোছা. নাজমা বেগম বলেন, আমাদের আবার ঈদ কি? গরিবেরতো ঈদ নেই। আমরা এখন ধান তুলব না ঈদ করবো। কৃষক মো. সেলিম মিয়া বলেন, ঈদ বড় নয়। ধান হলো আমাদের জীবন। ধান যদি আমরা ঠিকমতো তুলতে পারি তবে পরিবার নিয়ে চলতে পারবো। শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।

লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের কৃষক মো. আক্তার মিয়া বলেন, ঈদ কি করবো। আমরাতো গরিব মানুষ। অনেক কষ্ট করে আমাদের ধান গোলায় তুলতে হচ্ছে। ঈদ করার মতো অবস্থা আমাদের নেই। এখন ধান তুলাই হচ্ছে আমাদের ঈদ।

জালালাবাদ গ্রামের জামাল মিয়া বলেন, ফসল কিছু ভালোই হয়েছে। দিনও ভালো পেয়েছিলাম। কিন্তু শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিক সংকটের কারণে ভাই, সন্তানদের নিয়ে নিজেরাই ধান কাটছি। ঝড়ের আগে যদি ধান তুলতে পারি তাহলেই হলো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) নয়ন মনি সূত্রধর জানান, জেলায় হাওরাঞ্চলে এরই মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। নন হাওরে হয়েছে ৩০ শতাংশ। রমজান ও ঈদের কারণে কিছুটা ঢিল হয়েছে।

তিনি বলেন, জেলায় বানের পানিতে খুব বেশি জমির ধান নষ্ট হয়নি। শুধু লাখাই উপজেলার হাওরেই কিছু নষ্ট হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৯০ হেক্টর। এরপরও ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে আবাদ হয় ৪৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর। নন হাওরে আবাদ হয় ৭৫ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমি। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ লাখ মেট্রিক টন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *