Main Menu

শ্বশুরবাড়ি থেকে ইফতার নিলে যে গুনাহ হয়

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা, অতিথি লেখক:
সমাজের ধনী-গরিব ও শিক্ষিত-অশিক্ষিত— সব মহলেই নিরব ঘাতক যৌতুকের চর্চা রয়েছে। বিভিন্ন মৌসুমি খোলসে যৌতুকের দানবীয় উপস্থিতি বহু মানুষকে পিষ্ট করে চলেছে। বিয়ের দিন যে যৌতুক বরপক্ষ উশুল করে, আমাদের সমাজ সেটাকে হয়ত খাটো চোখে দেখে।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে বিরামহীন যৌতুকের ধারাবাহিকতা শুরু হয়, তাকে কিন্তু সমাজ বিশাল সম্মানের বিষয়ই মনে করে থাকে।

বিয়ের দিনের যৌতুক তো শুধু ভূমিকামাত্র। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন মৌসুমি ছদ্মনামে যৌতুক আদায়ের মহোৎসব। যেমন, রমজানে ইফতারি পাঠানো, ঈদুল ফিতরে সেমাই-চিনি, ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু, ফলের মৌসুমে মৌসুমি ফল ইত্যাদি। এর ধারাবাহিকতা যেন মৌসুমের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন নামে সারা বছরই লেগে থাকে, যা আদায় করতে গিয়ে কনেপক্ষ হয়ে পড়ে দিশাহারা। কারো কারো ক্ষেত্রে শরণাপন্ন হতে হয় সুদি মহাজনের কাছে কিংবা কখনো হারিয়ে ফেলতে হয় নিজেদের শেষ সম্বলটুকু। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও টানাপড়েনের এই কঠিন সময়েও সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়দের চাপে পড়ে দিতে হয় ইফতারি, ঈদ উপহার, মৌসুমি ফলসহ নানা রঙের যৌতুক, যা অনেকটা অন্যায়ভাবে উপহার আদায়ের নামান্তর।

অথচ অর্থনৈতিক লেনদেনের মৌলিক বিধান সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কোরো না এবং এই উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে মামলা কোরো না যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনেশুনে গ্রাস করার গুনাহে লিপ্ত হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না।’ (বায়হাকি, হাদিস : ১৬৭৫৬)

যৌতুকের প্রচলনে আমরা নিজেরাই দায়ী। কার শ্বশুরবাড়ি থেকে কী পরিমাণ যৌতুক এলো এ নিয়ে আমাদের সমাজে খুব বেশি অহংকার করা হয়। ফলে শ্বশুরালয়ের লোকদের মধ্যে এমন চিন্তা কাজ করে যে সবার বাড়িতে উপহার এলো, আমার বাড়িতে এলো না, আমি গরিবের সঙ্গে আত্মীয়তা করলাম? এমন হীন মানসিকতাই আমাদের সবাইকে এই নোংরা ‘ভিক্ষা’ নিতে বাধ্য করে। অথচ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওপরের (দাতার) হাত নিচের (গ্রহীতার) হাত থেকে শ্রেষ্ঠ।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৪১)

আবার অনেক কনের বাবাও মেয়ের বাড়িতে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিভিন্ন অহেতুক বাড়তি জিনিসপত্র দিয়ে সমাজের অন্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। মেয়েকে সন্তুষ্টচিত্তে কিছু দিতে চাইলে এমনভাবে দেওয়া উচিত, যাতে অন্যরা এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়। কারণ বেশির ভাগ মানুষই লোকলজ্জার ভয়ে পড়ে নিজের সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও এই নোংরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। মহান আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন। আমিন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *