রোজা রেখে নাক-কান ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করা যাবে কি?

ধর্ম ডেস্ক:
বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে চোখ, কান ও নাকে ড্রপ দিতে বলা হয়ে থাকে। এখন জানার বিষয় হলো- কেউ রোজা অবস্থায় কোনো ধরনের ড্রপ বা লিকুইড (তরল ওষুধ) ব্যবহার করলে রোজা হবে কি?
এখানে পাঠকদের জানার সুবিধার্থে রোজা থাকা অবস্থায় চোখ, কান ও নাকে ড্রপ ব্যবহারের বিধান নিয়ে আলোচনা করা হলো-
চোখে ড্রপ ব্যবহার
চোখে ড্রপ বা তরল ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে চোখ থেকে সরাসরি পাকস্থলীতে পৌঁছার কোনো পথ নেই। তবে চোখ থেকে নাক হয়ে গলায় কোনো কিছু পৌঁছে যেতে পারে, এর কিছুটা আশঙ্কা রয়েছে।
কিন্তু চোখের ড্রপ দেওয়ার পরে যদি আপনি মুখে তার স্বাদ অনুভব করেন অথবা চোখে যদি সুরমা ব্যবহার করেন। এরপর যদি মুখের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়, সুরমার রং এসে যায়; তখন কিন্তু রোজা ভেঙে যাবে। কিন্তু সাধারণত এমন হয় না; আর যদি এমন না হয়; তখন চোখে ড্রপ দিলে— সেটা মুখে আসে না। এই কারণে চোখে ড্রপ দিলে রোজার অসুবিধা হবে না।
তাই রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। যদিও এটি গলায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে হাদিসে সরাসরি বিষয়টি থাকার কারণে ফকীহগণ এটিকে জায়িজ বলেছেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি জিদ্দাহর সিদ্ধান্তও অনুরূপ। (মাজাল্লাতু মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী : সংখ্যা ১০)
চোখের ড্রপ ব্যবহারের বিষয়টি ফিকহের কিতাবে বর্ণিত চোখে সুরমা দেওয়ার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) রোজা অবস্থায় চোখে সুরমা ব্যবহার করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৮৭)
রোজা রেখে নাকে ড্রপ দেওয়া
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, নাকে কোনো ধরনের ড্রপ বা ওষুধ ব্যবহার করলে এটি সরাসরি পাকস্থলীতে পৌঁছা সম্ভব। এ কারণেই মুখে খাবার দেওয়া সম্ভব না হলে নাকে রাইস টিউব ব্যবহার করা হয়। যার মাধ্যমে রোগীকে খাবার খাওয়ানো হয়। চার মাযহাবের ইমামগণ এ বিষয়ে একমত যে, নাকে কোনো কিছু ব্যবহার করা হলে তাতে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রোজা অবস্থায় নাকে ড্রপ বা তেল ব্যবহার করা যাবে না।
আল্লাহর রাসুল (সা.) হজরত লাকিত ইবনে সাবুরাহকে (রা.) বলেছেন, ‘তুমি অজু পরিপূর্ণ কর তোমার আঙুলগুলো খিলাল কর এবং নাকে ভালো করে পানি দাও। তবে হ্যাঁ, রোজাদার হলে নাকে পানি দিও না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৭৮)
রোজা রেখে কানে ড্রপ দেওয়া
কানের ড্রপ বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে কানের ড্রপ ব্যবহার করা হয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতানুযায়ী কানে কোনো কিছু ব্যবহার করলে সেটি সরাসরি সাধারণত গলায় পৌঁছে না। পূর্ববর্তী ফকিহদের অভিমত ছিল কানে কোনো কিছু ব্যবহার করলে তার মাধ্যমে রোজা ভেঙে যাবে। এ বিষয়ে চার মাযহাবই একমত। ইমাম কাসানি (রহ.) বলেছেন ‘যদি কানের মাঝে তেল বা ভিন্ন কিছু ব্যবহার করে তারপর তা পেটে বা মাথায় পৌঁছে যায় তার মাধ্যমে রোজা ভেঙে যাবে।’ (বাদায়িউস সানায়ি : ২/৯৩)
তাদের এই ধারণার ভিত্তি ছিল যে কান ও গলার মাঝে সরাসরি কোনো সংযোগ আছে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে কান ও গলার মাঝে এমন সরাসরি কোনো সংযোগ নেই। এ বিষয়ে মুফতি রফি উসমানী (হাফিজাহুল্লাহ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ, ‘মুফতিরাতুস সাওম ফি মাজালিত তাদাওয়ী’-তে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অভিমত সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। তাই এ কথা বলা যায় যে রোজা অবস্থায় কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। (মুফতিরাতুস সাওম ফি মাজালিত তাদাওয়ী)
তথ্যসূত্র: তিরমিজি, হাদিস : ৭৭৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৮৭; মাজাল্লাতু মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী : সংখ্যা ১০; বাদায়িউস সানায়ি : ২/৯৩; আল-উম, ইমাম শাফেয়ি : ২/১১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৩; রদ্দুল মুহতার : ২/৩৯৫)
Related News

মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More

যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More