Main Menu

পবিত্র শবে বারাআতে যে আমল করবেন

নিউজ ডেস্ক:
‘লাইলাতুম মিন নিসফি শা’বান’ বা আরবি বছরের শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ‘সৌভাগ্য বা মুক্তির রজনী’ হিসেবে পরিচিত। আজ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে সেই রাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পুণ্যময় রাতটি মহান আল্লাহর রহমত কামনা ও নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্যদিয়ে পবিত্র এ রাত পালন করবেন।

তবে মহিমান্বিত এ রাত নিয়ে বর্তমানে চলছে তুমুল আলোচনা। নতুন করে একটি গোষ্ঠী বলছে- এ রাতের আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। নেই কোনো ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ। আর হক্কপন্থী আলেমরা বলছেন- হাদিস দ্বারা এ রাতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য প্রমাণিত। তাই নফল ইবাদত-বন্দেগির করাটাই বাঞ্চনীয়। তবে ইবাদতির নামে অতিরঞ্জিত কোনো কাজ করা যাবে না।

আহলে হাদিস নামধারী নামের হাদিস অস্বিকারকারী কতিপয় ব্যক্তি বর্তমানে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি দাম্ভিকতাপূর্ণ আচরণ করছেন। বলছেন লাগামহীন কথা। নবি সা. থেকে প্রমাণিত একটি নফল আমলকে অস্বিকার করে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করছে তারা। তাই সিলেটভিউ পাঠকদের জন্য এ বিষয়ে কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতে কিছু কথা তুলে ধরা হলো।

শবে বারাআত কী?
“শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বরাআত এটি আরবী শব্দ। মূলত হল-براءت যার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শবে বারাআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত (برات) মানে হল বিয়ের রাত। প্রকৃত শব্দ হলো- শবে বারাআত( شب براءت)। শবে বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”(ليلة النصف من شعبان) বা শাবানের অর্ধ মাসের রাত।

কেউ কেউ “শবে বরাআত” নামে হাদিসে শব্দ না থাকায় এ রাতকে অস্বিকার করার মত খোড়া যুক্তি দিয়ে থাকেন। তাদেরকে উদ্দেশে আলেমরা বলেন- আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া আবশ্যক বলি কুরআন হাদিসে বর্ণিত নির্দেশের কারণে। কিন্তু কুরআন হাদিসের কোথাও কি নামায শব্দ আছে? তাওহিদ কে আমরা ঈমানের শর্ত বলি। কিন্তু কুরআন হাদিসের কোথাও তাওহিদ শব্দ নেই। তাই বলে কি তাওহীদ কুরআন হাদীস দিয়ে প্রমাণিত নয়? আমরা যাকে নামায বলি সেই অর্থবোধক কুরআন হাদিসের উদ্ধৃত শব্দ “সালাত”ই হলো নামায। আমরা যাকে তাওহিদ বলি কুরআন হাদিসের একত্ববাদ প্রকাশক সকল শব্দই হল এ তওহীদ। তেমনি আমরা যাকে “শবে বারাআত” বলি তথা শাবানের পনের তারিখের রাত বলে থাকি এই অর্থবোধক শব্দ হাদিসে পাওয়া গেলে তা-ই হবে শবে বারাআত। আর এই অর্থবোধক হাদিসে বর্ণিত শব্দ হল “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”। সুতরাং তাই হল শবে বারাআত।

হাদিসে শবে বারাআত :
কুরআনে শবে বারাআতের কোনো উল্লেখ নাই। কুরআনে কেবল “লাইলাতুল কদর” তথা “শবে কদর” এর কথা উল্লেখ আছে। পবিত্র কুরআনের পঁচিশ নাম্বার পাড়ার সূরায়ে দুখানের ২ ও ৩ নং আয়াতে বর্ণিত মুবারক রজনী দ্বারা লাইলাতুল কদর তথা শবে কদর উদ্দেশ্য। শবে বারাআত নয়। এটাই বিশুদ্ধ বলেছেন গ্রহণযোগ্য মুফাসসিরিনে কেরাম। যার পক্ষে যুক্তিও শক্তিশালী। বিস্তারিত জানতে দেখুন-
১ আদ দুররুল মানসুর-৭/৪০১-৪০৭
২ তাফসীরে কাশশাফ-৪/২৭২
৩ তাফসীরে ইবনে কাসীর-৭/২৪৬
৪ তাফসীরে বাগাভী-৭/২২৭-২২৮

বিভিন্ন হাদিসে শবে বারাআতের বর্ণনা এসেছে। যেমন-

عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )

হযরত আলী বিন আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন-যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। {সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২}

عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب

অনুবাদ-হযরত আয়শা রাঃ বলেন-এক রাতে রাসূল সাঃ কে না পেয়ে খুজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?] হযরত আয়শা রাঃ বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সাঃ তখন বললেন-যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯}

যেহেতু গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা এ রাতের ফযীলতকে অস্বিকার করে থাকেন। তাই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং অন্ধভাবে মান্যবর ব্যক্তিত্ব কথিত আহলে হাদিসদের ইমাম শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহঃ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আস সিলসিলাতুস সাহিহাহ আল মুজাল্লাদাতুল কামিলাহ” গ্রন্থে ৩ নং খন্ডে ১১৪৪ নং অধ্যায়ে ২১৮ নাম্বার পৃষ্ঠায় শবে বারাআত সম্পর্কে হাদিস এনে যে দীর্ঘ আলোচনা করে যে মত ব্যক্ত করেছেন তা তোলে ধরা হল-

عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن )

অনুবাদ-হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে]আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪}

আলবানী তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন। “এই হাদিসটি সহীহ” এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন # মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ # আবু সা’লাবা রাঃ # আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ # আবু মুসা আশয়ারী রাঃ # আবু হুরায়রা রাঃ # আবু বকর সিদ্দীক রাঃ # আউফ বিন মালিক রাঃ # আয়েশা রাঃ প্রমুখ সাহাবাগণ।
উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-

و جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب و الصحة تثبت بأقل منها
عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث ، فما نقله
الشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في ” إصلاح المساجد ” ( ص ১০৭ ) عن أهل التعديل
و التجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح ، فليس مما ينبغي
الاعتماد عليه ، و لئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل
التسرع و عدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك . و الله تعالى هو الموفق

অর্থাৎ “সারকথা হল এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়েখ কাসেমী থেকে তার প্রণিত “ইসলাহুল মাসাজিদ” গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তা’দীল ইমামদের থেকে যে, “শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদিস নেই মর্মে” সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া(ঘারতেড়া) স্বভাবের, আর তার ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই এরকমভাবে যেমন আমি করলাম”।
শায়েখ আলবানী রহঃ এর বিশ্লেষণ থেকে একথা নির্ধিদ্ধায় আমরা বলতে পারি হাদিস দ্বারা শবে বারাআত প্রমাণিত।

একটি প্রশ্ন ও জবাব :
নামধারী আহলে হাদিস গোষ্ঠী বলে- এ রাত ফযীলতপূর্ণ একথা ঠিক আছে। কিন্তু এ রাতে আমল করতে হবে একথাতো কোথাও নেই। তাই আমল করা জায়েজ হবে না। বেদআত হবে।

জবাব : বড়ই আশ্চর্য প্রকার বলে থাকেন তারা। যে সময় ফযীলতপূর্ণ, সে সময় ইবাদত করা নিষিদ্ধ। তাহলে সে সময় ফযীলতপূর্ণ হয়ে লাভ কি? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিভিন্ন সময়ের ফযীলতের কথা কেন বলেছেন? সে সময় নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকার জন্য? না ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করার জন্য?
শবে কদরের ফযীলত কেন বলা হয়েছে? নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর জন্য? তাহলেতো একথাও বলা যায় যে, শবে কদরের ফযীলত আছে। কিন্তু সে রাতে ইবাদত করা বিদআত। কারণ কোন নির্ধারিত ইবাদতের কথা এ রাতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়নি। এমন কথা বলাটি কি বোকামী হবে না?
ফযীলত বলা মানেই হল এ সময় ঘুমিয়ে না থেকে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার তাকীদ দিচ্ছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। ঘুমিয়ে থাকলে ফযীলত অর্জিত হবে কিভাবে?

এ রাতে করণীয় :
এ মহামান্বিত রাতে করার মত নির্দিষ্ট কোন আমল নেই। সবাই কোথাও একত্র হয়ে সম্মিলিত কোন আমলও নেই। উল্লেখিত হাদীসের আলোকে এ রাতের আমল হল-
১-ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা।
২-আড়ম্বরপূর্ণভাবে নয় স্বাভাবিকভাবে হলে কবর যিয়ারত করা।
৩-অনির্ধারিতভাবে নফল ইবাদত করা।
৪-পরদিন রোযা রাখা।

এ রাতে বর্জনীয় :
১ হালুয়া রুটির মত আনন্দ উল্লাসের আয়োজন। আল্লাহর কাছ থেকে মাফ পেতে হলে তার ইবাদত করতে হবে, খাওয়া দাওয়ার মধ্য দিয়ে ফুর্তি করার মাধ্যমে নয়
২ আতশবাজি করা, রং ছিটানো।
৩ সম্মিলিত কোন আমলকে এই রাতে আবশ্যকীয় মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করে দাও, যেন তা পালন করতে পারি, আর মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে উপস্থাপিত করে দাও, যেন এ থেকে বিরত থাকতে পারি।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *