Main Menu

তাহিরপুরে পর্যটক বাড়লেও কমেনি দুর্ভোগ

নিউজ ডেস্ক:

তাহিরপুর: গত এক দশকের ব্যবধানে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, শিমুল বাগান, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি), বড়গোপ (বারেক) টিলা ঘিরে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেড়েছে বহুগুণ। পর্যটকদের এমন আনাগোনা বর্ষা-শুষ্ক উভয় মৌসুমেই লেগে থাকে এ উপজেলায়।

কিন্তু পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও পর্যটকদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিরসনে নেই তেমন কোন কার্যকরী উদ্যোগ। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর ভিড় থাকলেও নেই ট্যুরিস্ট পুলিশও। নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে রয়েছে মানসম্মত রেস্টুরেন্ট ও হোটেল এর অভাব। তাছাড়া স্পটগুলোতে পথনির্দেশক সাইনবোর্ড না থাকায় পথ ভুল করে বিড়ম্বনার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

শুক্রবার শিমুল বাগান, বড়গোপ টিলা ও শহীদ সিরাজ লেক ঘিরে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া এ দিন ছিল ফাল্গুনের প্রথম শুক্রবার একই সাথে ছুটির দিন হওয়ায় দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুন বেশি। ওইদিন বাগান এলাকায় অন্তত ত্রিশ হাজার লোকের সমাগম ঘটেছিল। সরেজমিনে মিয়ারচর খেয়াঘাট থেকে বাদাঘাট বাজার, শিমুল বাগান, বড়গোপ টিলা ও শহিদ সিরাজ লেক ঘুরে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তির দৃশ্য দেখা গেছে।

দৃশ্যপট এক.
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা। যাদুকাটা নদীর মিয়ারচর খেয়াঘাট এলাকায় অপেক্ষারত পর্যটকদের দীর্ঘ সারি। গন্তব্য তাহিরপুর উপজেলার শিমুল বাগান, বড়গোপ টিলা ও শহীদ সিরাজ লেক। খেয়া পার হয়ে ডানে নাকি বাম দিকে যাব? স্থানীয়দের কাছে আগত পর্যটকদের এমন প্রশ্ন ছিল মুখে মুখে। আগতরা বলছেন, সুনামগঞ্জ আব্দুজ জহুর সেতু থেকে শিমুল বাগান আসতে কোন পথ নির্দেশক তাদের চোখে পড়েনি।

দৃশ্যপট দুই.
দুপুর ১২টা। মিয়ারচর খেয়া পার হয়ে একদল পর্যটক উপজেলার ব্যস্ততম এলাকা বাদাঘাট বাজারের ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল স্ট্যান্ডে (অস্থায়ী) পৌঁছে শিমুল বাগান ও শহীদ সিরাজ লেক ঘুরে দেখতে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করছিল। ভাড়া নির্ধারিত না থাকায় লম্বা সময় ধরে মোটরসাইকেল চালকদের সাথে চলে এমন দর কষাকষি।

দৃশ্যপট তিন.
বাদাঘাট বাজারে মানসম্মত একটি খাবারের হোটেলের খোঁজ করতে লাগলেন একদল পর্যটক। তা না পেয়ে স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে তারা দুয়েকটি হোটেলের নাম ও লোকেশন বলে দেন। সে অনুযায়ী খোঁজ করে ছোট একটি হোটেলের দেখা মিললো। দেখতে পেলেন হোটেলভর্তি লোকজন গিজগিজ করছে। যেখানে একসাথে ২০-৩০ জনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। পরে আধঘন্টার মত অপেক্ষা করে ওই পর্যটক দলের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।

দৃশ্যপট চার.
শিমুল বাগান যেতে উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের মানিগাঁও সড়কটিতে যানজটের কবলে পড়ে শতাধিক গাড়ি। এর মধ্যে ছিল প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজি, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। সড়কটি এতটাই সরু, যে যানজটে আটকে পড়া এসব যানবাহন আগে-পিছে কোথাও যেতে পারছিল না। পরে যানজট থেকে রেহাই পেতে সড়কের নিচের কৃষি জমির উপর দিয়েই অনেকের গাড়ি ছুটতে দেখা গেছে।

দৃশ্যপট পাঁচ.
বিকেল তিনটা। আগত পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত শিমুল বাগান ও তার আশপাশের এলাকা। বাগানের পাশেই যাদুকাটা নদী। নদীর তীর ধরে কয়েকজন পর্যটককে হাঁটতে দেখা যায়। পরে জানা গেল বাগানে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরের খোঁজ করছিলেন তারা। যেখানে গিয়ে পয়ঃনিষ্কাশনের কাজটা সেরে নেওয়া যাবে।

দৃশ্যপট ছয়.
বিকেল চারটা। গন্তব্য শিমুল বাগান থেকে শহীদ সিরাজ লেক। পথে চাঁনপুর এলাকার নয়াসড়ক নামক ব্রিজের সামনে আধা কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে বালির চর। এতে আটকা পড়ে অর্ধশতাধিক যানবাহন। এর অধিকাংশই ছিল মোটরসাইকেল, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ছিল প্রাইভেট কারও। পরে এসব যানবাহন দু-তিনজন মিলে বালির চরের উপর দিয়েই টেনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

দৃশ্যপট সাত.
শহীদ সিরাজ লেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের বড় একটা অংশ পরিবার-পরিজনকে সাথে নিয়ে এসেছিল। তাদের অনেকেই আবার দীর্ঘ যাত্রা শেষে একটু বিশ্রামের জন্য হাসফিস করছিল। তাছাড়া লেকের পাশে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও পয়ঃনিষ্কাশনের খোঁজ করে ব্যর্থ হতেও দেখা গেছে অনেককে।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, এ সময়টাতে দূরদূরান্ত থেকে অনেক বেশি পর্যটক তাহিরপুরে ঘুরতে আসেন। তারা যেন নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন সে জন্য পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় পথে পথে অনাকাঙ্খিত যানজটের কবলে পড়ছেন আগতরা। এসব সমস্যা নিরসনেও পুলিশ কাজ করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, দ্রুতই শহীদ সিরাজ লেক এলাকায় ওয়াসব্লক বাড়ানো হবে। তাছাড়া শিমুল বাগানের কর্তৃপক্ষকেও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বৃদ্ধি করার জন্য বলা হবে।

তিনি আরও বলেন, আগতদের নিরাপত্তার দিকটি আরও জোরদার করতে পর্যটন পুলিশের বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আর যাত্রীদের কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত ভাড়া না নেয় এ ব্যাপারে সমিতিগুলোকে বলে দেওয়া হবে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *