Main Menu

সিলেটে বাড়ছে অপরাধ, ২৮ দিনে ৩০ প্রাণহানি

দেবব্রত রায় দিপন, অতিথি প্রতিবেদক:
সিলেটে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমাগত বাড়ছে অপরাধ। পারিবারিক কলহ,দাম্পত্য কলহ,পূর্বশত্রুতার জের, সম্পর্কের অবক্ষয়, পরকীয়া, ব্যাবসায়িক ও ব্যক্তিস্বার্থের দ্বন্দ্ব,ছিনতাই, মামুলি বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি, এমনকি ঝগড়া-বিবাদ থামাতে গিয়েও একের পর এক ঘটছে হত্যাকা-। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে এসব কারণে সিলেট অঞ্চলে ৩০ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দাম্পত্য কলহ থেকে আত্মহত্যা ৪,তুচ্ছ ঘটনায় ৩, যৌতুকের বলি ২,নবজাতকসহ শিশু ৪, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা ২,পারিবারিক কলহ থেকে ৭,ব্যবসায়ীক কারণে ৪ ও মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে ৪ টি। দাম্পত্য কলহে মায়ের হাতে দেড় বছরের শিশু সন্তান খুনের ঘটনাও ঘটে সিলেট। অপরাধ জনিত প্রাণহানির ঘটনায় শীর্ষে সিলেটের অবস্থান। এ জেলায় ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ৮টি প্রাণহানির ঘটনায় ২য় অবস্থানে সুনামগঞ্জ। আর এমন প্রাণহাণির ঘটনা হবিগঞ্জে ৩ টি এবং মৌলভীবাজারেও ৩ টি ঘটে। এর ফলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ। এভাবে অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে পারিবারিক বন্ধনে ছন্দঃপতন ও প্রযুক্তির অপব্যবহারকে দায়ী করা হচ্ছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, যুগ যুগ ধরেই এমন অপরাধ ঘটে আসছে। এ থেকে উত্তরণের যুগসন্ধিক্ষণে আমরা অবস্থান করছি। সমাজের ভেতর পরিবার, প্রতিবেশী, এলাকাভিত্তিক সংস্কৃতির চর্চা ও বন্ধনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে পর্নোগ্রাফির ছোবল ও মাদকাসক্তির মতো বিষয়গুলো মিলে পুঁজিবাদী সমাজের প্রাথমিক অবস্থা বিরাজমান। এ অবস্থায় মানুষের লোভ-লালসা বেড়ে গেছে। উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স, পরকীয়ার মতো বিষয়গুলোও বেড়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে আগের সামাজিক অনুশাসনগুলো আর কাজ করছে না।

সিলেট
০২ ফেব্রুয়ারি সিলেট নগরীর মুন্সীপাড়ার একটি বাসা থেকে এক যুবতী নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের নাম সালমা বেগম (২৫)। তিনি এসএমপির (সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ) শাহপরাণ থানাধীন দলই পাড়ার রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে। ৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটে ডাস্টবিন থেকে এক নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে এসএমপির শাহপরান (র.) থানা পুলিশ। ওইদিন নগরীর কুশিঘাট পয়েন্ট সংলগ্ন ছড়ার পাশের ডাস্টবিন থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মোছা. মারজানা আক্তার চৌধুরী লিজা (২৮) সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার মাইজগ্রামের মৃত বজলুল হক চৌধুরীর মেয়ে। তিনি এয়ারপোর্ট থানার কলবাখানী আবাসিক এলাকার ৫৪ নং বাসায় থাকতেন। ৯ ফেব্রুয়ারি নগরীতে নিজের সন্তানকে হত্যা করলেন মা। এ ঘটনার পর মা নাজমিন জাহান (২৮) সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় আত্মসমর্পণ করলে তাকে আটক দেখায় পুলিশ। নিহত শিশু সাবিহা হোসেন কাতার প্রবাসী সাব্বির হোসেনের মেয়ে। ১৩ ফেব্রুয়ারি সিলেট সদর উপজেলায় এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের (২৫) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটের বিয়ানীবাজারে ৫৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার নয়া দুবাগ গ্রাম থেকে ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিষপানে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। গৃহবধূর নাম রোমানা আক্তার রিনি (৩০)। তিনি গোলাপগঞ্জের বাদে রনকেলি গ্রামের মো. আক্কাস আলীর মেয়ে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে পড়ে থাকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ। সেই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চেয়ে এ বিষয়ক একটি বিজ্ঞপ্তি বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে গণমাধ্যমে প্রেরণ করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোয়াইনঘাটে নাজিম উদ্দিন (৪৫) নামের এক ব্যবসায়ীর মরদেহ ডাউকি নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহত নাজিম উদ্দিন উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় খুন হয় এক সিএনজি অটোরিক্সা চালক। খুন হওয়া ব্যক্তির নাম শাহাবুদ্দিন আহমদ সাবুল (৪৫)। তিনি ওই এলাকার মৃত আব্দুল হামিদ আখন মিয়ার ছেলে। ১৮ ফেব্রুয়ারি জৈন্তায় সারী নদী থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিশুর নাম মো. সোহান আহমেদ (১০)। জৈন্তাপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সোহানের মরদেহ উদ্ধার করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোলাপগঞ্জে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এক যুবক নিহতের ঘটনা ঘটে। ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তারিফুর রহমান (২৫) নামে এক যুবক আহত হয়। পরে চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮ টার দিকে তিনি মারা যান। ২২ ফেব্রুয়ারি যৌতুকের কারণে কানাইঘাটে তিন সন্তানের এক জননীকে হত্যা করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় স্বামীসহ শাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নিহত জুলফা বেগম চৌধুরীর (২৯) ভাই আহমদ চৌধুরী বাদী হয়ে তার বোন জামাই ফতেহপুর গ্রামের মৃত মুহিবুর রহমানের ছেলে আবুল হাসান ফাহিম (৩৫) ও তার মা রাশিদা বেগম (৫৫) কে আসামী করে থানায় বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অভিযোগ দায়ের করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি জৈন্তাপুরে এক ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন সকাল ৮টায় উপজেলার নিজপাট পানিয়ারাহাটি এ.কে টাওয়ারের ৩য় তলা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহতের নাম মো. আনিসুর রহমান (৩৯)। তিনি কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার ভাতাকান্দি গ্রামের মোস্তফা কামাল ভূইয়ার ছেলে। তিনি পোল্ট্রি মোরগ ব্যবসা করতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ২৫ ফেব্রুয়ারি গোলাপগঞ্জে বাড়ির কক্ষ থেকে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত গৃহবধূর নাম শিউলী বেগম (২৫)। শিউলী বেগমের স্বামীর নাম ইকবাল হোসেন। তাদের ২ কন্যা সন্তান রয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর শেখঘাট এলাকা থেকে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। কিশোরের নাম মো. শরিফ (১৪)। শরিফ সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার মৌলাপাড়া গ্রামের মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে। তারা নগরীর শেখঘাট এলাকার শুভেচ্ছা-২৯৭ বাসার মালিক মবশ্বির আলীর কলোনিতে থাকতেন।

হবিগঞ্জ
১ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক গৃহবধূর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের নাম রাজনা বেগম (১৮)। নিহত গৃহবধূ উপজেলার পশ্চিম তিমির পুর গ্রামের মৃত আং রহিমের মেয়ে। প্রায় চার মাস আগে সদর ইউনিয়নের বড় আলী পুর গ্রামের জাকারিয়ার সাথে তাঁর বিয়ে হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহনন করেন এক যুবক।যুবকের নাম অন্তর দাস। নিহত অন্তর দাস ওই গ্রামের অঞ্জন দাসের ছেলে। ১৭ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর থেকে আছমা আক্তার নামের এক অন্তঃসত্বা নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত আছমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলার গৌকরন গ্রামের আলী মিয়ার মেয়ে। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী তাকে সাতছড়িতে এনে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যেতে পারে।

সুনামগঞ্জ
৬ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে এক যুবক। তিনি শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের ডুংরিয়া গ্রামের মৃত মনোরঞ্জন দাসের ছেলে বাসিন্দা বিকাশ দাস (৪০)। ৭ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। নিহত বৃদ্ধার নাম গুলেস্তা বেগম (৭০)। তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার রাজনপুর গ্রামের মৃত সিরাজুর রহমানের স্ত্রী। ১২ ফেব্রুয়ারি তাহিরপুরে যাদুকাটা নদী থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন দুপুরে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলী গ্রাম সংলগ্ন যাদুকাটা নদী থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ থেকে এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম জুবেল আহমদ (২১)। তিনি শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন বাঘেরকোনা (নয়াবাড়ী) গ্রামের আকদ্দুছ মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় গাড়ি চালক ছিলেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুরে একটি ফার্মেসীর ভিতর থেকে নারীর ছয় টুকরো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত নারীর নাম শাহনাজ পারভীন জোৎসা (৩৫)। তিনি উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী ছরুক মিয়ার স্ত্রী। ১৭ ফেব্রুয়ারি ছাতকে ডোবা থেকে এক যুবলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত যুবলীগ নেতার নাম মিজান খাঁ (২৫)। তিনি নোয়ারাই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দ্বায়িত্বে ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। নিহতের নাম উজির মিয়া (৩৫)। মারা যাওয়া উজির মিয়া উপজেলার শত্রুমর্দন গ্রামের বাসিন্দা। শান্তিগঞ্জ উপজেলা এলাকায় চুরি মামলার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উজির নামের একজনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে থানায় নির্যাতন করা হয়। পরে আহত অবস্থায় সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে উজির মিয়া সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান। ২৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুরে এক অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের নাম দিলদার মিয়া (৩৫)। তিনি কিশোরগঞ্জের রামদিয়া গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তবে, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সপরিবার উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর (ঈশানকোনা) গ্রামে বসবাস করে আসছেন।

মৌলভীবাজার
১৪ ফেব্রুয়ারি কুলাউড়ার বরমচাল রেলস্টেশনের পাশ থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে নন্দনগর-লামাপাড়া এলাকা থেকে ওই ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের নাম রনজিত দাস। তাঁর বাড়ি পাশের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রামে। ১৯ ফেব্রুয়ারি কুলাউড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে আত্মহত্যা করেন এক তরুণী। নিহতের নাম পম্পি রাণী দেব (২০)। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে সে মারা যায়। পম্পি উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের মৃত শশাঙ্ক দেবের মেয়ে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ফেঞ্চুগঞ্জে রেল লাইনের পাশ থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে মোমিনছড়া বাগান সংলগ্ন রেললাইন থেকে নয়ন দেবনাথ (১৮) নামের ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। সে কুমিল্লা জেলার দৌলতপুর গ্রামের দিলীপ চন্দ্র দেবনাথের ছেলে।

গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জান্নাত আরা খান পান্না বলেন, তুচ্ছ কারণে এসব অপরাধ থেকে উত্তরণ দ্রুত সময়ে ঘটবে না। দুটি জায়গা থেকে এগুলো নির্মূল করতে হবে। প্রথমত, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে পুরো বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। অন্যায়কারীর শাস্তি হলে তা দেখে অন্যরা অন্যায় কাজে নিরুৎসাহ হবে।

সিলেট জেলা বারের আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন বলেন, বর্তমানে হত্যা বা আত্মহত্যার মতো ঘটনা বেড়ে চলার পেছনে মূল কারণ কিছু মানুষ অতিলোভী হয়ে গেছে। করোনা মহামারির এই সময়েও মানুষ তার লোভ সংবরণ করতে পারছে না। পরকীয়া, ফেসবুকের অপব্যবহার, আধিপত্য সার্বিক পরিস্থিতিটাই অন্য রকম হয়ে গেছে। প্রাপ্তির প্রত্যাশাটা যখন বেড়ে যায়, আর সে অনুসারে প্রাপ্তি হয় না, তখনই একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে হতাশা জন্ম নেয়।

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান খান সোহাগ বলেন, এখন তুচ্ছ কারণে অনেকে হত্যা বা আত্মহত্যায় ঝুঁকছে। আর হত্যা বা আত্মহত্যা যেটিই হোক, প্রতিটি ঘটনার পেছনে প্ররোচনাকারী আছে। তাদের যথাযথভাবে শনাক্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এগুলো কমবে না। এ ছাড়া সার্বিকভাবে পারিবারিক বন্ধনটাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেটাতে জোর দিতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান বলেন, অনলাইনে বুঁদ হয়ে থাকলে এবং পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়লে সমাজে তাদের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। আর শুধু মোবাইল ফোন নিয়ে মেতে থাকলে এই জগেক বলা যায় মানুষ ধ্বংস করে দেওয়ার জগৎ। নিত্যনতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষের অবসর সময় যেন ভালো কাটে এবং শুধু অনলাইনে বুঁদ হয়ে না থাকে তা নজরে রাখতে হবে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও খেলাধুলা একদমই নেই। তা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক (নর্থ) আজবাহার আলী শেখ বলেন, পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা এর একটি বড় কারণ। দিন যতোই যাচ্ছে ততোই ভাঙ্গণ ধরছে পরিবারে। একান্নবর্তী পরিবার প্রথা বিলুপ, সামাজিক অনুশাসনের ঘাটতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারস্পরিক ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার জায়গা ব্যবচ্ছেদের কারণেই বাড়ছে অস্থিরতা। এই অবস্থার উত্তরণ একদিনেই সম্ভব নয়। প্রয়োজন নিজ নিজ উদ্যোগে কাজ করা, ধর্মীয় রীতিনীতি পালন এবং পারিবারিক শিষ্টাচারের প্রকাশ সর্বত্র বিস্তার করা।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *