Main Menu

আল্লাহ সব ভাষাই বোঝেন

মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট:
আল্লাহ সব ভাষাই বোঝেন। প্রত্যেক জাতির কাছে তাদের স্বীয় মাতৃভাষার মর্যাদা যেমন অপরিসীম; তেমনি আল্লাহ তাআলার কাছে কোনো ভাষাই ছোট নয়। তিনি সব ভাষা জানেন, বোঝেন। যে যেভাবেই তাকে ডাকে না কেন। তিনি বোঝেন, উত্তর দেন, তার সাথে কথা বলেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘আর আমরা প্রত্যেক রসূলকে তার জাতির ভাষাতেই ওহিসহ পাঠিয়েছি। যাতে সে স্পষ্টভাবে আমাদের কথা তাদের বুঝিয়ে দিতে পারে।’ (সুরা ইবরাহিম: আয়াত ৪)
সব জাতিকে হেদায়াতের জন্য যেমন আল্লাহপাকের পয়গম্বর এসেছেন; তেমনি সব জাতির স্ব-স্ব ভাষাতেই আল্লাহ তাআলার ওহি-ইলহাম নাজিল হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির স্বীয় মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে তাদের নিজস্ব ভাষায় আসমানি কিতাব অথবা কিতাববিহীন প্রত্যাদিষ্টকে ওহি দ্বারা পাঠিয়েছেন। একেক জাতির জন্য একেক ভাষা সৃষ্টি করা এটা আমাদের ওপর আল্লাহতাআলার বিশেষ কৃপা। আর না হয় মানুষ ভাষার মর্যাদা বুঝত না। মানুষের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার সাথে তার উন্নতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

আল্লাহপাক বলেন, ‘আর তার নিদর্শনাবলীর মাঝে রয়েছে আকাশসমূহের ও পৃথিবীর সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও রঙের বিভিন্নতাও। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা আর রূম: আয়াত ২২)।

মাতৃভাষা শিক্ষা ও বিকাশে ইসলামের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। আল্লাহ তাআলা নবী রাসুলদের কাছে যুগে যুগে যেসব আসমানি কিতাব প্রেরণ করেছেন, তা তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রেরণ করেছেন। যেমন হজরত দাউদ (আ.)-এর কাছে যাবূর কিতাব তার মাতৃভাষা ইউনানি বা (আরামাইক) ভাষায়, হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে তাওরাত ইবরানি বা হিব্রু ভাষায়। এটাও তার মাতৃভাষা। আর সবশেষে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মাতৃভাষা আরবি ভাষায় আল কোরআন নাজিল করা হয়। এসব আসমানি কিতাব যদি মাতৃভাষায় নাযিল না করতেন তবে এগুলো নাজিলের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতো।

ভাষা ও রঙের এই বিভিন্নতা সুপরিকল্পিত, যার পশ্চাতে পরিকল্পনাকারীর অস্তিত্ব বিদ্যমান। আকাশ-মালা ও বিশ্বজগত সেই পরিকল্পনাকারীর সৃষ্টি। বর্ণের ও ভাষার বিভিন্নতার ফলে বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতির আগমন-নির্গমন ঘটে চলেছে। কিন্তু তবুও এই বিভিন্নতার অন্তরালে স্থায়ীভাবে প্রবহমান রয়েছে একটি বিশাল একতা ও মানবতার ঐক্য। আর মানবতার এই ঐক্য যুক্তিগ্রাহ্যভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে যে সৃষ্টিকর্তাও একজনই। মানবজাতির সূচনালগ্নে ভাষা ছিল একটিই এবং তা ছিল ইলহামি ভাষা। এরপর মানুষ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার ফলে এলাকা পরিবর্তনের সাথে সাথে ভাষারও পরিবর্তন হতে থাকে। এভাবেই সূচনাতে মানুষের রংও ছিল একই রকম। এরপর গ্রীষ্ম, শীত এবং নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা অনুযায়ী তার রঙেরও পরিবর্তন হতে থাকে।

আমাদের ভাষা হচ্ছে বাংলা, কেউ যদি ভাবেন যে, বাংলায় আল্লাহপাকের কাছে চাইলে তিনি কি তা শুনবেন? এর উত্তরে বলা যায়, অবশ্যই আল্লাহপাক শুনবেন, কেননা তিনি বলেছেন সব ভাষাই তার সৃষ্ট এবং সব ভাষাতেই নবী-রসুল পাঠিয়েছেন।

আমরা আমাদের নামাজে আরবি ভাষায় নির্ধারিত দোয়া করার পর নিজ নিজ মাতৃভাষায় মন খুলে সেজদায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করতে পারি। কোনো ভাষাই আল্লাহপাকের কাছে মর্যাদার দিক থেকে কম নয়।

আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে নিজ ভাষার গুরুত্ব অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন, আমিন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *