Main Menu

দাফনের পর মৃতের জন্য সম্মিলিতভাবে দোয়া করা যাবে?

মুফতি মুহাম্মদ ইমদাদুল্লাহ, অতিথি লেখক:
আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর উপস্থিত লোকজন সুরা কেরাত পড়ে সম্মিলিতভাবে মৃতের জন্য দোয়া করার প্রচলন রয়েছে। কেউ কেউ এই রীতিকে বিদআত বলে আখ্যায়িত করে থাকে।

কিন্তু আসলেই কি এটা বিদআত? হাদিস ও আছারে কি এর কোনো প্রমাণ আছে? এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পাশে থেকে কিছু সময় পর্যন্ত তার জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করা মুস্তাহাব। এটি একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

হজরত উসমান ইবনে আফফান রা. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন- ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করতেন তখন তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং (সওয়াল-জওয়াবের সময়) অবিচল থাকার দোয়া করো। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩২১৩)

অন্য হাদিসে আছে। তাবেয়ী আবদুর রহমান ইবনে শামাসাহ আলমাহরী (রহ.) বলেন-‘আমর ইবনুল আস (রা.) যখন মুমূর্ষু অবস্থায় তখন আমরা উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, আমি মৃত্যুবরণ করলে কোনো বিলাপকারিনী এবং আগুন যেন আমার জানাজার সঙ্গে না যায়। আর তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে তখন আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে। এরপর একটি উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় আমার কবরের পাশে অপেক্ষা করবে। যেন তোমাদের মাধ্যমে আমার নিঃসঙ্গতা দূর হয় এবং আমার রবের ফেরেশতাদের জবাব দিতে পারি।’ (সহিহ মুসলিম ১/৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩২১৩)

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) বলেন-‘এতটুকু সময় মৃতের কবরের পাশে অবস্থান করার উদ্দেশ্য হলো, তার জন্য দোয়া, জিকির, তেলাওয়াত ও ইস্তিগফার ইত্যাদি করা। যেন এর মাধ্যমে মৃতের নিঃসঙ্গতা দূর হয় এবং তার জন্য ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া সহজ হয়।’ (মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/১২৭)

তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রহ.) বলেন- ‘আনাস (রা.) যখন কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতেন তখন কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সুতরাং আপনি তার প্রতি দয়া করুন এবং রহম করুন। হে আল্লাহ! তার কবরকে তার জন্য প্রশস্ত করে দিন এবং তাকে উত্তমরূপে কবুল করে নিন। হে আল্লাহ! সে যদি আপনার নেক বান্দা হয়ে থাকে তাহলে তার সওয়াব আরো বাড়িয়ে দিন আর যদি সে গুনাহগার হয়ে থাকে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিন।’

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৩৪; সুনানে বায়হাকী ৩/১৬২; মাজমাউয যওয়ায়েদ ৩/১৬২)

আর এ সময়ে দোয়ার জন্য হাত তোলার কথাও হাদিস শরীফে প্রমাণিত আছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ যুলবিজাদাইন রা.-এর দাফনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার দাফন থেকে অবসর হলেন তখন দুই হাত তুলে কেবলামুখী হয়ে তার জন্য দোয়া করেন যে, ইয়া আল্লাহ! আমি তার উপর সন্তুষ্ট, আপনিও তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।’

(মুসনাদে বাযযার, হাদিস: ১৭০৬; হিলয়াতুল আওলিয়া ১/১২২; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৪/৬৭৩; আসসীরাতুন নাবাবিয়্যাহ, ইবনে হিশাম ২/৫২৭; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮)

এসব হাদিসের আলোকে ফকীহরা দাফনের পর মৃতের জন্য দোয়া করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাই একে অবৈধ বা বিদআত বলা কিছুতেই ঠিক নয়। আর এক্ষেত্রে একাকী বা সম্মিলিত দুভাবেই দুআ করা যাবে। তবে দুআ করলে কবরকে সামনে রেখে দুআ করবে না; বরং কবর থেকে সরে গিয়ে কবরকে পেছনে বা পাশে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দুআ করবে।

(আলবিনায়াহ ৩/৩০৫; শরহুল মুনইয়া ৬০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬, ৫/৩৫০; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭; ফাতহুল মুলহিম ১/২৭৩; বাযলুল মাজহূদ ১৪/১৯০; ইলাউস সুনান ৮/৩৪২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৫০০) সৌজন্যে: যুগান্তর






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *