Main Menu

মৃত্যুঝুঁকি জেনেও থামছে না ইউরোপযাত্রা, কী ঘটে তারপর

নিউজ ডেস্ক:
প্রায় ছয় বছর আগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে লিবিয়া যান সিরাজগঞ্জের মানিক মিয়া। সেখানকার একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় বছর কাজ করেন তিনি। তবে পরিশ্রমের তুলনায় যথেষ্ট আয় না হওয়ায় অনেকটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এ অভিবাসী। পরে আরো অনেকের সঙ্গে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তিনি সক্ষম হন ইতালি পৌঁছতে। কিন্তু ধরা পড়ে যান সীমান্তে। ফলে কয়েক মাস কাটাতে হয় কারাগারে। শিগগিরই বৈধ হওয়ার আশা নিয়ে বর্তমানে একটি রেস্টুরেন্টে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন মানিক। যদিও ইতালি যাওয়ার পর থেকে পরিবারের কাছে কোনো অর্থ পাঠাতে পারেননি তিনি।

যোগাযোগ করা হলে মানিক মিয়া জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর বাজারে তাদের একটি দোকান ভাড়া নেয়া ছিল। সেখানে অন্যান্য জিনিসপত্রের পাশাপাশি সিলিন্ডারে করে এলপিজি বিক্রির ডিলারশিপও ছিল। কিন্তু ব্যবসা থেকে মুনাফা কম আসায় দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করেন তিনি। অভিবাসনের খরচ জোগাতে দোকানের পাশাপাশি গ্যাসের ডিলারশিপও ছেড়ে দিতে হয়। লিবিয়ায় থাকার সময় যে অর্থ বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন, সেটিও আর সঞ্চিত নেই।

শরীয়তপুরের জুমন আহমেদও ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন দালালের মাধ্যমে। তার যাত্রাপথ ছিল দীর্ঘ। ঢাকা থেকে আকাশপথে প্রথমে তাকে নেয়া হয় দুবাই। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় তুরস্কে। পরে অন্য অনেকের সঙ্গে দালালরা তাকে লিবিয়ায় নিয়ে যান। জুমন আহমেদও শেষ পর্যন্ত সমুদ্রপথে ইতালি পৌঁছতে সক্ষম হন।

ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার আগে জুমন আহমেদ মিরপুরের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চাকরি করতেন। প্রায় তিন বছরে সেখানে কোনো নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি তাকে। বেতনও পেতেন মালিকের ইচ্ছামতো। তিনি বণিক বার্তাকে জানান, কেবল উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ায় চাইলেও চাকরি পরিবর্তন করতে পারছিলেন না। সে কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু হতাশ হতে হয় ইতালি এসেও। এত বছরেও বৈধ কাগজ করতে না পারায় অল্প বেতনে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। তার সঙ্গে কাজ করেছেন এমন অনেক বাংলাদেশী টিকতে না পেরে, বিশেষ করে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দেশে ফিরে গেছেন।

মানিক মিয়া ও জুমন আহমেদ ঝুঁকি নিয়ে ইতালি পৌঁছতে সক্ষম হলেও অনেকেরই বরণ করে নিতে হচ্ছে করুণ পরিণতি। ২০২১ সালে লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেন। সব বাধা অতিক্রম করে প্রায় ৬০ হাজার অভিবাসী ইতালি পৌঁছতে সক্ষম হন, যার মধ্যে ৭ হাজার ৩০০ বাংলাদেশী। আর সাগরে ডুবে মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ৪০০ জন। বাকিরা কোস্টগার্ড ও নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে লিবিয়া ও তিউনিসিয়ায় ফেরত যেতে বাধ্য হন। সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে যাত্রা করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ল্যাম্পেডুসা দ্বীপে পৌঁছার সময় অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় অভিবাসনপ্রত্যাশী সাত বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় ধরা পড়া ২৮৭ জনের মধ্যে ২৭৩ জনই ছিলেন বাংলাদেশী।

প্রসঙ্গত, লিবিয়ার সর্বপশ্চিমের উপকূল থেকে ইতালির ল্যাম্পেডুসা দ্বীপের দূরত্ব সমুদ্রপথে প্রায় ৩০০ মাইল। একটি আধুনিক নৌযানে এ পথ পাড়ি দেয়া তেমন কোনো বিষয় নয়, কিন্তু পাচারকারীরা গাদাগাদি করে ছোট নৌকা, এমনকি কখনো কখনো বাতাস দিয়ে ফোলানো ডিঙিতে করে অভিবাসীদের বেশকিছুটা পথ নিয়ে যান। আর তাতেই ঘটে এত দুর্ঘটনা। ভয়ংকর এ জলপথ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের ইতালি পৌঁছতে সমুদ্রপথে নৌকাডুবিতে ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আট বছরে প্রায় ২২ হাজার ৬০০ মানুষের প্রাণ গেছে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশীও রয়েছেন।

উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় অভিবাসনের উদ্দেশ্যে মানব পাচারকারী বা দালালদের প্ররোচনায় ছোট নৌকা বা ভেলার মাধ্যমে সমুদ্র পাড়ি দেয়াকেই বোট মাইগ্রেশন বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এভাবে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ইতালি কিংবা গ্রিসে অভিবাসনের চেষ্টা করেন মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক অথবা সাব-সাহারা অঞ্চলের কিছু দেশের অধিবাসীরা। তবে ইউরোপে অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের কাছেও গত এক দশকে ভয়ংকর এ রুট প্রাধান্য পেয়ে আসছে।

মূলত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশীরা হাজার মাইল দূরের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন। এর শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালের দিকে। সে সময় লিবিয়ায় অনেক বাংলাদেশী কর্মী বিভিন্ন খাতে কাজ করতেন। পরবর্তী সময়ে লিবিয়ায় যুদ্ধ শুরু হলে ফেরত আসতে শুরু করেন বাংলাদেশী কর্মীরা। তবে বড় একটি অংশ আটকা পড়েন। তারাই মূলত প্রথম অবস্থায় যেকোনো পন্থায় ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন থেকেই লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশের পথটা জনপ্রিয় হতে থাকে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় মানব পাচার চক্র, যারা বাংলাদেশ থেকে হতাশাগ্রস্ত তরুণদের চুক্তিতে ইউরোপে নিয়ে যেতে শুরু করে। অনেকে ধরা পড়েন। অনেকের মৃত্যু হয়। অল্প কিছুসংখ্যক ইতালি পৌঁছতে সমর্থ হন। যাদের সাফল্য দেখে আরো হাজারো বাংলাদেশী তরুণ ঝুঁকিপূর্ণ এ পথে যাত্রা করতে আগ্রহী হচ্ছেন। তারা মনে করেন, কোনোভাবে দেশটিতে যেতে পারলে এক পর্যায়ে বৈধতা পাওয়া যাবে। যদিও বাস্তবতা পুরোই উল্টো। কেননা অবৈধদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে স্বাক্ষরিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরসের (এসওপি) আওতায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।

ইতালির বাংলাদেশ মিশন বলছে, অসাধু মানব পাচারকারী চক্রগুলোই ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশী তরুণদের ওই বিপত্সংকুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। ওই দুষ্টচক্র থেকে সাবধান থাকতে দেশের তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান জানান, বর্তমানে ইতালিতে যে-সংখ্যক বাংলাদেশী অভিবাসী রয়েছেন, ইইউভুক্ত আর কোনো দেশে তা নেই। এ কারণে বাংলাদেশের অভিবাসীদের ইতালিতে বৈধ পথে আসার চেষ্টা করা উচিত।

প্রসঙ্গত, আট বছর বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ইতালি বাংলাদেশীদের জন্য সিজনাল ও নন-সিজনাল ভিসা আবেদনের সুযোগ করে দিয়েছে। এ স্কিমের অধীনে বাংলাদেশসহ ৩০টি দেশ থেকে ৬৯ হাজার ৭০০ অভিবাসী কর্মী আনার অনুমতি দিয়েছে দেশটির শ্রম ও সামাজিক পরিকল্পনাবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এদিকে মহামারী পরিস্থিতিতেও থেমে নেই বোট মাইগ্রেশন। মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারো ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশী। প্রতিকূল পরিবেশে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে নিয়মিত বিরতিতে মৃত্যুর মুখেও পড়ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। আবার ভ্রমণ ভিসায়ও স্বল্পকালীন অভিবাসনের ঝুঁকি নিচ্ছেন বাংলাদেশীরা। গন্তব্যে পৌঁছে নির্দিষ্ট মেয়াদের পর অনেকে ধরাও পড়ছেন।

প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ওয়ারবে ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সৈয়দ সাইফুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, তরুণদের ঝুঁকিপূর্ণ বোট মাইগ্রেশনে যারা উদ্বুদ্ধ করছেন, তাদের আমরা ড্রিম সেলার বলি। মৃত্যুঝুঁকি থাকার পরও ইউরোপে নিরাপদ জীবনযাত্রার স্বপ্ন বিক্রি করছেন তারা। আবার সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়েও যারা বোট মাইগ্রেশনে যাচ্ছেন, তারা কেউই কিন্তু গরিব ঘরের সন্তান নন। দালালদের মাধ্যমে এ পথে ইউরোপে প্রবেশ করতে ১৮-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কেউ হয়তো ছোট ব্যবসা, দোকান বিক্রি করছেন, কেউ কৃষিজমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। একটাই স্বপ্ন, কোনোভাবে ইউরোপে প্রবেশ করতে পারলেই আবার সব পাওয়া যাবে। কেউ কেউ সফলও হচ্ছেন। তবে সে সংখ্যা খুবই কম। আর সে সফলতা দেখে আরো হাজারো তরুণ এ পথে পা দিচ্ছেন। তরুণদের এ ভয়ংকর যাত্রা রুখতে দেশে কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে দালাল মাফিয়া চক্রকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সাক্ষীর অভাবে দোষীরা ছাড়া পেয়ে যায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঝুঁকি নিয়ে যারা অস্থায়ী অভিবাসনের পথে পা দিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই দেশে থাকা অবস্থায় কাজ করতেন রিটেইল, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাতে। মূলত স্বল্পবেতন, কর্মপরিবেশ, চাকরির অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণে তারা অস্থায়ী অভিবাসনের দিকে ঝুঁকছেন। বিদেশে অস্থায়ী অভিবাসনের পর দেশে ফিরে এসেছেন এমন বাংলাদেশীদের নিয়ে সম্প্রতি জরিপ করে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ। বাংলাদেশ রিটার্ন মাইগ্র্যান্ট সার্ভে (বিআরএমএস) শীর্ষক ওই জরিপের ওপর ভিত্তি করে চলতি মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক।

‘ইনস্টিটিউশনাল ভয়েডস, ক্যাপিটাল মার্কেটস অ্যান্ড টেম্পোরারি মাইগ্রেশন: এভিডেন্স ফ্রম বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে যারা অস্থায়ী অভিবাসন করছেন, তাদের ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশই দেশে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও রিটেইল খাতে কর্মরত ছিলেন। অস্থায়ী অভিবাসনের আগে দেশে কৃষি খাতে কর্মরত ছিলেন ২২ দশমিক ২ শতাংশ, নির্মাণ খাতে ২৩ দশমিক ৮, উৎপাদন খাতে ২ দশমিক ৫, পরিবহন ও পরিষেবা খাতে ১০ দশমিক ৪ ও অন্যান্য খাতে কর্মরত ছিলেন বাকি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

অনিয়মিত পথে গত বছর অন্তত ৮ হাজার ৬৬৭ জন বাংলাদেশী ইইউতে ঢুকেছেন। ইউরোপের বহিঃসীমান্তরক্ষী সংস্থা ফ্রনটেক্সের হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে অবৈধভাবে ইতালি প্রবেশের তালিকায় বাংলাদেশীরা রয়েছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। ফ্রনটেক্সের হিসাবে গত বছর অবৈধ উপায়ে ইইউর দেশগুলোয় প্রবেশ করাদের মধ্যে ৭ হাজার ৫৭৪ জনই এসেছেন মধ্য ভূমধ্যসাগর হয়ে। ৬০৪ জন প্রবেশ করেন পূর্ব ভূমধ্যসাগর দিয়ে আর ৪৩৭ জন ঢুকেছেন পশ্চিম বলকান দিয়ে। ফ্রনটেক্সের এ তালিকায় লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালিতে আসাদের মধ্যে বাংলাদেশীদের অবস্থান দ্বিতীয়।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর সমুদ্রপথে ইতালিতে পৌঁছেছেন ২ হাজার ৯৯৫ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৯১ জনই লিবিয়া থেকে এসেছেন। এদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশী।

লিবিয়ায় অবস্থানরত অভিবাসীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএমের সর্বশেষ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে ২০ হাজার ২৫৪ জন বাংলাদেশী ছিলেন, যা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের ৪০ শতাংশ।

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ অভিবাসীদের ২৪ শতাংশ দেশটিতে এসেছেন তুরস্ক হয়ে। ১৯ শতাংশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর হয়ে এবং ১৬ শতাংশ এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তুরস্ক হয়ে। বাকি ৪১ শতাংশ অন্য রুট যেমন—ভারত, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, তিউনিসিয়া বা অন্য কোনো দেশ ঘুরে লিবিয়া আসেন। এজন্য তারা বাংলাদেশী মুদ্রায় জনপ্রতি প্রায় আড়াই লাখ টাকা থেকে (২ হাজার ৬৮২ ডলার) থেকে সোয়া ৩ লাখ টাকার বেশি (৩ হাজার ৮৬৩ ডলার) ব্যয় করেন। পরে সেখান থেকে তারা ইউরোপে, বিশেষ করে ইতালিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

প্রসঙ্গত, বিআরএমএস বিশেষভাবে কর্মীদের অভিবাসনের আগে, অভিবাসনের সময় এবং তার পরে তাদের কাজের ক্ষেত্র, আর্থিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করতে তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ। জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০১৯ সালে। এতে পাঁচ হাজার বিদেশফেরত বাংলাদেশী কর্মীর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, যারা মূলত স্বল্পসময়ের জন্য অস্থায়ীভাবে অভিবাসী হয়েছিলেন। জরিপে বিদেশফেরত কর্মীদের সম্পূর্ণ কর্মসংস্থানের ইতিহাস, অভিবাসন সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য, অভিবাসন ব্যয়, অভিবাসীদের জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য, অর্থায়নের উৎস ও বাংলাদেশে ফেরার পর কী ধরনের কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন, সেগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপ বলছে, বাংলাদেশ থেকে অস্থায়ী মাইগ্রেশন করা কর্মীদের নিয়ে এটি সর্বপ্রথম ও একমাত্র জরিপ। মূলত অস্থায়ী চুক্তিতে বাংলাদেশ থেকে যারা অভিবাসী হচ্ছেন, তাদের তথ্য নিয়েই বিআরএমএস করা হয়েছে। অস্থায়ী অভিবাসীদের মধ্যে ফিরে আসার পর উদ্যোক্তা হয়েছিলেন অনেকে। তবে সে সংখ্যা খুবই কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে বিদেশে অভিবাসী থাকাকালে ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ নিয়োজিত ছিলেন নির্মাণ খাতের কাজে। অন্যদিকে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও রিটেইল খাতে কর্মরত ছিলেন মাত্র ১১ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া কৃষি খাতে কর্মরত ছিলেন ৩ শতাংশ, উৎপাদন খাতে ৫ দশমিক ১, পরিবহন ও পরিষেবা খাতে ১০ দশমিক ৩ ও অন্যান্য খাতে কর্মরত ছিলেন বাকি ৪ শতাংশ।

অন্যদিকে অস্থায়ী অভিবাসনের পর দেশে ফিরে এসে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও রিটেইল খাতে ফিরে গেছেন ৪২ দশমিক ১ শতাংশ। কৃষিকাজে ফিরেছেন ২৫ দশমিক ৯, পরিবহন ও পরিষেবা খাতে ১৯ দশমিক ৪, নির্মাণ খাতে ৯ দশমিক ৬ ও উৎপাদন খাতে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

লিবিয়ার উপকূল থেকে ইউরোপের ইতালির উপকূলের দূরত্ব সবচেয়ে কম। সেজন্য অভিবাসনের উদ্দেশ্যে সেই পথ পাড়ি দেয়ার প্রবণতাও বেশি। ব্র্যাকের গবেষণা তথ্য বলছে, ২৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী লোকজন সবচেয়ে বেশি ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে ৩১ থেকে ৩৫ বছরের লোকই বেশি। গত কয়েক বছরে ইউরোপ ও লিবিয়া থেকে ফেরত আসা ২ হাজার ২৮৪ বাংলাদেশীর সঙ্গে কথা বলেছে ব্র্যাক। সেখানে দেখা গেছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলা থেকে বেশি লোক এভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। একেকজন ইউরোপে যেতে ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচিপ্রধান শরিফুল হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ঝুঁকি নিয়ে যারা ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তাদের বড় একটা অংশই দেশে থাকা অবস্থায় কোনো কাজ করার চেষ্টা করেন না। বড় একটা অংশ গ্রাম থেকে যান, যারা প্রথাগতভাবেই কৃষিকাজে যুক্ত থাকেন। নির্মাণ খাতের, বিশেষ করে প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ানরা বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আরেকটা বড় অংশ যান যারা বিভিন্ন মুদি দোকান, হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। তবে চাকরি না নিয়ে যারা সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশের ঝুঁকি নেন, তারা মূলত লোভের বশেই এমনটা করেন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *