Main Menu

হাঁচির পর যে ৪ সুন্নত পালন করবেন

আবরার আবদুল্লাহ, অতিথি লেখক:
হাঁচি আতঙ্কের এক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সময়ে। কোথাও কেউ হাঁচি দিলে আশপাশের মানুষ বিব্রতবোধ করে। মনে মনে লজ্জা অনুভব করে। হাঁচির মাধ্যমে যদি করোনা সংক্রমিত হয়, এই ভয়ও কাজ করে কারও কারও।

এর কারণ হলো, আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি অংশ হাঁচি। যখন ব্যাকটেরিয়া বা অন্য ক্ষতিকর জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে তখন ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে এদের শরীর থেকে বের করে দেয় হাঁচি। এভাবেই হাঁচি আমাদের গুরুতর কোনো সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। মূলত ১৬০ কিলোমিটার বেগে বের করে দেওয়া জীবাণুর ভয়েই মানুষ বিব্রতবোধ করে।

 

এক. নাক-মুখ ঢেকে নেওয়া

হাঁচি দেওয়ার সময় অবশ্যই হাঁচির শিষ্টাচার মেনে হাঁচি দেওয়া উচিত, যাতে হাঁচির সঙ্গে বের হওয়া জীবাণুগুলো অন্যদের ক্ষতিগ্রস্ত না করে। তাই হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে নেওয়া কিংবা কিছুই না থাকলে কনুই ভাঁজ করে হাতের আস্তিন দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেওয়া উচিত।

এমনকি কারো সঙ্গে কথা বলার সময়, কথার সঙ্গে থুতু ছিটে অন্যের গায়ে বা কাপড়ে যাচ্ছে কি না, হাঁচি-কাশির ছিটা অন্যের শরীরে বা কাপড়ে লাগছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি হাঁচির মাধ্যমে মহান আল্লাহ যেহেতু আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন জীবাণু বের করে দেন, তাই আমাদের উচিত হাঁচি এলে অবশ্যই মহান আল্লাহর শুকরিয়া করা, তার পবিত্রতা বর্ণনা করা।

দুই. হাঁচি দেওয়ার প্রধান সুন্নত

 

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন আদমের মধ্যে রুহ সঞ্চার করেন, অতঃপর রুহ যখন তার মাথায় পৌঁছে, তিনি হাঁচি দেন, তারপর বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন।’ আল্লাহ তাকে বলেন, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৬১৬৫)

তিন. হাঁচির জবাবে যা বলবেন

কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য) বলে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করলে অবশ্যই তার হাঁচির জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন) বলতে হয়। এটি মুমিনের জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। রাসুল বলেছেন, আল্লাহ তাআলা হাঁচি দেওয়া পছন্দ করেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে তবে প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস : ৬২২৬)

প্রশ্ন জাগতে পারে, হাঁচির মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের শরীর থেকে জীবাণু বের করে দেন তাই হাঁচিদাতা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে। কিন্তু অন্যরা তার হাঁচির জবাব দিতে হয় কেন? এই প্রশ্নের জবাব খোদ রাসুল (সা.) দিয়েছেন।

চার. হাঁচির জবাব না দিলে

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.)-এর সামনে দুই ব্যক্তি হাঁচি দিলেন। তিনি (সা.) একজনের হাঁচির জবাব দিলেন এবং অন্যজনের জবাব দিলেন না। অন্য লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি তার হাঁচির জবাব দিলেন, কিন্তু আমার হাঁচির জবাব দিলেন না। তিনি (সা.) বলেন, সে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেছে; কিন্তু তুমি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলোনি। (বুখারি, হাদিস : ৬২২৫)

অর্থাৎ হাঁচিদাতা হাঁচি দেওয়ার পর আল্লাহর প্রশংসা করলেই তার হাঁচির জবাব দেওয়া ওয়াজিব হয়। ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে তার জন্য দোয়া করা ওয়াজিব। কিন্তু কেউ যদি তা না করে, তাহলে তার হাঁচির জবাব দেওয়া আবশ্যক নয়। অসুস্থতাজনিত কারণে কেউ বার বার হাঁচি দিলেও তার জবাব দেওয়া আবশ্যক নয়। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৭৯)

কেউ যখন হাঁচিদাতার জন্য দোয়া করবে, তখন হাঁচিদাতাও তার জন্য ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’ (আল্লাহ তোমাকে সৎপথে চালিত করুন এবং তোমাকে স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করুন) বলবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৪১)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসুল (সা.)-এর সুন্নতগুলো পালন করার তাওফিক দান করুন।






Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *