Main Menu

‘অস্বাভাবিক’ আচরণ করছেন সাবেক ওসি প্রদীপ

নিউজ ডেস্ক:
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনার পর থেকেই কারারক্ষীদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। জানা গেছে তাকে শনিবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়। এরপর থেকে প্রদীপ কুমার দাশ ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করছেন না। তাকে রাখা হয়েছে কারাগারের ৩২ নম্বর কনডেম সেলের পৃথক একটি কক্ষে। রোববার একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অপরদিকে ৩২ নম্বর কনডেম সেলের আরেকটি কক্ষে রাখা হয়েছে একই মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। তবে তিনি স্বাভাবিক এবং চুপচাপ রয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে গতকাল শনিবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় প্রদীপ ও লিয়াকতকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।

যে ৩২ নম্বর কনডেম সেলে প্রদীপ ও লিয়াকত এখন রয়েছেন, সেটার পাশেই চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়৷ এখান থেকেই অপরাধীদের ধরতে বিভিন্ন অভিযানে যেতেন এক সময়ের প্রতাপশালী ওসি প্রদীপ কুমার দাশ৷ একই দপ্তরে কর্মরত ছিলেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীও। মাত্র দেড় বছর আগেও এ দুজন আসামির হাতে হাতকড়া পরাতেন। এখন তাদের হাতেই হাতকড়া। শরীরে কয়েদির পোশাক। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং একই থানার বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে সেই হাতকড়া পরিয়ে কঠোর নিরাপত্তায় আনা হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, অন্য কয়েদিদের মতো প্রদীপ ও লিয়াকতের পরনে কারা পোশাক রয়েছে। চট্টগ্রামে আনার পরে তাদের রাখা হয়েছে ৩২ নম্বর কনডেম সেলের পৃথক দুটি কক্ষে। কারাগারের অন্য বন্দিদের মতো তাদের খেতে দেওয়া হচ্ছে সাদা ভাত, মাছ, মাংস ও সবজি। অন্য সেলের তুলনায় কনডেম সেল আকারে ছোট। সেলের ভেতর আলো-বাতাস তেমন থাকে না।

কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, এক সময়ের প্রতাপশালী ওসি প্রদীপ এখন কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি। যার নাম শুনলে ভয়ে কেঁপে উঠত টেকনাফের সাধারণ মানুষ। খলনায়কের মতো, প্রদীপের নাম বলে ওই এলাকায় ছোট্ট শিশুদের ঘুম পাড়াতেন মায়েরা। সেই মানুষটিই এখন ঘুমাতে পারছেন না। আরাম-আয়েশের রঙিন জীবন থেকে এখন চার দেয়ালে বন্দি হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তাদের পরনে এখন সাদা–কালো রঙের কয়েদির পোশাক। টেকনাফ থানায় বদলির আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে প্রদীপ ও লিয়াকত কর্মরত ছিলেন। শুধু কর্মস্থল নয়, তারা দুজন বেড়ে উঠেছেনও এ চট্টগ্রাম শহরেই।

গত ৩১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। ফাঁসির রায়ের পর কক্সবাজার জেলা কারাগারের কনডেম সেলে পাঁচদিন রাখার পর অজানা কারণে প্রদীপ ও লিয়াকতকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রদীপ ও লিয়াকতকে কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী ফাঁসির আসামিদের যেভাবে রাখার নিয়ম রয়েছে, তাদেরও সেভাবে রাখা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্টর বলছেন, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় রায় এবং রায়ের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের জন্য বড় ধরনের একটি মেসেজ হিসেবে উঠে এসেছে। যদিও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এ রায় চূড়ান্ত নয়, মামলায় যারা দণ্ডিত হয়েছেন তাদের উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং সেসব আদালতে এ রায়ের ভাগ্য কীভাবে নির্ধারিত হবে তা কেবল ভবিষ্যতই বলে দেবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রদীপের অস্বাভাবিক আচরণের সংবাদটি সঠিক না। তবে, তাকে একটু চিন্তিত মনে হচ্ছে। সম্ভবত আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নন তিনি।’






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *