Main Menu

কাজের ফাঁকে যেসব আমল করতে পারেন

জাওয়াদ তাহির, অতিথি লেখক:
প্রতিদিন আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে গড়ে দৈনিক আমাদের যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।

কিন্তু একজন মুমিনের একটি মুহূর্তও বিফলে যেতে পারে না। কারণ, জান্নাতে যাওয়ার পর একজন মুমিন জিকিরবিহীন অহেতুক অতিবাহিত সময়টুকুর জন্য আফসোস করবে। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ৪৯৮৬)

একটু যত্নশীল হলে এই সময়গুলো হয়ে উঠতে পারে আমাদের জন্য অনন্য সম্পদ। কর্মব্যস্ত সময়ের বাঁকে বাঁকে সহজসাধ্য ইবাদতগুলো হলো—

দোয়া করা

চলন্ত অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা, যাপিত জীবনের যাবতীয় সমস্যা আল্লাহর কাছে পেশ করা। এটি একটি পরীক্ষিত আমল। সফররত অবস্থায় আল্লাহ তাআলা কারো হাত খালি ফেরান না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়—(এক) পিতা-মাতার দোয়া, (দুই) মুসাফিরের দোয়া, (তিন) মজলুমের দোয়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৩৬)

জিকির করা

গাড়িতে বসে আমরা আল্লাহর জিকির-ইস্তিগফার পড়তে পারি। অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে জিকির ও ইস্তিগফারের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার জন্য ইসলামের বিষয়াদি অতিরিক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আমাকে এমন একটি বিষয় বলুন, যা আমি শক্তভাবে আঁকড়ে থাকতে পারি। তিনি বলেন, সর্বদা তোমার জিহ্বা যেন আল্লাহ তাআলার জিকিরের দ্বারা সজীব ও প্রাণবন্ত থাকে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৫)

তিলাওয়াত করা

আমাদের স্মার্ট ফোনে কোরআনে কারিম তিলাওয়াত করতে পারি। ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত কোরআন তিলাওয়াত। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সফর অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) উষ্ট্রীর পিঠে অথবা উটের পিঠে আরোহিত অবস্থায় যখন উটটি চলছিল, তখন আমি তিলাওয়াত করতে দেখেছি। তিনি ‘সুরা ফাত্হ’ বা ‘সুরা ফাত্হ’-এর অংশবিশেষ অত্যন্ত নরম এবং মধুর ও ছন্দোময় সুরে পাঠ করছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৪৭)

তিলাওয়াত শোনা

কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করা। আমর ইবনে মুররা (রা.) বলেন, নবী (সা.) আমাকে বলেন, আমার কাছে কোরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার কাছে পাঠ করব? অথচ আপনার কাছেই তা অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, অন্যের মুখ থেকে শুনতে আমি পছন্দ করি। এরপর আমি তাঁর কাছে সুরা ‘নিসা’ পাঠ করলাম। যখন আমি এই আয়াত পাঠ করলাম, অর্থ : ‘আর তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি ডেকে আনব প্রতিটি উম্মতের মধ্য থেকে অবস্থা বর্ণনাকারী এবং আপনাকে ডাকব তাদের ওপর অবস্থা বর্ণনাকারীরূপে। ’

এ পর্যন্ত পাঠ করলাম, তিনি বললেন, থামো, থামো। তখন তাঁর দুচোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু ঝরছিল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৫৮২)

দাওয়াত দেওয়া

পাশের সিটে থাকা ব্যক্তিকে দ্বিনের দাওয়াত দিতে পারি কিংবা উপকারী কোনো জ্ঞানের চর্চা করতে পারি। বিশেষত, আমার পাশে যদি কোনো আলেম থাকে তাহলে নিজের কল্যাণে এ সুযোগটি লুফে নিতে পারি। এ জন্য প্রথমে তাঁর সঙ্গে হৃদ্যতা তৈরি করা। এরপর তাঁকে দাওয়াত দেওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, হে আলী, তোমার মাধ্যমে একজন লোক হিদায়াত পাওয়া তা আরবের লাল উটের চেয়ে উত্তম। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬১১৭)

সৃষ্টি জগৎ নিয়ে ভাবা

যখন একদম বিরক্ত চলে আসে, ওপরের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তখন একটু চারপাশে মানুষের অবস্থার দিকে তাকানো। কত হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত এ পথে চলছে। ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ ছিল তারা। আজ তারা নেই। সামনে আরো কত মানুষ আসবে এ পথে চলার জন্য, হয়তো তখন আমি থাকব না। দুনিয়ার বাস্তবতা পরকালের বাস্তবতা গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে ভাবা; এটা আমার জন্য কল্যাণকর। আর আল্লাহ তাআলা চিন্তা করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই ভূ-মণ্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড়-পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল তিনি জোড়া জোড়া সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা চিন্তা করে।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ৩)






Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *