Main Menu

লাগামহীন কথা যে ক্ষতি ডেকে আনে

আজম রাশেদ, অতিথি লেখক:

অসংযত ও অনিয়ন্ত্রিত কথাবার্তা মানুষকে পৃথিবীতে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে। পরকালে গুনাহের শাস্তির মুখোমুখি করে। তাই কথা বলা উচিত মেপে মেপে। অহেতুক ও অপ্রয়োজীয় কোনো কথা যেন না হয়, সে চেষ্টা থাকতে হবে সব সময় ও সবখানে।

কোরআন ও হাদিসে সব ধরনের অসংযত কথাবার্তার ব্যাপারে সতর্ক করেছে। এক্ষেত্রে যেন শব্দ ও বাক্যের অপব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন হতে বলেছে। এখানে পাঠকদের জন্য কয়েকটি তুলে ধরা হলো।

সংযত কথা বললে যে পুরস্কার

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি ঘরের জিম্মাদার, আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

আলোচ্য হাদিসে রাসুল (সা.) মুমিনদের বাক-সংযমে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বিশেষত তিনি ঝপড়া পরিহার ও হাসির ছলে মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মুমিন ভালো কথা ও জিকিরের মাধ্যমে তার জিহ্বাকে সজীব রাখে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে তোমার জিহ্বাকে সজীব রাখো।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৫)

মুখের কারণে অনেকে জাহান্নামে যাবে

মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, ‘হে আল্লাহর নবী, আমরা যে কথাবার্তা বলি এগুলো সম্পর্কেও কি পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন, হে মুয়াজ, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধু জিহ্বার উপার্জনের কারণেই অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৬১৬)

অপ্রয়োজনীয় শপথকারী লাঞ্ছিত হয়

যারা কথায় কথায় শপথ করে তারা লাঞ্ছিত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অনুসরণ করো না তার, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত- পেছনে মানুষের নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরকে লাগিয়ে বেড়ায়।’ (সুরা কালাম, হাদিস : ১০-১১)

অভিশাপ করা ও বদদোয়া দেওয়া নিন্দনীয়

মানুষকে অভিশাপ করা নিন্দনীয়। যে ব্যক্তি মানুষকে বেশি বেশি অভিশাপ করে আল্লাহ পরকালে তাদের সুপারিশ ও সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘বেশি বেশি অভিশাপকারী কেয়ামতের দিন সুপারিশকারী ও সাক্ষ্যদাতা হবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৮)

বিতর্ক-বিবাদ পথভ্রষ্টতার কারণ

বিতর্ক ও বিবাদ মানুষকে সত্য ও সুপথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো সম্প্রদায় সুপথ পাওয়ার পর আবার পথভোলা হয়ে থাকলে তা শুধু তাদের বিবাদ ও বাকবিতণ্ডায় জড়িত হওয়ার কারণেই হয়েছে। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন- ‘এরা শুধু বাকবিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত এরা এক ঝগড়াটে সম্প্রদায়।’ (সুরা জুখরুফ, হাদিস : ৫৮; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩২৫৩)

কথাবার্তায় সংযত হওয়া মুমিনের গুণ

অর্থহীন কথাবার্তা পরিহার মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী, যারা অর্থহীন কথা-কাজ থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন, হাদিস : ১-৩)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (সহিহ মুসলিম, আয়াত : ৪৭)

মুমিন কাউকে কথার মাধ্যমে কষ্ট দেয় না

মুমিন কথাবার্তায় সংযত হয়। সে কাউকে কথার মাধ্যমে আহত করে না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলিম সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৮৪)

কল্যাণকর কথা বলতে মানা নেই

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ কল্যাণকর কথার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের বেশিরভাগ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের; আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষায় কেউ তা করলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই মহাপুরস্কার দেবেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৪)






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *