Main Menu

৫ বাঙালির নামে ব্রিটেনে পাঁচটি ভবনের নামকরণ

প্রবাস ডেস্ক:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ব্রিটেনে পাঁচ জন বিশিষ্ট বাঙালির নামে পাঁচটি নতুন ভবনের নামকরণ করা হয়েছে। দেশটির বাংলাদেশি-অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল পাঁচটি নতুন ভবনের এই নামকরণ ঘোষণা করে। সোমবার রাতে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এই পাঁচ বিশিষ্ট বাঙালি হলেন- কবি সুফিয়া কামাল, সমাজসেবক তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং লন্ডনের প্রয়াত সাংবাদিক শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল। এছাড়া পূর্ব লন্ডনে বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক আলতাব আলীর নামেও একটি ভবনের নামকরণ করা হচ্ছে।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই পাঁচ জন বিশিষ্ট বাঙালির নাম ঘোষণা করেন। এই ভবনগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এর মধ্যে চারটি ভবনের নির্মাণকাজ চলতি বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে জন বিগস জানিয়েছেন। শুধু শাহাবউদ্দিন বেলাল নামে নামকরণ করা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে বলে তিনি জানান।

বিবিসি’কে মেয়র জন বিগস বলেন, পূর্ব লন্ডনের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের গৌরবময় ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই পাঁচ ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে সেই ইতিহাস এবং পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সার্বিক অবদানকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ‘আমরা এটি করছি যাতে বহু জাতিসত্ত্বার এই সমাজে মানুষ তার শেকড়কে ভুলে না যায়। এটি কমিউনিটির কণ্ঠস্বর হয়ে থাকবে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃত্বে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে এটি তারই পরিচয় বহন করছে।’

টাওয়ার হ্যামলেটস কর্তৃপক্ষ যে পাঁচ জনকে এই সম্মাননা দিয়েছে, তাদের অবদানের কথা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দিশারির ভূমিকা পালন ছাড়াও কবি সুফিয়া কামাল নারী প্রগতি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও ছিল তার অসামান্য ভূমিকা। ১৯৯১ সালে তিনি মারা যান। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী, যাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

তাসাদ্দুক আহমেদ ছিলেন ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটির এক পিতৃতুল্য ব্যক্তিত্ব। এই কমিউনিটির অগ্রযাত্রায় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং তার হাত ধরে বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। দেশের ডাক এবং ইন্টার্ন নিউজ নামে দু’টি সংবাদপত্র তিনি প্রকাশ করেন।

সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৯ সালে তাকে রানির সম্মাননাসূচক খেতাব এমবিই প্রদান করা হয়। এছাড়া ২০০০ সালে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের ফ্রিডম অব দ্যা বারা সম্মান অর্জন করেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামটি অপরিচিত নয়। কিন্তু বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির সেবায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন বলে জানিয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটস কর্তৃপক্ষ। এক সময় তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের শিক্ষা বিভাগে কাজ করেছেন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল ব্রিটেনে বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। তিনি এক সময় স্টেপনি গ্রিন এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলার হিসেবেও কাজ করেছেন।

অন্যদিকে একজন সাধারণ অভিবাসী শ্রমিক আলতাব আলী তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পূর্ব লন্ডনে বর্ণবাদ ও ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হন। ১৯৭৮ সালে এক বর্ণবাদী হামলায় তিনি প্রাণ হারান।

তার মৃত্যুর পর প্রায় সাত হাজার মানুষ তার কফিন বহন করে যান মধ্য লন্ডনে। হাইড পার্ক, ট্রাফালগার স্কয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

লন্ডনের শ্বেতাঙ্গ, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও ক্যারিবীয় অভিবাসী আন্দোলনকারীরাও এই আন্দোলনে যোগ দেন। হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় তার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি পার্কে রয়েছে লন্ডনের ভাষা শহীদ মিনার।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *