Main Menu

কাজের ভিসায় রোমানিয়া: যা জানা জরুরি – প্রথম পর্ব

নিউজ ডেস্ক:
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে শেঙ্গেন অঞ্চলের বাইরে থাকা ইউরোপের দেশগুলোতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম রোমানিয়া। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে দেশটিতে আসার প্রক্রিয়া এবং এর আদ্যোপান্ত নিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব থাকছে আজ।

মধ্যপ্রাচ্য বা এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ইউরোপে অদক্ষ শ্রমিক নেয়ার হার একেবারেই কম৷ সাধারণত হাই স্কিলড বা উচ্চ দক্ষ জনশক্তির জন্য তাদের দুয়ার খোলা থাকে৷ তবে অদক্ষ কর্মী বা শ্রমিক যে একেবারেই নেয় না তা নয়৷ সাধারণত আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, মরোক্কোসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ সরকারি চুক্তির মাধ্যমে মৌসুমি কৃষি ভিসায় এ ধরনের শ্রমিক চাহিদা পূরণ করে৷ ইটালি, গ্রিস, ফ্রান্স, স্পেনসহ কয়েকটি দেশ এই পদ্ধতিতে কৃষিসহ কয়েকটি খাতে শ্রমিক সংকট সামাল দিয়ে থাকে৷

তবে এর বাইরেও বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান থেকে অনেক আধা দক্ষ ও অদক্ষ লোক ওয়ার্ক পারমিট বা কাজে অনুমতি থাকা ভিসায় ইউরোপে আসেন৷ এই দেশগুলোতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখানো মুনাফালোভী এজেন্সিগুলোর দৌরাত্মও কম নয়৷

শেঙ্গেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিগত বছরগুলোতে পোল্যান্ড, মাল্টা এবং পর্তুগাল বেশ কিছু ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ইস্যু করেছে৷ তবে এসব দেশে শ্রমিকরা না থেকে ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী দেশগুলোতে পাড়ি জমানোর কারণে সেখানেও এখন এসব ভিসায় আসার হার খুবই কম৷

অপরদিকে শেঙ্গেন অঞ্চলের বাইরে থাকা ইউরোপের বেশ কিছু দেশে কয়েক বছর ধরে কাজের ভিসায় বাংলাদেশিদের আসতে দেখা যাচ্ছে৷ সেসব দেশের মধ্যে অন্যতম রোমানিয়া৷

রোমানিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ৷ ২০০৭ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত দেশটি এখন শেঙ্গেন অঞ্চলে যোগ দেয়ার অপেক্ষায় আছে৷ আয়তনে ইউরোপের নবম বৃহত্তম দেশটির রাজধানী বুখারেস্ট৷ জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি৷

চলতি বছরে ইস্যু হয়েছে ৪৭১টি ভিসা

রোমানিয়ায় বাংলাদেশিদের কাজের ভিসায় আসার ইতিহাস খুব পুরনো নয়৷ তবে অতীতে আসা অনেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন৷ গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজারে নতুন লোক নেয়া বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবে অভিবাসন প্রত্যাশীরা নতুন নতুন দেশের খোঁজে থাকেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় তথ্য প্রাপ্তিও বেশ সহজ হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) রোমানিয়ার জেনারেল ইন্সপেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (জিআইআই)’র বরাত দিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছে, বিগত দুই বছরে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ব্যাঘাত ঘটলেও এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশিদের ৪৭১ টি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ইস্যু করা হয়েছে৷ যেটি ২০২০ সালে ছিল ৩৬৫৷

আইওএম হেডকোয়ার্টার জেনেভার গণমাধ্যম বিষয়ক মুখপাত্র পল ডিলিয়ন ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, “উন্নয়নশীল দেশগুলোর নাগরিকদের কাজের ভিসা প্রদান নিঃসন্দেহে একটি ভালো সংবাদ৷ এর মাধ্যমে ইউরোপের দেশগুলো যেমন শ্রমিক সংকট দূর করতে পারবে তেমনি শ্রমিকরা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে ভেঙে পড়া অর্থনীতি চাঙা করতে ভূমিকা রাখবে৷”

বেতন ও স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো রোমানিয়ায় জীবনযাত্রার মান তেমন ব্যয়বহুল নয়৷ ২০১৯ সাল থেকে রাজধানী বুখারেস্টে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক ফরহাদ (ছদ্মনাম) ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, ‘‘আমি প্রতিমাসে ৫০০ ইউরো (প্রায় ৫০ হাজার টাকা) বেতন পাই৷ আমার থাকা খাওয়া মালিক প্রদান করে৷ এর বাইরে আমার হাত খরচের জন্য সর্বোচ্চ মাসে ৫০ ইউরো খরচ হয়৷’’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘আমি দিল্লি রোমানিয়া এম্বাসি থেকে এক বছরের দীর্ঘমেয়াদী ভিসা নিয়ে আসি৷ আইন অনুযায়ী এখানে প্রতি বছর ভিসা রিনিউ করতে হয়, যেটি তেমন ঝামেলার‍ নয়৷ প্রথম কয়েক বছর টানা থাকার পরে ক্রমান্বয়ে দুই এবং পাঁচ বছরের টিআর বা অস্থায়ী থাকার অনুমতিপত্র দেওয়া হয়৷’’

সেখানে বসবাসরত সব বাংলাদেশিরা বৈধ অভিবাসী কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ওয়ার্ক পারমিটে যারা এসেছেন তারা সবাই বৈধভাবেই দেশটিতে আছেন৷ তিনি অবৈধ উপায়ে বা অনিয়মিত প্রক্রিয়ায় কাউকে থাকতে দেখিনি।

রোমানিয়ায় প্রবেশের পরে বাংলাদেশিরা ইউরোপের ধনী দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে যেহেতু ওয়ার্ক পারমিটে বৈধভাবে সবাই আসে সুতরাং আবার অবৈধভাবে অন্য কোথাও গিয়ে অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে কাউকে এরকম করতে দেখা যায় না৷’’

ভুল তথ্যের কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৈধ ভিসায় আসা বাংলাদেশিরা না জেনে অনিয়মিত অভিবাসী হয়ে পড়েন৷ যার ফলে বছরের পর বছর তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এভাবেই বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন৷

যেসব খাতে লোক নেওয়া হচ্ছে

বর্তমানে রোমানিয়াতে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি প্রবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে এখনও পর্যন্ত মোটাদাগে নির্মাণখাতে ব্যাপকভাবে শ্রমিকের চাহিদা আছে৷ এছাড়া অনেকে বিভিন্ন কারাখানাতে শ্রমিক হিসেবে এবং কাঠমিস্ত্রী হিসেবেও কর্মরত আছেন। তবে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মালিক ও কোম্পানির সাথে ভালো যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকদেরও রোমানিয়ায় ওয়ার্ক পারমিটে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সেখানে বসবাসরত প্রবাসীরা।

অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন এড়ানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোন দেশে আসার আগে সেখানকার সব তথ্য জেনে নেওয়া। সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য যেসব বৈধ পথ আছে সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা৷

রোমানিয়ায় আসার জন্য আবেদনের প্রস্তুতি এবং ভুয়া পারমিট ও ভিসা সম্পর্কিত তথ্য থাকছে সিরিজের আগামী পর্বে৷






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *