Main Menu

বিমানবন্দর না সোনার খনি?

কাউসার চৌধুরী, (অতিথি প্রতিবেদক) : সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ৭ বছরে আড়াই মন স্বর্ণ উদ্ধার করেছে বিমানবন্দর কাস্টমস। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের বাজার মূল্য প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। কেবল স্বর্ণ উদ্ধারই নয়, স্বর্ণ পাচারের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন চোরাচালানীও গ্রেফতার হয়েছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস সূত্র।

বিমানবন্দর সূত্র মতে, ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে বেশীরভাগ স্বর্ণ আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। বিশেষ করে দুবাই থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে এ বিমানবন্দরে বড় বড় স্বর্ণের চালান আটক হয়েছে। এছাড়া, সৌদি আরব থেকে অনেক সময় আসে স্বর্ণের ছোট চালান। তবে, কোভিড পরিস্থিতির কারণে এ বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণের চালান আসা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি করেছে ওই সূত্র।

কাস্টমসের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান রোধে তারা তৎপর রয়েছেন। বিমানে স্বর্ণ চোরাচালান রোধে তাদের গোয়েন্দা তৎপরতাও অব্যাহত আছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৭ বছরের মধ্যে ৪ বছরে উদ্ধার করা হয় দেড় মণ স্বর্ণ। আর বাকী সব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় পরবর্তী তিন বছরে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ওসমানী বিমানবন্দরে ১৮টি স্বর্ণের চালান আটক করে কাস্টমস। এই চার বছরে ১৮ টি চোরাচালানের ঘটনায় ৫৯ দশমিক ১৮ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। আটক স্বর্ণের চালানোর দাম প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। এসব স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০টি। তবে মামলাগুলো এখনো আদালতে বিচারাধীন।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ওসমানী বিমানবন্দর থেকে উদ্ধারকৃত স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ১০০ কেজি। মণ হিসেবে এর ওজন প্রায় আড়াই মণ। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ নভেম্বর দুবাই ফেরত যাত্রী নরেন্দ্র নাথের কাছ থেকে ৬ কেজি ১৪৮ গ্রাম ওজনের ৩৮ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের দাম প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পরে নরেন্দ্র নাথকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। নরেন্দ্র নাথের বাড়ি মৌলভীবাজার এলাকায়।

২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা জামিল আহমদ (২৮) নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে ১৪টি স্বর্ণের বার ও কিছু স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন প্রায় দুই কেজি। যার দাম প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ১২ টি বার বিশেষ ব্যবস্থায় জামিলের উরুতে আটকানো ছিল। জামিলের বাড়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়।

ওসমানী বিমানবন্দরে আবুধাবী থেকে আসা জাহিদ হোসেন নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টম্বর ৪ কেজি ৬৪ গ্রাম ওজনের ৪০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া স্বর্নের দাম প্রায় ২ কোটি টাকা। এরপর জাহিদ হোসেনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে কাস্টমস।

একই বছরের ৩ জানুয়ারি ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাই দুবাই দিয়ে আসা একটি ফ্লাইটে তল্লাশী চালিয়ে ৬০ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন প্রায় ৭ কেজি। যার দাম প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানের মেকানিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট কারিমুল ইসলামকে আটক করা হয়।

২০১৭ সালের ২৩ জুলাই আবুধাবি থেকে আসা বিমানের লাগেজ হোল্ডে অভিযান চালিয়ে ৩ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের ৩০ টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। বিমানের ওই ফ্লাইটটি সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরছিল। স্বর্ণের এই চালান আটকের ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুবাই থেকে আসা বিমানে তল্লাশি চালিয়ে ১৬টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন ১ কেজি ৮৭২ গ্রাম। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।

একই বছরের ১৬ নভেম্বর ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ৮০ টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের দাম প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের আসনের নিচে তল্লাশী চালিয়ে এসব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। দুবাই থেকে আসা ওই বিমানের দুটি সীটের নীচ থেকে কাগজে মোড়ানো অবস্থায় স্বর্ণের বারগুলো উদ্ধার করা হয়। তবে, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

ওই বছরের ১৭ মার্চ ৫৮০ গ্রাম ওজনের ৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায়ও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ২৪ এপ্রিল এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে ৪৩২ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করে কাস্টমস। পরে ব্যাগেজ রুলস মোতাবেক বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ১৯ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে কাস্টমস। এছাড়াও, ১০০ ও ২০০ গ্রাম স্বর্ণ আটক, শুল্কায়ন,ন্যায় নির্ণয়নের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে জানা গেছে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *