Main Menu

‘ভূমিহীন’ বলে পুলিশে চাকরি হচ্ছে না মেধাবী আসপিয়ার

নিউজ ডেস্ক:
বাবার মৃত্যুর পর আসপিয়া ইসলামের পরিবারে আর্থিক টানাপোড়েন শুরু হয়। এর মধ্যেও কষ্ট করে গত বছর এইচএসসি পাস করেন আসপিয়া। স্বপ্ন ছিল পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা আনবেন। সম্প্রতি পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদন করার পর পরীক্ষার সব কটি ধাপে উত্তীর্ণও হয়েছিলেন আসপিয়া।

চাকরির জন্য মনোনীত হওয়ায় আসপিয়ার পরিবারে খুশির জোয়ার বইছিল। কিন্তু হঠাৎই সেই খুশি ফিকে হয়ে গেছে। কারণ, নিজেদের কোনো জমি না থাকায় চাকরিটা পাচ্ছেন না তিনি। এ খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন বরিশালের হিজলা উপজেলার আসপিয়া।

২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হলে সেখানেও উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তাঁর পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করা হয়।

২০২০ সালে আসপিয়া বরিশালের সরকারি হিজলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের এক ব্যক্তির জমিতে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করেন তারা। নদীভাঙনের কবলে পড়ে ১৫ বছর আগে আসপিয়ার বাবা সফিকুল ইসলাম পরিবার নিয়ে ভোলা থেকে হিজলায় আসেন। আসপিয়ারা চার ভাইবোন। তবে বাবার মৃত্যুর পর থেকে আসপিয়ার বড় ভাই এখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই চাকরি করে সংসারের আর্থিক টানাটানি দূর করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।

জমি না থাকায় চাকরি হবে না, এটা জেনেই গত বুধবার সকালে আসপিয়া ছুটে যান বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আকতারুজ্জামানের কার্যালয়ে। চাকরি না হওয়ার কারণ জানার জন্য ডিআইজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আসপিয়া। ডিআইজি তাকে জানান, পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের বিধি অনুযায়ী, প্রার্থীকে অবশ্যই নিজ জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। কিন্তু তার হিজলায় নিজস্ব কোনো জমি নেই। তাই আইন অনুযায়ী তাকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। হতাশ হয়ে আসপিয়া দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বরিশাল পুলিশ লাইনসের মূল ফটকের সামনে বসে থাকেন।

আমি যোগ্যতাবলে সাতটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যে হিজলা থানার ওসি জানান, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনো জমি নেই।-আসপিয়া ইসলাম

আসপিয়া জানান, গত সেপ্টেম্বরে বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে তিনি অনলাইনে আবেদন করেন। এরপর জেলা পুলিশ লাইনসে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। এতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর গত ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া।

২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনসে চিকিৎসকেরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন আসপিয়া। পরে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হলে সেখানেও উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করা হয়। বুধবার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপপরিদর্শক মো. আব্বাস। এর আগেই ভূমিহীন হওয়ায় আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

আসপিয়া বলেন, ‘আমি যোগ্যতাবলে সাতটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যে হিজলা থানার ওসি জানান, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনো জমি নেই। আমরা আরেকজনের জমিতে অনেক বছর ধরে বসবাস করছি। জমি নেই বলে আমার চাকরি হবে না, এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। বুধবার দুপুরে ডিআইজি স্যারের কাছে গিয়ে তাকে সবকিছু খুলে বলেছি। কিন্তু আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি।’

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা আমাকে খুব মর্মাহত করেছে। পরীক্ষায় সবগুলো ধাপ উতরে গিয়েও ভূমিহীন হওয়ার কারণে মেয়েটির চাকরি হবে না, এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’ প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে হলেও মেয়েটিকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আকতারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‌আসপিয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত মেধাবী। তাঁকে পুলিশ বাহিনীতে পাওয়া গেলে ভালো হতো। কিন্তু জেলাভিত্তিক পুলিশে নিয়োগ হয়। এ ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীকে অবশ্যই জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে, এমন বিধান রয়েছে। কিন্তু আসপিয়ার জমি না থাকায় তাঁকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *