নামাজে সতর ঢাকা কেন আবশ্যক
মুফতি আতাউর রহমান:
মুমিনের জন্য সর্বাবস্থায় সতর তথা লজ্জাস্থান আবৃত রাখা আবশ্যক। আর নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য তা শর্ত। নামাজে সতর খোলা থাকলে বা নামাজের সময় সতর প্রকাশ পেলে ব্যক্তির নামাজ হয় না। নামাজে সতর ঢেকে রাখা শর্ত কেন? উপমহাদেশের বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) এর উত্তরে বলেন, ‘পোশাক অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে এবং এর দ্বারা মানবজাতির (আত্মিক) পবিত্রতা প্রকাশ পায়।
অন্যদিকে উলঙ্গ হয়ে নামাজ আদায় করলে তা আল্লাহর মর্যাদা ও সম্মানের পরিপন্থী কাজ হয়। ’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা : ২/৩১২)
ড. কাজিম আল-হুসাইনি নামাজে সতর ঢাকার বেশ কয়েকটি ‘হিকমত’ বা অন্তর্নিহিত কারণ উল্লেখ করেছেন। যেমন :
১. আল্লাহকে লজ্জা করা : লজ্জা মহান আল্লাহর একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। যদিও বান্দার কোনো কিছু আল্লাহর কাছে গোপন নয়, তবু আল্লাহ এটাই পছন্দ করেন যে বান্দা তাঁকে লজ্জা করবে। যেন তাঁর ভেতর লজ্জা ও শালীনতার গুণ বিকশিত হয়। আর নামাজই এর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কেননা নামাজের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়। বাহাজ ইবনে হাকিম (রা.) তাঁর পিতা ও দাদা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের ঢেকে রাখার অঙ্গগুলো কার সামনে আবৃত রাখব এবং কার সামনে অনাবৃত করব? তিনি বলেন, তোমার স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত সবার সামনে তা আবৃত রাখো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের কেউ যখন নির্জনে থাকে? তিনি বলেন, লজ্জার ব্যাপারে আল্লাহ মানুষের চেয়ে অধিক হকদার। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪০১৭)
২. প্রবৃত্তি দমন করা : মানুষকে অপরাধে উদ্বুদ্ধ করে তার ভেতরের কুপ্রবৃত্তি। কুপ্রবৃত্তির অন্যতম দিক ‘শাহওয়াত’ বা জৈবিক চাহিদা; বরং এটি মানুষের দৈহিক ও মানসিক পবিত্রতা নষ্টের প্রধান উপলক্ষ। অনাবৃত লজ্জাস্থান মানুষের ভেতর জৈবিক চাহিদা জাগিয়ে তোলে। আল্লাহ নামাজে লজ্জাস্থান ও সতর ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যেন মানুষ নিজের প্রবৃত্তি ও শাহওয়াত নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। এ ছাড়া আল্লাহ যেহেতু শাহওয়াত থেকে মুক্ত। তাই মানুষ যখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন তার জন্য ‘আলাতুশ শাহওয়াত’ (প্রবৃত্তি পূরণের মাধ্যম) লজ্জাস্থান আবৃত রাখা আবশ্যক।
৩. পবিত্রতার গুরুত্ব : মানবদেহের নাপাকি বের হয় লজ্জাস্থানের মাধ্যমে। পবিত্র সত্তা মহান আল্লাহর সামনে মানুষ যখন দাঁড়াবে, নাপাকি বের হওয়ার স্থানগুলো আড়াল করে রাখবে। এটাই আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদার অনুকূল। কেননা এর মাধ্যমে বান্দার মনে পবিত্রতার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং অপবিত্রতার প্রতি ঘৃণা তৈরি হয়। (আসরারুল ইবাদত, পৃষ্ঠা : ৬৯-৭২)
প্রশ্ন হতে পারে, নামাজে শরীরের এমন অংশও ঢেকে রাখতে হয়, যা নাপাক বের হওয়ার স্থান নয় এবং তা লজ্জাস্থানও নয়। তার পরও কেন সেসব অঙ্গ ঢেকে রাখতে হয়। যেমন পুরুষের উরু এবং নারীর পুরো শরীর নামাজে ঢেকে রাখা আবশ্যক। উত্তর হলো, এগুলো সরাসরি লজ্জাস্থান বা নাপাকি বের হওয়ার স্থান না হলেও, অঙ্গগুলোর সঙ্গে লজ্জা ও ‘শাহওয়াতের’ (প্রবৃত্তি) সম্পর্ক আছে। মানবপ্রকৃতি, সমাজ ও ধর্মগুলো লজ্জা ও শালীনতার এই সীমাকে স্বীকার করে এবং তা রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করে।
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More