Main Menu

দেড় লাখ নিখোঁজ অভিবাসীর সন্ধানে রেডক্রস

নিউজ ডেস্ক:
ইউরোপে অভিবাসনের পথে এবং ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ হয়েছেন লাখো অভিবাসী। ভুক্তভোগীদের সন্ধান পাওয়া তাদের পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে নিখোঁজ অভিবাসীদের ব্যাপারে জানতে ইনফোমাইগ্রেন্টস কথা বলেছে আন্তজার্তিক রেডক্রস কমিটির লুসিল মারবুরের সাথে।

প্রতি বছর কয়েক হাজার নিখোঁজ অভিবাসীদের শনাক্ত ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দেয় আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা রেডক্রস। তাদের হিসাবে এখনও প্রায় দেড় লাখ মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন যাদের সন্ধানে কাজ করে চলেছে সংস্থাটি। ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে ভূমধ্যসাগরসহ বিভিন্ন অভিবাসন পথে নিখোঁজ অভিবাসীদের বিষয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসের সঙ্গে কথা বলেছেন আন্তজার্তিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) আঞ্চলিক প্রতিনিধি দলের মুখপাত্র লুসিল মারবুর।

ইনফোমাইগ্রেন্টস: আইসিআরসি নিখোঁজ অভিবাসীদের সন্ধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কেন?

লুসিল মারবু: এক শতাব্দী ধরে আইসিআরসি নিখোঁজ অভিবাসীদের খুঁজে বের করতে এবং পারিবারিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে কাজ করে আসছে। মূলত রেডক্রসের এই কর্মসূচী প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শুরু হয়েছিল।

আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সাথে তাদের স্বজনদের পারিবারিক পুনঃসংযোগ ঘটাতে এবং ফরেনসিক ওষুধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দক্ষতা অর্জন করেছি। আমরা এই বিষয়ে বিভিন্ন সরকারের পরামর্শদাতার ভূমিকাও পালন করি। কারণ নিখোঁজদের অনুসন্ধানে আমরা সুপারিশগুলির একটি সম্পূর্ণ তালিকা প্রদান, নিখোঁজদের পরিবার শনাক্তকরণ, ফরেনসিক ওষুধের কৌশলগুলিতে প্রশিক্ষণ এবং নিখোঁজদের আত্মীয়দের পক্ষে কথা বলাসহ একটি ধারাবাহিক সেবা দিয়ে থাকি।

২০১৮ সালে, আইসিআরসি বিশ্বব্যাপী সাত হাজার জনকে শনাক্ত করতে সাহায্য করেছে, যেটি ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে গিয়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৪০০ জনে।

গত বছর রেডক্রসের সহায়তায় ৮৪০ জন শিশুসহ প্রায় এক হাজার জন তাদের পরিবারের সাথে পুনরায় মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল।

আমরা এখনও এক লাখ ৪৫ হাজার লোকের সন্ধান করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই নাগরিকদের বড় সংখ্যায় নিখোঁজ হওয়া শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে, আমরা আজও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিচ্ছিন্ন হওয়া লোকদের সাথে তাদের পরিবারের পুনঃসংযোগ স্থাপন প্রত্যক্ষ করছি।

প্রিয়জনকে খুঁজছেন এমন পরিবারের জন্য এটি একটি আশার আলো, আমাদের কখনোই হতাশ হওয়া উচিত নয়।

ইনফোমাইগ্রেন্টস: চলতি সপ্তাহের শুরুতে লিবিয়ার উপকূলে একটি জাহাজডুবির ঘটনায় পাঁচজন নিহত এবং প্রায় চল্লিশজন নিখোঁজ হয়েছেন। এই নিখোঁজ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আইসিআরসি-এর ভূমিকা কী?

লুসিল মারবু: আইসিআরসি আসলে জাহাজডুবির সময় কাজ করে না। আমাদের কাজ পরে সঞ্চালিত হয়। তবে আমরা এমন লোকেদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি যাদের জাহাজডুবির ঘটনায় কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন লিবিয়া ও ইটালির রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা আমাদের থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

বিশেষ করে লিবীয় স্বেচ্ছাসেবকদের জীবিত ও মৃত অভিবাসীদের উদ্ধার থেকে শুরু করে দেহাবশেষের দাফন কাজ শেষ করা পর্যন্ত সকল পদ্ধতি জানার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

সাগর থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সংগ্রহ করা এবং সেগুলি শরীরের সাথে রাখাসহ মৃতদেহের স্বতন্ত্র উপাদানগুলি লিপিবদ্ধ করার পর দাফনের অনুমতি দেয়া হয়। এছাড়া খুব দ্রুত ভুক্তভোগীকে সরকারি রেজিস্টারে নথিভুক্ত করা হয়েছে কিনা সেটিও যাচাই করা হয়।

এই সমস্ত তথ্য অত্যাবশ্যক কারণ এটি আমাদেরকে নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের সাথে মৃতদেহ শনাক্ত করতে সহায়তা করে।

তবে এক্ষেত্রে একটি প্রধান অসুবিধা হলো কোন মৃতদেহ বেনামে দাফন করা হলে শুধু তাদের পরিবারই ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত করার জন্য সহায়তা করতে পারে। এছাড়া, নিখোঁজ ব্যক্তিরা প্রায়শই তিনটি মহাদেশে (এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা) থেকে আসায় কখনও কখনও তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা বেশ কঠিন হয়ে উঠে।

ইনফোমাইগ্রেন্টস: নিখোঁজ পরিবারগুলোর পরিণতি কী?

লুসিল মারবু: আমরা প্রায়ই পরিবারগুলোর মনস্তাত্ত্বিক এবং মানসিক কষ্টের কথা বলি। এটা সত্যিই বেদনাদায়ক। কারণ তাদের পরিবার জানেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মৃত নাকি এখনও জীবিত।

এছাড়া পরিবারগুলোর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে খুব কম কথা বলা হয়। একজন নিখোঁজ ব্যক্তি যদি একটি পরিবারের প্রধান অর্থ যোগানদাতা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তাদের পক্ষে পরিবার সামলে নেয়া অসম্ভব হয়ে উঠে। সংশ্লিষ্ট পরিবারটি আর্থিকভাবে আরও বঞ্চিত হতে থাকেন।

তার উপর, একজন ব্যক্তির অন্তর্ধান প্রক্রিয়া কয়েক দশক ধরে চলতে পারে। তার সাথে জড়িতদের প্রশাসনিক মর্যাদার প্রশ্ন উঠতে পারে; কখন একজন স্ত্রীকে বিধবা বলে গণ্য করা হবে কিংবা সে কি তার মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে আসলে ভাগ পাবে কি না, এমন অনেক প্রশ্নই সচরাচর উঠে আসে।

এই কারণেই, রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট নিখোঁজদের পরিবারগুলোকে মানসিক সহায়তা দিতে স্থানীয় অভিবাসী কমিউনিটিতে মনো-সামাজিক কর্মশালা এবং আর্থিক সহায়তা (প্রশিক্ষণ,ক্ষুদ্রঋণ ইত্যাদি) প্রদানের মাধ্যমে বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একটি পরিবারের সবচেয়ে প্রধান চাহিদা বিবেচনায় নেয়া।

ইনফোমাইগ্রেন্টস: অভিবাসন রুটে থাকা অভিবাসীদের আপনি কোন পরামর্শটি দিতে চান?

লুসিল মারবু: আমরা লক্ষ্য করেছি, সীমান্ত অতিক্রম করার সময় অনেক লোক তাদের প্রিয়জন ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। রুটে অন্য অভিবাসীদের সাথে সংঘবদ্ধ থাকা এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রায়শই, কর্তৃপক্ষ নিজেরাই সীমান্তে থাকা পরিবারগুলিকে আলাদা করে। এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সরকারগুলোকে সুপারিশ করি৷

অভিবাসীরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য অনেকগুলি কাজ করতে পারে; তাদের পরিবারের সাথে নিয়মিত কথা বলা, তারা যে দেশে যেতে চান এবং যে দেশে অবস্থান করছেন সে সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা, পরিবারের সদস্যদের টেলিফোন নম্বর এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড মুখস্থ রাখা। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন ড্রাইভ কিংবা মেইলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নথিভুক্ত করে রাখাও সহায়তা করতে পারে। সূত্র: ইনফোমাইগ্রান্টস।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *