Main Menu

মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব কবরস্থানে প্রথম দাফন

বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক:
মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাস ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির সহযোগিতায় কেনা কবরে প্রথম বাংলাদেশির মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ধরে মিশরে বেশ কিছু বাংলাদেশি বসবাস করছে। স্বাভাবিকভাবেই, দেশটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মধ্যেও কেউ কেউ রোগে-ভুগে মৃত্যুবরণ করেন। প্রবাসীদের মধ্যে যারা মিশরে মৃত্যুবরণ করেন তাদের স্থানীয়ভাবে দাফনের কোনো ব্যবস্থা এতদিন ছিল না।

ফলে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কমিউনিটিকে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হতো। বেশি টাকা জোগাড় করে তাদের মরদেহ স্বদেশে পাঠানো হতো। কিন্তু টাকার সংকুলান না হলে কিংবা স্থানীয়ভাবে দাফনে সমস্যা হলে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতো। এর আগে দুই বাংলাদেশির মরদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব হয়নি বিধায় তাদের মিশরীয়দের কবরস্থানে দাফন করতে হয়ছে। যা, মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছে পছন্দনীয় হয়নি।

এই দুরবস্থার অবসানকল্পে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম প্রবাসীদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ শুরু করেন। কবরস্থান কেনার জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় রাষ্ট্রদূতের অনুরোধে মিশরে প্রবাসীদের মধ্যে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) একজন দানশীল ব্যক্তি এই মহতী কাজে এগিয়ে আসেন ও তার সম্মতিতে এবং রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশিদের জন্য নিজস্ব একটি কবরস্থান কেনার সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর শুরু হয় মিশরে বিভিন্ন স্থানে সরকারিভাবে নির্ধারিত ও নির্মিত বিশালাকার কবরস্থানের পাশে বাংলাদেশিদের জন্য একটু খানি জমি ক্রয়ের কাজ। রাজধানী কায়রো শহরে নিকটবর্তী উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমের উপশহরগুলোতে অবস্থিত কয়েকটি কবরস্থান পরিদর্শন শেষে বিভিন্ন এলাকা সম্ভাব্যতা যাচাই এবং মূল্য বিবেচনা করে কায়রো মহানগরীর র্পূবদিকে সরকারিভাবে নির্ধারিত উবুর এলাকায় অবস্থিত কবরস্থানে বাংলাদেশিদের জন্য ৬০ বর্গমিটার মাপের একটি কবরস্থান ক্রয় করা হয়।

প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশিদের আমাদের দেশের রীতি অনুযায়ী ও ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে প্রবাসীদের মরদেহ দাফন করা সম্ভব হবে। গত ১২ মে বরিশাল জেলার আবুল কালাম আজাদ নামে এক মিশরপ্রবাসী বাংলাদেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কায়রোস্থ নসর সিটি হাসপাতালে মৃত্যবরণ করেন।

আজাদ পোশাক শিল্পের শ্রমিক হিসেবে কাজ নিয়ে ২০১২ সালে মিশরে আসেন। নিজস্ব দোকান দিয়ে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তার একমাত্র ছেলে ইকরামা ফাইয়াদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলামের নির্দেশে জানাজা ও সকল আনুষ্ঠানিকতার পর ১২ মে লাশ দাফন করা হয়।

এসময় মৃত ব্যক্তির পরিবার, নাসর সিটিতে বসবাসরত প্রবাসী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

মিশরে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগঠনের সাবেক সভাপতি শরিফ উদ্দিন আব্দুল মান্নান বলেন, দেশটিতে কোনো প্রবাসী মৃত্যুবরণ করলে বাংলাদেশে মরদেহ পাঠানোর বিড়ম্বনার শেষ ছিল না। মৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও এদেশের আইনি জটিলতা ও মরদেহ বহনের অতিরিক্ত বিমান ভাড়া জোগাড়, সব মিলিয়ে দিনের পর দিন এমন কি কখনো কখনো মাসের পর মাস প্রবাসীর লাশ পড়ে থাকত হাসপাতালের মর্গে।

বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলামের আপ্রাণ চেষ্টায় বাংলাদেশিদের জন্য কেনা নিজস্ব কবরস্থানে মৃত প্রবাসী আবুল কালাম আজাদের মরদেহ রীতি অনুযায়ী দাফন করা হয়।

মিশরে বাংলাদেশি সবজি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘তাজা এগ্রো’র কর্ণধার আলমগীর হোসেন বলেন, এদেশে কোনো প্রবাসী মৃত্যুবরণ করলে বিভিন্ন জটিলতায় দেশে লাশ পাঠানো অনেক বিলম্বিত হত। এই দেশের আইনি জটিলতা ছাড়াও মৃত্যু ব্যক্তির আর্থিক সচ্ছলতা না থাকা, দেশে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ, লাশ বহনের মাত্রাতিরিক্ত বিমান ভাড়া জোগাড়, সব মিলিয়ে দিনের পর দিন এমন কি কখনো কখনো মাসের পর মাস প্রবাসীর লাশ পড়ে থাকতো হাসপাতালের মর্গে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানাই। তার আপ্রাণ প্রচেষ্টা ও নাম প্রকাশে একজন প্রবাসীর দানে বাংলাদেশিদের জন্য নিজস্ব কবরস্থানে মৃত প্রবাসী আবুল কালাম আজাদের মরদেহ রীতি অনুযায়ী দাফন করার জন্য। এরই মধ্যে আমরা এই কবরস্থান কেনার সফলতা অনুভব করছি। আমাদের রাষ্ট্রদূত মিশর প্রবাসীদের মনের কথা বুঝতে পেরেছেন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *