মাদকের সাথে সম্পৃক্ত ১০ ব্যক্তি উপর নবীজির (সা:) বদদোয়া
মুফতি বুরহান উদ্দিন আব্বাস, অতিথি লেখক:
মদ, নেশাজাত দ্রব্য সেবন ও সর্বপ্রকার সম্পর্ককে ইসলাম হারাম করেছে। এগুলো থেকে দূরে থাকার বারবার তাকিদ দিয়েছে। আমাদের সমাজকে নেশার মরণ ছোবল থেকে রক্ষার একমাত্র পথ ধর্মীয় অনুশাসন নিশ্চিত করা। ইসলামের নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রসার ঘটানো।
মদ ও মাদকের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কোরআন হাদিসে বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। এখানে কিছু হাদিস ও কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে যাবে না- উপকার করে খোঁটা দেওয়া লোক, অবাধ্য সন্তান আর মদ্যপ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৫৮৭)
মদ্যপায়ীর জন্য জান্নাত হারাম
নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির লোকের জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। ১. মদপানে অভ্যস্ত ২. মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান ৩. দাইয়ূস— পরিবারে অশ্লীলতার সুযোগ দানকারী।’ (নাসাঈ, হাদিস : ৩৬৫৫)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মদ সেবন করতে পারো না। কেউ একজন বলল, হে আল্লাহর রাসুল, এটি তো ওষুধ! জবাবে নবীজি (সা) বললেন- ‘না, বরং এটি রোগ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭৩)
আজ যারা অল্প মদ খাইয়ে যুবকদের আরও জঘন্য মাদক থেকে রক্ষার বুদ্ধি ফেরি করেন— তাদের এ হাদিস বারবার পড়া উচিত।
অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে নেশাজাত বস্তু বেশি সেবনে নেশা হয়, তা সামান্য পরিমাণ সেবনও হারাম। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৬৫)
আরেকটি হাদিসের ভাষ্য— প্রত্যক নেশার জিনিস মাদকদ্রব্য এবং সকল নেশার জিনিসই হারাম। (মুসলিম, হাদিস : ৩৭৩৪)
মেরাজের রাতে নবীজির সামনে দুটি পেয়ালা রাখা হলো। একটিতে দুধ অপরটিতে মদ। নবীজিকে যে কোনোটি গ্রহণের অবকাশ দেওয়া হলো। নবীজি দুধের পেয়ালা হাতে নিলেন। তখন সাথে সাথে বলা হলো- আপনি মদ নিলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৪)
মদ জঘন্য রকমের ক্ষতিকারক
বুখারির ভিন্ন বর্ণনায় মদ সেবনের আধিক্যকে কেয়ামতের আলামত বলা হয়েছে। সুতরাং দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় স্হানেই মদ জঘন্য রকমের ক্ষতিকারক। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টা চাক্ষুষ হয়- মানবীয় অপরাধ, পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় ও বিপর্যয়ের অন্যতম নিয়ামক হলো মাদকতা, অশ্লীলতা ও জুয়া। আধুনিক সভ্যতার সকল অবক্ষয়ের মূল বিষয়ও এগুলো। মদ, মাদকতা, মাদকাসক্তি, মদ-নির্ভরতা এ সময়ের ভয়ঙ্করতম ব্যধিগুলোর অন্যতম। ফলে দৈহিক, মানসিক, লিভার সিরোসিস সহ নানান মরণব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশ্বে অগণিত দক্ষ ও সফল মানুষের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে মাদকতা। সভ্যতার ইতিহাস ও সুস্থরুচির সকলেই তা স্বীকার করছে। আর এ জন্যই ইসলাম মদ ও মাদকতা হারাম ঘোষণা করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্যনির্দেশক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ, তোমরা এসব বর্জন করো- যাতে সফল হতে পারো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৯০)
মাদক থেকে বেঁচে থাকা কতোটা কল্যাণের তা একজন মাদকসেবীর করুণ পরিণতির দিকে তাকালে সহজে উপলব্ধি করা যায়। মাদক সেবনের ভয়াবহতা উঠে এসেছে পরবর্তী আয়াতে। আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর জিকিরে ও নামাজে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না? (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৯১)
আয়াত দুটোতে মাদকের যে মৌলিক ও নৈতিক উপদেশ ও নিষেধাজ্ঞা বিবৃত হয়েছে— ১. মাদক গ্রহণ গুনাহে কবিরা বা জঘন্যতম খারাপ কাজ। ২. এটা মূর্তিপূজা ও লটারির মতো শয়তানি। ৩. মাদক পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। ৪. এটি মানুষকে আল্লাহ বিমুখ করে তুলে, আল্লাহর জিকির থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। ৫. নামাজ আদায় করা থেকে বিরত রাখে।
মাদকের সাথে সম্পৃক্ত দশ ব্যক্তিকে অভিশাপ
মাদকের শেকড় নির্মূলে নবীজি (সা) সুস্পষ্ট বলেছেন – ইবনে উমর (রা.) নবীজি (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মাদকের সাথে সম্পৃক্ত দশ ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন; মদ উৎপাদনকারী, উদপাদনের আদেশদাতা, মদ সেবনকারী, বহনকারী, যার জন্য মদ বহন করা হয়, মদ পরিবেশনকারী, মদ বিক্রতা, মূল্য গ্রহণকারী, মদ ক্রেতা এবং যার জন্য মদ কেনা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)
নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমরা মদ-মাদকদ্রব্য বর্জন করবে ; কারণ তা হলো সকল অকল্যাণ ও ক্ষতির উৎস।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩৩৬২)
মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ – প্রথমত, ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় অনুশাসনকে উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছেমতো চলাফেরা ও খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, অশ্লীল বই ও পত্র-পত্রিকা, অবাধ স্যাটেলাইট তথা ডিশের ব্যবহার, মোবাইল, ইন্টারনেট ও ফেসবুকে অশ্লীল ছবি আদান-প্রদান, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার লোকেরা মাদকাসক্তিতে প্রভাবিত হচ্ছে। তৃতীয়ত, মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং মানুষকে এর প্রতি ঘৃণাবোধ সৃষ্টির নৈতিক ভিত্তির অভাব।
আল্লাহর ভয় ও আখেরাতে জবাবদিহিতার চেতনায় যার বিশ্বাস অবিচল, তার দ্বারা অন্যায়-অনৈতিক কাজ হতে পারে না। আল্লাহ আমাদের আলেয়া নয় আলোর পেছনে ছুটবার তাওফিক দিন। আমিন।
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More