পানি শুকিয়ে মাছ শিকার, হুমকিতে লাল শাপলার বিল
নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লাল শাপলা বিলখ্যাত কেন্দ্রী বিলের পানি সেচ করে ৩০ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করে নিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। ফলে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষনীয় এই বিলের লাল শাপলা হুমকির মুখে পড়েছে।
বিলের পানি সেচ করায় কেন্দ্রী বিলের লাল শাপলা ধ্বংস হওয়ার আশংকা করছেন পরিবেশ কর্মীরা। লাল শাপলা বিলের মাছ ধরার সাথে জনপ্রতিনিধি, শাপলা বিল সংরক্ষণ কমিটি, স্থানীয় সংবাদকর্মী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জড়িত বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রী, হরফকাটা ও ইয়ামবিলে প্রচুর পরিমাণে লাল শাপলা ফুল ফুটে। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে এই লাল শাপলা বিলের ছবি সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ায় তা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক প্রতিদিন লাল শাপলা বিলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। লাল শাপলা বিলকে সিলেট জেলা ব্রান্ডিং হিসেবে ব্যবহার করছে জেলা প্রশাসন।
এক সময় এই বিলগুলো তপশিলভুক্ত ছিল বলে ইজারা প্রদান করা হতো। লাল শাপলা সংরক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন গত পাঁচ বছর থেকে ইজারা বন্ধ করে দেন। ফলে প্রতি বছর বিলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে লাল শাপলা ফুল ফুটে। বিগত দিনে বিল ইজারা না দেওয়ায় এবং মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় বিলে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ বৃদ্ধি পায়।
সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শাপলা বিলের চতুর্দিকে বাধ নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে তার কাজ শুরু হয়। জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদের তত্বাবধানে কাজ শুরু হওয়ার পরে বিলের পানি কমানো হয়।
জানা যায়, বাধ নির্মাণের কাজ চলাকালে শাপলা বিল সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ ও স্থানীয় এক সংবাদকর্মী বিলের সম্পূর্ণ পানি সেচ করে ত্রিশ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করেন। বর্তমানেও মাছ বিক্রি অব্যাহত রয়েছে এবং প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গাড়ীভর্তি মাছ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। পানি শুকিয়ে ফেলার কারণে বিলের লাল শাপলা হুমকিতে পড়েছে। এতে শাপলা বিলে আগামী মৌসুমে শাপলা ফুল নাও ফুটতে পারে এমন আশংকা করা হচ্ছে।
এছাড়া এই বিলে শীত মৌসুমে অতিথি পাখির সমাগম ঘটলেও পানি শূন্য বিল থেকে সরে গেছে পাখিরা।
লাল শাপলা বিল সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদকে খাস কালেকশন এর এক লক্ষ টাকা দিয়ে আমরা মাছ শিকার করেছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সালাউদ্দিনের টাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি তো এই ভূমির মালিক নই। আমাকে কেন তারা টাকা দেবে, হয়ত অন্য কারো সাথে লেনদেন হয়েছে আর ভূলক্রমে আমার নাম উঠে আসছে।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ জানান, বাঁধ নির্মাণের জন্য তিনি বিলের এক হাত পানি কমিয়েছেন। পরে শাপলা বিল সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ মিলে প্রশাসনের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা দিয়ে খাস কালেকশন এর নামে বিল সেচ করে মাছ ধরছেন বলে তিনি শুনেছেন।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) রিপামনি দেবী জানান, লাল শাপলা বিল খাস কালেকশনের জন্য কাউকে দেয়া হয়নি। যদি কেউ মাছ ধরে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শাপলা বিল সিলেটে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। পানি সেচ করে মাছ লুট করে যারা বিলের পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
Related News
মাধবপুরে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ পাবলিক লাইব্রেরি
মাধবপুরে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ পাবলিক লাইব্রেরি বছরের পর বছর ধরে বন্ধ থাকায় হবিগঞ্জের মাধবপুরRead More
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ আরব উপদ্বীপের দেশ কুয়েত থেকে কফিনে করেRead More