বিলাল রা. বিশেষ যে আমল করতেন
বিলাল রা. বিশেষ যে আমল করতেন
হজরত বিলাল রা. ইসলামের বিখ্যাত সাহাবিদের একজন। তিনি রাসূল সা.-এর মুয়াজ্জিন হিসেবে বিশ্ব মুসলিমের কাছে ব্যাপক পরিচিত। মদিনায় হিজরতের পর যখন নামাজের জন্য আজানের প্রচলন হলো, তখন রাসূল সা. বিলাল রা.-কে আজানের শব্দগুলো শিখিয়ে দিয়ে বললেন, বিলাল যাও, আজান দাও।
তাঁর সুললিত কণ্ঠের আজান মুগ্ধ করতো মুসলমানদের। তাঁরা তন্ময় চিত্তে শুনতেন বিলালে রা.-এর আজান। তিনি ছাড়াও রাসূল সা.-এর আরও বেশ কয়েকজন মুয়াজ্জিন ছিলেন। তবে তিনিই ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন এবং মুসলিমদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত।
মদিনার বাইরেও বিভিন্ন সফরে তিনি রাসূল সা.-এর মুয়াজ্জিন ছিলেন। ইসলামের প্রধান প্রধান সব যুদ্ধেই তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি রাসূল সা.-এর সঙ্গে ছিলেন এবং এ দিন তিনি কাবার ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে আজান দিয়েছিলেন।
রাসূল সা.-এর ওফাতের পর তিনি মদিনা ছেড়ে চলে যান এবং সিরিয়ায় বসবাস শুরু করেন। হজরত ওমর রা. বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের সময় বিলাল রা. তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এই সফরে ওমর রা. তাঁকে আজান দিতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আমি অঙ্গীকার করেছিলাম রাসূল সা. এর পরে আর কারো জন্য আজান দিবো না তবে আজ আপনার ইচ্ছা পূরণ করবো।
একথা বলে তিনি এমন হৃদয়গ্রাহী স্বরে আজান দিলেন, যা উপস্থিত সবার হৃদয়কে আন্দোলিত করলো। দীর্ঘদিন পর রাসূলের মুয়াজ্জিন বিলাল রা.-এর কণ্ঠে আজান শুনে ওমর রা. আবেগে কেঁদে ফেললেন। কান্নায় তার গলা আটকে এলো। তিনি বাক রুদ্ধ হয়ে গেলেন। হজরত আবু উবাইদা ও হজরত মুয়াজ বিন জাবাল রা.ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। সবার মনেই নবী-যুগের মদিনার ছবি ভেসে উঠেছিল।
সিরিয়ায় বসবাসের সময় বিলাল রা. একদিন স্বপ্নে রাসূল সা. দেখলেন। তাৎক্ষণিক তিনি মদিনায় রাসূল সা.-এর রওজা জিয়ারতে উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। মদিনায় গিয়ে রাসূল সা.-এর নাতি হাসান ও হুসাইন রা.-এর সঙ্গে দেখা হলো তাঁর। তিনি তাঁদের জরিয়ে ধরে স্নেহ করলেন।
হাসান ও হুসাইন রা. তাঁকে ফজরের আজান দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। তিনি তাঁদের অনুরোধ ফিরিয়ে দিতে পারলেন না। মসজিদে নববীর ছাদে দাঁড়িয়ে আজান দেওয়া শুরু করলেন। তাঁর সুললিত কণ্ঠস্বর মদিনার অলিগলিতে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। দীর্ঘদিন পর মদিনার লোকজন আবারো রাসূল সা.-এর যুগের আজানের ধ্বনি শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বললেন তখন মদিনার নারী পুরুষেরা অস্থির হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মসজিদের দিকে দৌঁড়াতে শুধু করেন।
বিলাল রা.-কে রাসূল সা. অনেক পছন্দ করতেন। তার বিশেষ একটি আমল ছিল যা তাকে অনন্য মর্যাদা দান করেছে এবং তার এই আমলটি বিশ্ব মুসলিমের জন্য অনুসরণীয়। সেই আমলটি হলো সব সময় অজু অবস্থায় থাকা।
এ আমলের কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে ভ্রমণের সময় বিলাল রা.-এর জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন।
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত বিলালকে রা.-কে বললেন, তোমার সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে আমাকে বলো, আমি জান্নাতে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। বেলাল রা. বললেন, আমার সর্বোত্তম আমল হলো, আমি রাতে ও দিনে অজু অবস্থায় থাকি। আর যখনই অজু করি তখনই সাধ্যমতো নামাজ আদায় করি।’ (কানজুল উম্মাল : ৩৫৪৫৪)
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More