জন্মদিন পালন নিয়ে ইসলামে যা বলা হয়েছে
জন্মদিন পালন নিয়ে ইসলামে যা বলা হয়েছে
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলেছে। পৃথিবী পাল্টে গেছে। প্রতিনিয়ত এখানে প্রতিযোগিতা চলছে। মানুষ নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য লড়াই করছে। পূর্বের যুগ আর বর্তমানের মানুষের চিন্তা-ভাবনা, জীবনযাপন, উৎসব আয়োজন সবকিছুতে পরিবর্তন ঘটেছে। এই সময়ে এসে মানুষের ভেতর উৎসব প্রবণতা বেড়েছে। যেকোনো উপলক্ষ ঘিরে মানুষ আমোদে মেতে উঠতে ভালোবাসে।
উৎসব আয়োজনে মুখর হতে নিত্য-নতুন পদ্ধতি অবলম্বনের চেষ্টা করেন সবাই। এক্ষেত্রে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর উদযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেখা যায় অনেককে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে বিয়ে, বিভিন্ন বর্ষপূর্তি, জন্মদিন পালনের উপলক্ষ এখন অনুসরণ করেন সবাই।
বর্তমান সময়ে এসে জন্মদিন পালনের প্রবণতা বেড়েছে ব্যাপকহারে। জন্মদিন পালন করেন না, অথবা জন্মদিনে বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনের কাছ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পান না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া একটু কঠিনই বলা যায়।
জন্মদিনের উৎসব-আয়োজন থেকে কেউ দূরে সরে থাকতে চাইলেও শুভাকাঙ্খীদের আন্তরিকতায় তা সম্ভব হয়ে উঠে না অনেক সময়। তবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে আগ্রহীদের এই প্রবণতা থেকে বেঁচে থাকা এবং থাকার চেষ্টা করা উচিত।
কারণ, ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা জন্মদিন পালনকে বৈধ বলেন না। তাদের মতে, জন্মদিন পালন করা জায়েজ নয়। কারণ, একজন মুসলিম-মুমিনের যেকোনো কাজ বা পদক্ষেপের আগে এ বিষয়ে ধর্মীয় বিধান জেনে রাখা জরুরি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে কী বলেছেন, কী করেছেন তা জানা জরুরি।
আর আল্লাহর রাসূল সা. ও সাহাবিদের জীবনী দেখলে জন্মদিন পালনের কোনো নজির পাওয়া যায় না। ইসলামে জন্মদিন পালনের কোনো নিয়ম নেই। ইসলামে যদি জন্ম দিন পালনের নিয়ম থাকত, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম রা., তাবেয়ি, তাবে তাবেইনদের থেকে এটি পালনের প্রমাণ মিলত। তারা জীবনে কখনো জন্মদিন পালন করেননি, এমনকি কারো কারো জন্মসন জানা গেলেও কোন মাসের কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন তা অবধি জানা যায়নি।
আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা. রবিউল আওয়াল মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন এটা নিয়েও রয়েছে মতভেদ। বিধায় জন্মদিন পালন জায়েজ বলেন না আলেমরা।
আলেমদের মতে, জন্মদিন পালন বিজাতীয় কালচারের অন্তর্ভুক্ত। আর রাসূল সা. বিজাতীয় অনুকরণে নিরুৎসাহিত করছেন। এক হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩)
অন্যদিকে জন্মদিনকে কেন্দ্র করে কখনো কখনো অপচয় ও অপব্যয় করতে দেখা যায়। ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় নিষিদ্ধ। অপচয় নিষিদ্ধ করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না…।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ৩১)
মূল কথা ফেকাহবিদ আলেমদের মতে, যদি জন্মদিন এমনভাবে পালন করা হয় যে সেখানে নাচ-গান, বেগানা ছেলে-মেয়ের ফ্রি মিক্সিং থাকে, তাহলে সেটা অবশ্যই হারাম। কিন্তু যদি কেক কাটা, নাচ-গান বা ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো কাজে লিপ্ত না হয়ে সাধারণভাবে জন্মদিনে আনন্দভাব বা ভালো খাবার খায়, তাহলে তা দূষণীয় নয়।
একজন মুমিনকে মনে রাখতে হবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের হিসাব নেবেন আল্লাহ তায়ালা। হাশরের মাঠে পৃথিবীতে করা প্রত্যেকটি আমলের হিসাব দিয়েই পার পেতে হবে। হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে যে প্রশ্নটির মুখোমুখি হতে হবে সবাইকে তাহলো— পৃথিবীর জীবন কীভাবে কাটিয়েছে, কীভাবে জীবনযাপন করেছে। এজন্য প্রত্যেক কাজ ভেবে চিন্তে করতে হবে।
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More