Main Menu

গুনাহ থেকে বাঁচার ১০ কৌশল

নুরুদ্দীন তাসলিম:
মানুষের প্রতি হিংসা ও আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণে অভিশপ্ত হয়েছে শয়তান। এক সময় যে আল্লাহ তায়ালার কাছের একজন ছিল, এখন সে মানুষকে আল্লাহর কাছ থেকে দূর সরানোর সব ফন্দি আঁটে। মানুষকে গুনাহ ও পাপে লিপ্ত করতে পারলেই সে নিজেকে সফল মনে করে।

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

সে (শয়তান) বলল, ‘সে দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদের (আদম সন্তানকে) পুনরুজ্জীবিত করা হবে।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।’ সে (শয়তান) বলল, ‘যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে তাদের সামনে থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে, তাদের বাম দিক থেকে উপস্থিত হব। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৪-১৭)

তবে শয়তান মানুষকে যতই ধোঁকা দিক এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত করুক, বান্দা আল্লাহর কাছে তওবা করলেই তিনি সব মাফ করে দেন, মানুষের সব পাপ মুছে তাকে একেবারে নিষ্পাপ বানিয়ে দেন।

এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন– ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। -(মুসলিম, ২৭৪৮)

গুনাহ হয়ে গেলে তাই মানুষের উচিত সাথে সাথে তওবা করে নেওয়া। হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর দরবারে ‘তওবা’ করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; আমিও প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি।’ -(বুখারি, ২৭০২)

এর পাশাপাশি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার পথ-পন্থা অবলম্বন করা উচিত সবার। এমন ১০টি কৌশল তুলে ধরা হলো এখানে-

নিয়ত করা (গুনাহের সুযোগ পেলেও গুনাহ করবো না)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোন বান্দা একটি পাপ করে বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি পাপ ক্ষমা করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন।’ অতঃপর সে আবার পাপ করল এবং বলল, ‘হে আমার রব! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি পাপ ক্ষমা করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন।’ আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সুতরাং সে যা ইচ্ছা করুক।’ (সহীহুল বুখারী : ৭৫০৭; সহীহ মুসলিম : ৭১৬২)

সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বেহেশতের চাবি হচ্ছে নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো অজু’। (মুসনাদে আহমাদ-৩ : ৩৪০ পৃ.)

অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করা

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল।’ (সুরা-৭১ নূহ, আয়াত: ১০)।

গুনাহের পরিবেশ পরিবর্তন করা

মানুষের ওপর পরিবেশের প্রভাব পড়ে। যেমন কেউ মসজিদে গেলে তার অন্তরে আল্লাহ-রাসুলের প্রতি ভালোবাসা বাড়ে। কবরস্থানে গেলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। আবার কোথায় আড্ডা দিতে গেলে এসব ভুলে যায়, তখন ফুর্তিতে মেতে ওঠে। তাই কোনও জায়গায় গুনাহের পরিবেশ থাকলে সেই স্থান ত্যাগ করে ভালো পরিবেশে যাওয়া উচিত।

প্রত্যেক কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা

হাদিসে বলা হয়েছে, ‘ গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া না হলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪/৩২৯; রওজাতুল মুহাদ্দিসিন : ৬৪৫)

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহর নামে, আল্লাহ তাআলার ওপরই নির্ভর করলাম, আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “যদি কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, তবে তাকে বলা হয় (আল্লাহ তাআলাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, তুমি হেফাজত অবলম্বন করেছ (অনিষ্ট থেকে)। তাতে শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪২৬)

সর্বদা জিকিরে কলবী (মনে মনে জিকির) করা

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : তোমরা নিজ পালনকর্তাকে ডাকো বিনীতভাবে ও সংগোপনে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)

ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়া

মহানবী (সা.) বলেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭)

রাসুল (সা.) আরেক হাদিসে বলেন, ‘এমন কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের আগের নামাজ আদায় করে।’ অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামাজ। (মুসলিম, হাদিস : ১৩২২)

জবানের হেফাজত করা

হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রসুলে কারিম (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর আজাব-গজব থেকে নাজাতের উপায় কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি তোমার জবান হেফাজত করো, গুনাহর জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করো এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৬৯)

প্রত্যেক নামাজের পরে নিম্নোক্ত আয়াতের দুই থেকে পাঁচ মিনিট মোরাকাবা (ধ্যান, গভীর চিন্তা) করা

وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ

(তোমরা যেখানেই থাকো না কেন আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে আছেন, সুরা হাদিদ, আয়াত, ৪)






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *