জার্মানি থেকে শরণার্থীদের নিজ দেশে টাকা পাঠানোর হার কমেছে
জার্মানি থেকে শরণার্থীদের নিজ দেশে টাকা পাঠানোর হার কমেছে
জার্মানিতে থাকা শরণার্থীদের মধ্যে নিজ দেশে বা বিদেশে অর্থ পাঠানোর সংখ্যা এক দশকে ১৩ শতাংশ থেকে কমে সাত শতাংশ নেমেছে৷ জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চ (ডিআইডাব্লিউ)-এর একটি সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে৷
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নিয়মিত অভিবাসী হিসাবে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে বিদেশে অর্থ পাঠানোর হার এই সময়ের ব্যবধানে আট শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ শতাংশ হয়েছে৷
জার্মানিতে বসবাসকারী শরণার্থীদের মধ্যে মাত্র সাত শতাংশ ২০২১ সালে বিদেশে অর্থ পাঠিয়েছেন৷ জার্মানির বাইরে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে এটিকে একটি বড় ধরনের পতন হিসাবে দেখছে সমীক্ষাটি৷
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চ ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সব ধরনের অভিবাসীদের বিদেশে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করেছে৷ এতে দেখা গেছে, শরণার্থীরা অন্যান্য অভিবাসীদের তুলনায় জার্মানির বাইরে খুবই কম অর্থ পাঠান৷
পারিবারিক জরিপের ভিত্তিতে সমীক্ষাটি বলছে, যেসব শরণার্থীরা নিজ দেশে বা বিদেশে অর্থ পাঠায় তাদের অনুপাত ১৩ শতাংশ থেকে কমে সাত শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ এদিকে, বিদেশে অর্থ পাঠানো নিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা আট থেকে বেড়ে ১২ শতাংশ হয়েছে৷
ডিআইডব্লিউ-এর মতে, অর্থ পাঠানোর প্রবণতা যত বাড়বে জার্মানিতে পরিবারের সংখ্যা তত কমবে এবং অর্থ পাঠানোর প্রবণতা কমার অর্থ হচ্ছে অভিবাসীদের মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগ্রহও কমতে থাকবে৷
রেমিট্যান্স প্রবাহ
অভিবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে এই প্রথম বৈজ্ঞানিক এবং ডেটাভিত্তিক গবেষণা করেছে ডিআইডাব্লিউ৷ সংস্থাটি অভিবাসীদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন৷ একদিকে আছেন শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থীরা৷ অর্থাৎ যে ব্যক্তিরা নিপীড়ন, সংঘাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন৷ অন্যদিকে আছেন সাধারণ অভিবাসীরা৷ অর্থাৎ যারা যারা কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা পারিবারিক পুনর্মিলনের উদ্দেশে নিজ দেশে ছেড়ে অন্য দেশে এসেছেন৷
সমীক্ষায় দেখা গেছে, একজন মানুষের অভিবাসনের ইতিহাস এবং অভিবাসন রুট তারা যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন সেই দেশের সমাজে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার ইচ্ছাকেও প্রভাবিত করে৷ একইসঙ্গে তাদের নিজ দেশে অর্থ পাঠানোর কারণ এবং সক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে৷
গবেষণায় উঠে এসেছে, দুর্দশার শিকার হয়েই সীমিত সংস্থান নিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন অভিবাসীরা৷ এসব কারণে সমাজে অঙ্গীভূত হওয়া, কাজ পাওয়া, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা তাদের জন্য আরো কঠিন হয়ে উঠে৷ যেসব শরণার্থী নিজ দেশে বা বিদেশে টাকা পাঠায়, তাদের বেশিরভাগই তার রেখে আসা পরিবারের ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে চান৷
বিপরীতে, নিয়মিত অভিবাসী এবং বিদেশে যারা বিভিন্ন কর্মসংস্থানে যুক্ত আছেন তাদের পক্ষে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সংহত হওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনাও বেশি৷
জার্মানির ফেডারেল ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জার্মানি থেকে বার্ষিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ দুই হাজার দুইশ কোটি ইউরো, যা ইউরোপে সর্বোচ্চ৷
রাজনৈতিক বিতর্কের সঙ্গে বাস্তবতার অমিল
ডিআইডাব্লিউ এর সমীক্ষা বলছে, আশ্রয়প্রার্থীরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাকে ব্যবহার করে নিজ দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন বলে রাজনীতির মাঠে যে প্রচার রয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই৷
ডিআইডাব্লিউ-এর গবেষণা সহযোগী সংস্থা সোশিও ইকোনোমিক প্যানেলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জাবিন সিন বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী শরণার্থী তাদের প্রাপ্য ভাতার একটি অংশ নিজ দেশে পাঠাচ্ছেন বলে যে প্রচার রয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই৷’’
ডিআইডাব্লিউ-এর মতে, বিদেশে অর্থ পাঠানোর বিষয়টি নির্ভর করে পারিবারিক বন্ধন এবং জার্মানিতে থাকার পরিকল্পনার উপর৷
নগদ অর্থের বদলে পেমেন্ট কার্ড
আশ্রয়প্রার্থীদের ভাতা হিসাবে নগদ অর্থ না দিয়ে পেমেন্ট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ জার্মানির বিভিন্ন শহর ও রাজ্যে ধাপে ধাপে চালু করা হচ্ছে এই কার্ড৷ যদিও এই পদ্ধতি নিয়ে আছে নানা সমালোচনা৷ কিন্তু বেশিরভাগ রাজ্য সরকার নতুন এই ব্যবস্থাটিকে স্বাগত জানিয়েছে৷ কারণ, তারা বিশ্বাস করে এই কার্ড দেয়া হলে আশ্রয়প্রার্থীরা অন্য দেশে থাকা আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের সদস্যের কাছে অর্থ পাঠাতে পারবেন না৷ ধারণা করা হয়, নগদ অর্থ দেয়া হলে তা সাশ্রয় করে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন তারা৷
অধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই কার্ডের সঙ্গে বেশকিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে, যার কারণে আশ্রয়প্রার্থীরা সমস্যায় পড়ছেন৷ জার্মান সোসাইটি ফর সিভিল রাইটস (জিএফএফ) জানিয়েছে, বিল দেয়া বা ইন্টারনেট ফি দেয়ার মতো কাজগুলো ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে হয়৷ কিন্তু এই কার্ড দিয়ে এসব সেবা পাওয়া সম্ভব নয়৷ এছাড়া, এই কার্ড দিয়ে অনলাইনেও কেনাকাটা করা যাবে না৷
কমছে আশ্রয়প্রার্থীদের ভাতা
অক্টোবরে জার্মানি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে আশ্রয়ের সুবিধা কমাতে যাচ্ছে দেশটি৷ অ্যাসাইলাম সিকার্স বেনিফিটস অ্যাক্টের অধীনে একক ব্যক্তি, যারা ভাগাভাগি করে থাকেন তাদের প্রতি মাসে ৪৬০ ইউরোর বদলে ৪৪১ ইউরো দেয়া হবে৷ দম্পতিরা মাসে ৪১৩ ইউরোর বদলে ৩৯৭ ইউরো পাবেন৷ শিশু, তরুণ এবং ২৫ বছরের কম বয়সি অবিবাহিত, যারা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন, তাদের জন্যও ভর্তুকির হার আগামী বছর কমানো হবে৷ সূত্র: প্রতিবেদন ইনফোমাইগ্র্যান্টস
Related News
ইউরোপে বৈধভাবে যাওয়ার উপায়
ইউরোপে বৈধভাবে যাওয়ার উপায় পৃথিবীর অন্যতম মহাদেশ ইউরোপ। প্রতিবছর বিশ্বের বিপুল সংখ্যক অভিবাসী, দক্ষ কিংবাRead More
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ আরব উপদ্বীপের দেশ কুয়েত থেকে কফিনে করেRead More