Main Menu

জার্মানিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন: কী থাকছে অভিবাসীদের জন্য?

জার্মানিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন: কী থাকছে অভিবাসীদের জন্য?

দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ রেখে জার্মানির সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনটি কার্যকর হচ্ছে বৃহস্পতিবার৷ এর ফলে আরো বেশি মানুষ জার্মানির নাগরিকত্ব অর্জনের সুযোগ পাবেন৷ আইনটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর দৃষ্টি দিয়েছে ইনফোমাইগ্রেন্টস৷

জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগ-এ সংস্কার প্রস্তাব পাস হওয়ার প্রায় সাত মাস পর ২৭ জুন থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে আইনটি৷ এ আইন কার্যকর হলে আট বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর পার হলেই জার্মান নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করতে পারবেন অভিবাসীরা।

জার্মানির মোট জনসংখ্যার অন্তত ১৪ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ মানুষের কাছে নেই দেশটির নাগরিকত্ব৷ অন্তত ৫.৩ শতাংশ মানুষ গত ১০ বছর ধরে জার্মানিতে বসবাস করছে৷ ফেডারেল সরকারের তথ্য অনুযায়ী,জার্মানিতে নাগরিকত্ব অর্জনের হার ইউরোপীয় ইউনিয়নের গড়ের অর্ধেক৷

জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগ-এ সংস্কার প্রস্তাব পাস হওয়ার প্রায় সাত মাস পর ২৭ জুন থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে আইনটি৷ এ আইন কার্যকর হলে আট বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর পার হলেই জার্মান নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করতে পারবেন অভিবাসীরা৷

নতুন আইনের প্রধান দিক

জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মূলত পাঁচটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে আইনটি৷ এগুলোর মধ্যে আছে:

নাগরিকত্ব অর্জনের প্রক্রিয়া গতিশীল করা

দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ রাখা

বিশেষ যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেয়া

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সহজ করা

‘অতিথি কর্মীদের’ প্রজন্মকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট বা আজীবন সম্মাননা দেয়া

বেশি সংখ্যক অভিবাসীর জার্মান নাগরিক হওয়ার সুযোগ

আইনটি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জার্মানিতে বসবাসরত বিদেশিরা আট বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর পরই নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করতে পারবেন৷

জার্মান নাগরিকের সঙ্গে কারো বিয়ে হলে, চার বছর পরই তিনি নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদনের সুযোগ পাবেন৷

আবেদনকারীদের মধ্যে যারা জার্মান সমাজের মানিয়ে নেয়ার (ইন্টিগ্রেশন) ক্ষেত্রে ‘বিশেষ সাফল্য’ দেখাতে পারবেন, তারা তিন বছর পরই নাগরিকত্ব চাইতে পারবেন৷ বিশেষ সাফল্যের মধ্যে রয়েছে: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো ফল করা, কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করা, ভাষাগত দক্ষতা এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে পারদর্শীতা৷

জার্মান ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস জানিয়েছে, ২০২২ সালে জার্মানির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষের অভিবাসন সম্পর্কিত ইতিহাস রয়েছে৷

ছাড়তে হবে না নিজ দেশের নাগরিকত্ব

জার্মানির পাসপোর্ট পেতে বা নাগরিক হতে হলে আগের মতো নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হবে না কোনো বিদেশিকে৷ ২৭ জুন থেকে কার্যকর হচ্ছে এই সুবিধাটিও৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জার্মানির নাগরিকত্ব অর্জনের সময় কোনো শর্ত পূরণ ছাড়াই আবেদনকারী তার আগের নাগরিকত্ব ধরে রাখতে পারবেন৷ ফলে জার্মানির পাসপোর্ট নিতে গিয়ে নিজ দেশের পাসপোর্ট ছাড়ার আক্ষেপও আর থাকবে না৷

তবে আবেদনকারীর নিজ দেশ দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার সুযোগ দেয় কিনা বা এ বিষয়ে জার্মান সরকারের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের কোনো চুক্তি আছে কিনা বিষয়টি তার ওপরও নির্ভর করবে৷

সহজে নাগরিকত্ব অর্জন

আইনি এই সংস্কার নবজাতকদের বিশেষ সুবিধা দেবে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভবিষ্যতে জার্মানিতে বিদেশি পিতা-মাতার ঘরে জন্ম নেয়া শিশু ‘নিঃশর্তভাবে জার্মান নাগরিকত্ব পাবে৷’

এমনকি জার্মান বংশোদ্ভূত শিশুরাও এখন তাদের পিতা-মাতার নাগরিকত্ব ধরে রাখতে পারে, যদি তাদের মধ্যে একজন নিয়মিতভাবে অন্তত (আট বছর থেকে কমিয়ে) পাঁচ বছর জার্মানিতে বাস করেন৷

‘অতিথি কর্মী প্রজন্মের’ জন্য যা থাকছে

অতিথি কর্মী প্রজন্মের সদস্যরা ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারলেই জার্মান নাগরিকত্ব পাবেন৷ জার্মান ন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়ার পরীক্ষা দেয়ারও প্রয়োজন হবে না তাদের৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা ‘‘নিত্যদিনের জীবনে জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারেন৷”,

অতিথি কর্মীদের প্রতি বিশেষ সম্মান জানাতেই তাদের জন্য এই সহজ ব্যবস্থা নিয়েছে জার্মানি৷

১৯৫০-এর দশকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে জার্মানিকে পুনর্গঠনে সহায়তা দিতে অনেক তুর্কি নাগরিক আসেন জার্মানিতে৷ তাদেরকে জার্মান ভাষায় ‘গাস্টআরবাইটার’ বা ‘অতিথি কর্মী’ বলা হয়৷ এতদিন তাদের কেউ জার্মান নাগরিক হতে চাইলে ছাড়তে হতো তুরস্কের নাগরিকত্ব৷

আইনি বিধিনিষেধ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, জার্মান নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারী কোনো বিদেশির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার রেকর্ড থাকতে পারবে না৷ তবে ছোটখাটো অপরাধ আমলে নেবে না কর্তৃপক্ষ৷ কোনো অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় কেউ যদি সর্বোচ্চ ৯০ দিনের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে থাকেন, তবে সাজাভোগের পর তিনি বা তারা নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদনের যোগ্য হবেন৷

তবে একটি ব্যতিক্রম থাকছে৷ যদি একজন অভিবাসী ‘ইহুদিবিদ্বেষী, বর্ণবাদী বা অন্যান্য অমানবিক কাজের’ জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়, সাজার মেয়াদ যা-ই হোক না কেন, তাকে আর নাগরিকত্ব দেয়া হবে না৷

নাগরিকত্ব পেতে হলে বিদেশিদের অবশ্যই নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণের সামর্থ্য থাকতে হবে৷ কারণ, জার্মান সোশ্যাল কোডের দ্বিতীয় ও দ্বাদশ ধারা (এসজি টু ও টুয়েলভ) অনুযায়ী, তাদের সরকারি কল্যাণ ভাতায় যুক্ত করা হবে না৷

আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে, কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, অর্থাৎ ডুলডুং প্রক্রিয়ায় জার্মানিতে দীর্ঘসময় থাকতে পারছেন, তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য হবেন না৷

বাড়ছে নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন

মাইগ্রেশন মিডিয়া সার্ভিসের একটি সমীক্ষা বলছে, জার্মানির ৫০টি বড় শহরে বর্তমানে অন্তত দুই লাখ চার হাজার আবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে৷ সংখ্যাটি ২০২৩ সালে জার্মানিতে মোট নাগরিকত্ব অর্জনের চেয়েও বেশি৷ জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হামবুর্গে ২৫ হাজার ৬০০ মানুষ নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন৷

গত বছর নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদনের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় অন্তত ১৯ ভাগ বেড়েছিল৷ আর সংখ্যাটি ২০২০ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি৷

ক্ষমতাসীন জোট সরকারের এমন উদ্যোগের কারণে আগামীতে নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদনের সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা৷

জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, নাগরিকত্বের আবেদন বেড়ে যাওয়ার কারণে চাপের মুখে পড়তে পারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো৷ তাই পুরো প্রক্রিয়াটিকে ডিজিটালাইজড করার বিষয়ে মনোযোগী হয়েছে সরকার৷

মাইগ্রেশন মিডিয়া সার্ভিসের সমীক্ষা বলছে, জার্মানির প্রায় প্রতিটি শহরে নাগরিকত্বের আবেদনে এগিয়ে আছে সিরীয়রা৷ এরপর আছে ইরাকি ও তুরস্কের নাগরিকেরা৷ গত বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই দৌড়ে ইরানি ও আফগানিদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়৷

আইনি এই সংস্কার কি টিকবে?

চলতি জুনে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে জার্মানির রক্ষণশীল বিরোধী দল সিডিইউ/সিএসইউ৷ দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে কট্টর ডানপন্থি এএফডি৷ কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারভুক্ত দলগুলোর অবস্থানি তলানিতে৷ ফলে এই আইনি সংস্কারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় রয়েছে৷

এই গ্রীষ্মের শেষে কিংবা আগামী বছরের শরতে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ নির্বাচন৷ বর্তমানে জার্মান রাজনীতিতে বেশ চাঙা রয়েছে বিরোধী দল সিডিইউ/সিএসইউ৷ তারা যদি আগামীতে ক্ষমতায় আসে তাহলে নাগরিকত্বের আইনের এসব সংস্কার বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে৷ সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *