জুলুম থেকে বেঁচে থাকার গুরুত্ব নিয়ে যা বলেছেন ওমর রা.
জুলুম থেকে বেঁচে থাকার গুরুত্ব নিয়ে যা বলেছেন ওমর রা.
হজরত আসলাম রহ. থেকে বর্ণিত, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজের স্বাধীন করে দেওয়া গোলাম হুনীকে সরকারী চারণভূমিতে (রক্ষক) নিযুক্ত করলেন এবং বললেন—
হে হুনী! জনসাধারণের ওপর থেকে নিজেরবাহু সংকুচিত কর (তাহাদের উপর জুলুম করিও না), মজলুমের (অত্যাচারিতের) বদ দোয়াকে ভয় কর। কেননা মজলুমের দোয়া কবুল হয়।
যাদের কাছে সূরাইম (অল্প সংখ্যক উট) এবং গুণাইম (অল্প সংখ্যক ছাগল) আছে তাদেরকে তা (সরকারী চারণভূমিতে) চরাইতে বাধা দিও না।
(উসমান) ইবনে আফফান (রা.) ও (আব্দুর রহমান) ইবনে আউফ (রা.)–এর পশুগুলোকে ছাড় দেবে না। কারণ তাঁদের পশুগুলো কমে গেলে তাদের বিশেষ ক্ষতি হবে না, তখন তারা মদীনায় নিজেদের বাগানে এবং ক্ষেত–খামারে চলে যাবে। কিন্তু যাদের অল্প কয়েকটি উট ও ছাগল রয়েছে (এই পশুসম্পদ) কমে গেলে বা ধ্বংস হয়ে গেলে তারা তাদের সন্তন-সন্ততি নিয়ে আমার কাছ আসবে এবং ‘হে আমীরুল মুমিনীন’ বলে সম্বোধন করবে, তখন কি আমি তাদেরকে (কিছু না দিয়া এমনিই) ছাড়িয়া দিব?
পানি ও ঘাস দেওয়া স্বর্ণ ও রৌপ্য দেওয়ার তুলনায় আমার কাছে খুবই সহজ। আল্লাহর কসম! যারা মনে করিবে যে, আমি তাদের উপর জুলুম করেছি, অথচ এই শহর এই পানি তাদেরই, এর জন্য তারা জাহেলি যুগে যুদ্ধ করেছে এবং পরে ইসলাম গ্রহণ করেছে।
সেই পবিত্ৰ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি সাদকার এই উটগুলি না হতো যার উপর আমি মুজাহিদীনকে সওয়ার করাই, তাহলে তাদের জমিন আমি এক বিঘতও গ্রহণ করতাম না। (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১৮৮৮)
হাদিসের ব্যাখ্যা
এ উপদেশটি দেওয়া হয়েছে যাকাতদাতার কাছ থেকে বেছে বেছে উৎকৃষ্ট মাল নিতে নিষেধ করা প্রসঙ্গে। কেননা বেছে বেছে উৎকৃষ্ট মাল নিলে তার প্রতি জুলুম করা হয় আর জুলুম করা জায়েয নয়। সুতরাং সাবধান! যাকাতদাতার কাছ থেকে বেছে বেছে উৎকৃষ্ট মাল আদায় করে তার প্রতি জুলুম করবে না।
তবে এ উপদেশটি দেওয়া হয়েছে ব্যাপক শব্দে। অর্থাৎ সর্বপ্রকার জুলুমই পরিহার করে চলবে। যাকাতদাতার প্রতিও জুলুম করবে না এবং অন্য কারও প্রতিও নয়। কেননা তুমি যার প্রতিই জুলুম কর না কেন, সেই তো মাজলুম হবে। আর মাজলুম ব্যক্তি যদি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায় এবং জালেমের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে দোয়া করে, তবে তা অবশ্যই কবুল হয়।
তার দোয়া ও আল্লাহর মাঝখানে কোনও আড়াল না থাকার মাধ্যমে দোয়া কবুলের অনিবার্যতা বোঝানো হয়েছে।
মজলুম ব্যক্তি যেমনই হোক না কেন, তার বদদোয়া কবুল হয় -ই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মজলুমের দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, যদিও সে পাপিষ্ঠ হয়। তার পাপাচারের দায় তার নিজের।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আমরা তো অনেক সময় দেখি মজলুম ব্যক্তি বদদোয়া করছে অথচ জালেমের কিছুই হচ্ছে না?
এর উত্তর এই যে, বান্দা দোয়অ করে তার নিজ বুঝ অনুযায়ী আর আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন নিজ শান অনুযায়ী। সুতরাং বান্দার কল্যাণার্থে কখনও তিনি বান্দা যা চায় তাই দিয়ে দেন, কখনও তা না দিয়ে অন্যকিছু দেন, হয়তো তার থেকে কোনও বিপদ দূর করেন অথবা তা আখিরাতের জন্য সঞ্চিত রাখেন। বান্দা আখিরাতে সেই সঞ্চিত দোয়ার প্রতিদান দেখে এই বলে আক্ষেপ করবে যে, আহা, দুনিয়ায় যদি আমার কোনও দোয়াই কবুল না হতো।
হাদিস থেকে শিক্ষা
মজলুমের বদদোয়া অবশ্যই কবুল হয়। তাই প্রত্যেকের সতর্ক থাকা উচিত, যাতে তার পক্ষ থেকে কারও প্রতি কোনওভাবেই জুলুম না হয়ে যায়।
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More