কোরআনে যে ন্যায়পরায়ণ শাসকের কথা বর্ণিত হয়েছে
কোরআনে যে ন্যায়পরায়ণ শাসকের কথা বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা কাহাফে একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের আলোচনা তুলে ধরেছেন আল্লাহ তায়ালা। তার নাম ছিলো জুলকারনাইন। তিনি একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ছিলেন এবং পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যদেশসমূহ জয় করেছিলেন। এসব দেশে তিনি সুবিচার ও ইনসাফের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ইয়াজুজ মাজুজের হাত থেকে নিরীহ মানুষকে রক্ষা
জুলকারনইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতিত, বঞ্চিত, শাসকের হাতে শোষিত লোকদের মুক্তি দিতেন। কোআনের বর্ণনা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারণাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে।
জুলকারনাইন প্রথমে লোহার বড় বড় পিণ্ড ফেলে দুই পাহাড়ের মাঝখানটা ভরে ফেললেন। লোহার সে স্তূপ পাহাড় সমান উঁচু হয়ে গেল। তারপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। যখন তা পুরোপুরি উত্তপ্ত হল, তার উপর গলিত তামা ঢেলে দিলেন, যাতে তা লৌহপিণ্ডের ফাঁকে-ফাঁকে গিয়ে সব ফাঁক-ফোকর ভরাট করে ফেলে। এভাবে সেটি এক মজবুত প্রাচীর হয়ে গেল।
মহাপ্রাচীর নির্মাণের এত বড় কাজ যখন সমাপ্তিতে পৌঁছল, তখন জুলকারনাইন দু’টি পরম সত্যের প্রতি নির্যাতিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
এক. তিনি বললেন, এ-কাজ আমার বাহুবলের মাহাত্ম্য নয়। বরং এটা আল্লাহ তায়ালারই রহমত। তিনি আমাকে তাওফীক দিয়েছেন বলেই আমার দ্বারা এটা করা সম্ভব হয়েছে।
দুই. দ্বিতীয়ত তিনি স্পষ্ট করে দেন, যদিও প্রাচীরটি এখন অত্যন্ত মজবুতভাবে তৈরি হয়েছে, যা শত্রুর পক্ষে ভেদ করা সম্ভব নয়, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার পক্ষে এটা ভেঙ্গে ফেলা কিছু কঠিন কাজ নয়। আল্লাহ তায়ালা যত দিন চাইবেন এটা প্রতিষ্ঠিত থাকবে তারপর তিনি এর বিনাশের জন্য যেই সময় নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, সেই সময় যখন আসবে, তখন এটা বিধ্বস্ত হয়ে মাটির সাথে মিশে যাবে।
সূরা কাহাফের ৯৩ হতে ৯৮ নম্বর আয়াতে জুলকারনাইনের এই প্রাচীর নির্মাণের উল্লেখ আছে।
কোরআনে জুলকারইনের বর্ণনা
মুশরিকগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি প্রশ্ন করেছিল। একটি প্রশ্ন ছিল, এক ব্যক্তি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সারা পৃথিবী ভ্রমণ করেছিল। কে সেই ব্যক্তি এবং কী তার বৃত্তান্ত? তাদের প্রশ্নের জবাবে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
وَیَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنۡ ذِی الۡقَرۡنَیۡنِ ؕ قُلۡ سَاَتۡلُوۡا عَلَیۡکُمۡ مِّنۡہُ ذِکۡرًا ؕ ٨٣ اِنَّا مَکَّنَّا لَہٗ فِی الۡاَرۡضِ وَاٰتَیۡنٰہُ مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ سَبَبًا ۙ ٨٤ فَاَتۡبَعَ سَبَبًا ٨٥ حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ مَغۡرِبَ الشَّمۡسِ وَجَدَہَا تَغۡرُبُ فِیۡ عَیۡنٍ حَمِئَۃٍ وَّوَجَدَ عِنۡدَہَا قَوۡمًا ۬ؕ قُلۡنَا یٰذَا الۡقَرۡنَیۡنِ اِمَّاۤ اَنۡ تُعَذِّبَ وَاِمَّاۤ اَنۡ تَتَّخِذَ فِیۡہِمۡ حُسۡنًا ٨٦ قَالَ اَمَّا مَنۡ ظَلَمَ فَسَوۡفَ نُعَذِّبُہٗ ثُمَّ یُرَدُّ اِلٰی رَبِّہٖ فَیُعَذِّبُہٗ عَذَابًا نُّکۡرًا ٨٧ وَاَمَّا مَنۡ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَہٗ جَزَآءَۨ الۡحُسۡنٰی ۚ وَسَنَقُوۡلُ لَہٗ مِنۡ اَمۡرِنَا یُسۡرًا ؕ ٨٨ ثُمَّ اَتۡبَعَ سَبَبًا ٨٩ حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ مَطۡلِعَ الشَّمۡسِ وَجَدَہَا تَطۡلُعُ عَلٰی قَوۡمٍ لَّمۡ نَجۡعَلۡ لَّہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہَا سِتۡرًا ۙ ٩۰ کَذٰلِکَ ؕ وَقَدۡ اَحَطۡنَا بِمَا لَدَیۡہِ خُبۡرًا ٩١ ثُمَّ اَتۡبَعَ سَبَبًا ٩٢ حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ بَیۡنَ السَّدَّیۡنِ وَجَدَ مِنۡ دُوۡنِہِمَا قَوۡمًا ۙ لَّا یَکَادُوۡنَ یَفۡقَہُوۡنَ قَوۡلًا ٩٣ قَالُوۡا یٰذَا الۡقَرۡنَیۡنِ اِنَّ یَاۡجُوۡجَ وَمَاۡجُوۡجَ مُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَہَلۡ نَجۡعَلُ لَکَ خَرۡجًا عَلٰۤی اَنۡ تَجۡعَلَ بَیۡنَنَا وَبَیۡنَہُمۡ سَدًّا ٩٤ قَالَ مَا مَکَّنِّیۡ فِیۡہِ رَبِّیۡ خَیۡرٌ فَاَعِیۡنُوۡنِیۡ بِقُوَّۃٍ اَجۡعَلۡ بَیۡنَکُمۡ وَبَیۡنَہُمۡ رَدۡمًا ۙ ٩٥ اٰتُوۡنِیۡ زُبَرَ الۡحَدِیۡدِ ؕ حَتّٰۤی اِذَا سَاوٰی بَیۡنَ الصَّدَفَیۡنِ قَالَ انۡفُخُوۡا ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَعَلَہٗ نَارًا ۙ قَالَ اٰتُوۡنِیۡۤ اُفۡرِغۡ عَلَیۡہِ قِطۡرًا ؕ ٩٦ فَمَا اسۡطَاعُوۡۤا اَنۡ یَّظۡہَرُوۡہُ وَمَا اسۡتَطَاعُوۡا لَہٗ نَقۡبًا ٩٧ قَالَ ہٰذَا رَحۡمَۃٌ مِّنۡ رَّبِّیۡ ۚ فَاِذَا جَآءَ وَعۡدُ رَبِّیۡ جَعَلَہٗ دَکَّآءَ ۚ وَکَانَ وَعۡدُ رَبِّیۡ حَقًّا
তারা তোমাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, ‘আমি তার কিছুটা বৃত্তান্ত তোমাদেরকে পড়ে শোনাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে তাকে ক্ষমতা দান করেছিলাম এবং তাকে সবকিছুর উপকরণ দিয়েছিলাম। ফলে সে একটি পথের অনুগামী হল। যেতে যেতে যখন সূর্যাস্তের স্থানে পৌঁছল, তখন সে দেখতে পেল, সেটি এক কর্দমাক্ত (কালো) জলাধারে অস্ত যাচ্ছে ৪৮ এবং সেখানে সে একটি সম্প্রদায়ের সাক্ষাত পেল। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! (তোমার সামনে দুটি পথ আছে।) হয় তুমি তাদেরকে শাস্তি দেবে, নয়ত তাদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সে বলল, তাদের মধ্যে যে-কেউ সীমালংঘন করবে তাকে আমি শাস্তি দেব। তারপর তাকে তার প্রতিপালকের কাছে পৌঁছানো হবে এবং তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দেবেন।
তবে যে ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে, সে উত্তম প্রতিদানের উপযুক্ত হবে এবং আমিও আদেশ দান কালে তাকে সহজ কথা বলব। তারপর সে আরেক পথ ধরে চলল। চলতে চলতে যখন সূর্যোদয়ের স্থানে পৌঁছল, তখন সে দেখল সেটি উদয় হচ্ছে এমন এক জাতির উপর, যাদের জন্য আমি তা থেকে (অর্থাৎ তার রোদ থেকে) বাঁচার কোন অন্তরালের ব্যবস্থা করিনি।
ঘটনা এমনই ঘটল। যুলকারনাইনের কাছে যা-কিছু (উপকরণ) ছিল সে সম্পর্কে আমি পূর্ণ অবগত ছিলাম। চলতে চলতে যখন দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল, তখন সে পাহাড়ের কাছে এমন এক জাতির সাক্ষাত পেল, যারা তার কোন কথা যেন বুঝতে পারছিল না।
তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়। আমরা কি আপনাকে কিছু কর দেব, যার বিনিময়ে আপনি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন?
যুলকারনাইন বলল, আল্লাহ আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন সেটাই (আমার জন্য) শ্রেয়। সুতরাং তোমরা (তোমাদের হাত-পায়ের) শক্তি দ্বারা আমাকে সহযোগিতা কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব।
তোমরা আমাকে লোহার পিণ্ড এনে দাও। অবশেষে সে যখন (মাঝখানের ফাঁকা পূর্ণ করে) উভয় পাহাড়ের চূড়া পরস্পর বরাবর করে মিলিয়ে দিল, তখন বলল, এবার আগুনে হাওয়া দাও। যখন সেটিকে (প্রাচীর) জ্বলন্ত কয়লায় পরিণত করল, তখন বলল, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো। আমি তা এর উপর ঢেলে দেব। (এভাবে প্রাচীরটি নির্মিত হয়ে গেল) ফলে ইয়াজুজ মাজুজ না তাতে চড়তে সক্ষম হচ্ছিল আর না তাতে ফোকর বানাতে পারছিল।
যুলকারনাইন বলল, এটা আমার রবের রহমত (যে, তিনি এ রকম একটা প্রাচীর বানানোর তাওফীক দিয়েছেন)। অতঃপর আমার রবের প্রতিশ্রুত সময় যখন আসবে, তখন তিনি এ প্রাচীরটি ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবেন। আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত সত্য। (সূরা কাহাফ, আয়াত, ৮৩-৯৮)
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More