জিহ্বার অনিয়ন্ত্রণের কারণে মানুষ যে বিপদে পড়ে
ধর্ম ডেস্ক:
জিহ্বা মানুষের শরীরের একটি ক্ষুদ্র অঙ্গ। কিন্তু এর কারণে মানুষ যত বেশি গুনাহের কাজে জড়িয়ে থাকে, অন্য কোনো অঙ্গ থেকে এতো বেশি গুনাহ প্রকাশ পায় না। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একবার নিজের জিহ্বা ধরে মোচড়াচ্ছিলেন। তাকে এর কারণ জিগেস করা হলে তিনি বলেন, এই জিনিসটি (জিহ্বা) আমাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস, ৩৮৭)
জিহ্বা দিয়ে যেসব গুনাহ সংঘটিত হয় এর কোনো কোনোটিকে অনেকে গুনাহই মনে। যেমন, মিথ্যা বলা, গিবত করা, কাউকে গালি দেওয়া, গান-বাদ্য করা ইত্যাদি। প্রত্যেক মুসলিমই এই কাজগুলোকে গুনাহ মনে করে। এই কাজগুলো করার সময় সবাই মনে মনে লজ্জিত হয়। তাই আশা করা যায়, এই অনুশোচনাবোধের কারণে হয়তো কখনো মানুষ এই গুনাহগুলো থেকে ফিরে আসবে, নিজেকে ত্রুটিমুক্ত করবে।
কিন্তু এর বাইরেও জিহ্বার মাধ্যমে এমন কিছু মারাত্মক গুনাহ সংঘটিত হয়ে থাকে যার সম্পর্কে মানুষের ধারণা থাকে না যে, এটি মারাত্মক কোনো গুনাহ। গুনাহ সম্পর্কে এই ধারণা না থাকার কারণে তা থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব হয় না। তাই জিহ্বার মাধ্যমে সংঘটিত হয় এমন অহেতুক কয়েকটি বিপদ ও গুনাহের আলোচনা তুলে ধরা হলো এখানে।
জিহ্বার প্রথম আপদ, অহেতুক কথা বলা।
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দান করা এক ধরনের কুদরতি মেশিন বলা যেতে পারে জিহ্বাকে। যা আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে মানুষকে দান করেছেন। জিহ্বাকে এমন কাজে ব্যবহার করা উচিত যা মানুষের দ্বীন অথবা দুনিয়ার কোনো উপকারে কাজে আসবে। তাই জিহ্বাকে এমন কোনো কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়, যা দ্বীন দুনিয়া কোনো দিকেই উপকারি নয়। এমন করলে তা জিহ্বার অপব্যবহার বলে গণ্য হবে। ইসলাম এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেছে। অহেতুক ও অর্থহীন আলোচনায় জিহ্বাকে ব্যবহার করা সবদিক থেকে ক্ষতিকর।
এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী এবং অধিক নিরবতা পালনকারী। (মুসনাদে আহমাদ, ৬/ ৮৯) ইমাম আবু হানিফা রহ.ও বলেছেন, ভালো কথা বলো অন্যথায় চুপ থাকো।
অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত।
অহেতুক বিতর্ক বলা হয়, এমন তর্ককে যাতে দুনিয়া-দ্বীনের কোনো উপকার নেই। সাধারণ মানুষ ছাড়াও পড়াশোনা করা শিক্ষিত মানুষ- মোটামুটি সবাই অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত হয়ে থাকেন, জিহ্বার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে। এর বিপরীতে যেই বিতর্ক সত্যকে সত্য প্রমাণিত করার জন্য হয়ে থাকে এ ধরনে রবিতর্ক অনেক ক্ষেত্রে উত্তম।
মানুষকে অহেতুক বিতর্ক থেকে বিরত রাখতে হাদিসে বলা হয়েছে, মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য এই যে, সে অনর্থক কথা-বার্তা ত্যাগ করবে। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস, ২৩১৮)
ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হওয়া।
জিহ্বার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে মানুষ যে বড় বিপদে পড়ে তাহলো ঝগড়া বিবাদ। ঝগড়ায় জেতার জন্য মানুষ একে অপরকে হেয়-প্রতিপন্ন করে, অন্যকে নিয়ে বিদ্রুপ করে। আর এসব করতে গিয়ে মানুষ এর ক্ষতিকর দিকগুলো খেয়ালই করে না। অনেক সময় একে-অপরকে গালিগালাজও করে থাকে।
পার্থিব বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া তো নিন্দনীয় কাজ অবশ্যই। ধর্মীয় বিষয়েও ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ইমাম মালেক রহ. বলেছেন, ইলমের ব্যাপারে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া ঈমানের নূরকে ধ্বংস করে দেয়। একথা শুনে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, কোনো ব্যক্তিকে সুন্নতে বিপরীত কিছু করতে দেখলে এক্ষেত্রে করণীয় কী? উত্তরে ইমাম মালেক রহ. বললেন, নম্রভাবে তাকে বুঝিয়ে দেবে, ঝগড়া করবে না। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৪১৮)
ঝগড়া এবং বিদ্রুপের কারণে মুসলমানের মনে কষ্ট দেওয়ার গুনাহ হয়ে থাকে। এছড়াও এর কারণে মারাত্মক একটি সামাজিক ক্ষতি হলো, এতে করে মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তাই ধর্মীয় কোনো বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে এক্ষেত্রে ধর্মীয় নিয়ম-নীতির অনুসরণ করা জরুরি। এতে করে জ্বিহার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে।
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More