সুনামগঞ্জে একজন হুজুরের মানবসেবা
নিউজ ডেস্ক:
বয়স ৭২ বছর। কেউ ডাকেন লস্কর হুজুর, কেউবা বলেন জকিগঞ্জি হুজুর। আসল নাম আতাউর রহমান লস্কর। দেশ স্বাধীনের পর সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জে আসেন তিনি। স্কুলে সাড়ে তিন শ্রেণি এবং কয়েক বছর হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়েছেন। সাধারণ এই মানুষটি শতাধিক বেওয়ারিশ লাশ দাফনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০২ সাল থেকে পথে পথে এবং দর্শনীয় স্থানে ছোট ছোট বোর্ড কিংবা প্লাস্টিক সাইন লাগিয়ে ধর্মের অহিংস বাণী প্রচার করেন তিনি। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানবিক মানুষটি সুনামগঞ্জ শহরের পরিচিতি মুখ। অনেকের প্রিয় তিনি।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা উল্লেখ করার মতো না হলেও সমাজকর্মী আতাউর লস্করকে গুণী মানুষ হিসেবেই জানে সুনামগঞ্জের মানুষ। আতাউর বললেন, ‘সব সময়ই মানুষের উপকারের চিন্তা করতে হবে। যার যার পেশাতে থেকেই এটা করতে হবে। হতে পারেন রাজনীতিক, আলেম কিংবা সাংবাদিক। আপনার মাথায় থাকতে হবে– উত্তম মানুষ সেই ব্যক্তি, যে অপরের উপকার করে। নিকৃষ্টতম মানুষ সেই ব্যক্তি, যে মানুষের অপকার করে।’ তিনি জানান, জকিগঞ্জের বারহাল ইউনিয়নের ছক গ্রামে পৈতৃক বাড়ি তাঁর। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। বাড়ির পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এবং স্থানীয় হাফিজিয়া মাদ্রাসায় চার বছর পড়াশোনা করেছেন তিনি।
অভাব-অনটনের সংসারে ১৯৭০ সালে আতাউল গনী ওসমানীর খালাতো ভাইয়ের মৌলভীবাজারের শেরপুরের বাহাদুরপুরে বাসায় ওঠেন তিনি। ওই বাড়ির জামে মসজিদে চাকরি হয় তাঁর। মুক্তিযুদ্ধের সময় একদিন ওই গ্রামে আসে হানাদার পাকিস্তানি সেনারা। তিনি কিছুটা উর্দু জানতেন। পাকিস্তানি সেনারা পাশের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের মন্দির দেখিয়ে বলল, ওখানে নিয়ে চলো। এ সময় বুদ্ধি করে আতাউর বলেন, ওই গ্রামের মানুষ দরিদ্র। সবাই হিন্দুস্তান চলে গেছে; ওখানে গিয়ে লাভ নেই। কিছুক্ষণ ভেবে সেনারা তাঁর কথায় বিশ্বাস করে ফিরে যায়। এতে বেঁচে যায় অনেক মানুষের জীবন।
দেশ স্বাধীনের পর সুনামগঞ্জ শহরে এসে বড়পাড়া নতুন মসজিদে ২৫ টাকা বেতনে ইমামতি শুরু করেন। এর পর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ইমামতি করেছেন। ১৯৭৯ সালে আবার ফিরে আসেন সুনামগঞ্জে। এখানকার বাজার মসজিদে সকালে শিশুদের ইসলামী শিক্ষা দেওয়া ছিল তাঁর কাজ। আতাউর জানান, ‘ওই সময় হাতে সময় ছিল অনেক। ভাবলাম, মানুষের জন্য কিছু করি। গড়ে তুলি খুদ্দামুদ্দীন সংঘ নামে একটি সামাজিক সংগঠন। এর উদ্দেশ্য ছিল বেওয়ারিশ লাশ দাফন, গরিব-দুঃখী মানুষকে সাহায্য, সমাজবিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করা ইত্যাদি।’ ২০০২ সাল পর্যন্ত ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এর পর ধর্মের কিছু বাণী মানুষের মধ্যে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের উদ্যোগে লিফলেট, ব্যানার-ফেস্টুন বানিয়ে এবং দেয়ালে লিখে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেন। তাঁর লেখার মধ্যে রয়েছে– সম্পদ খাবে লোকে, দেহ খাবে পোকে; নামাজ পড় তোমার শেষ নামাজের আগে; উত্তম মানুষ সেই ব্যক্তি, যে অপরের উপকার করে; নিকৃষ্টতম মানুষ সেই ব্যক্তি, যে মানুষের অপকার করে। লস্কর হুজুর বলেন, ‘আমি সবাইকে বলে থাকি– কোনো ধর্মেই রাহাজানি শিক্ষা দেয় না। আমি মসজিদে; অন্যরা মন্দির-গির্জায়, সাংঘর্ষিক কিছু নেই। আমার জবাব আমি দেব, তোমার জবাব তুমি। এসব প্রচার করতে প্রথম প্রথম নিজের আয়ের টাকা থেকে ব্যয় করতে হয়েছে। এখন লিফলেট, ফেস্টুন অন্য অনেকেই তৈরি করে দেয়।’
আতাউর জানালেন, সুনামগঞ্জ শহরের সাবেক পৌর মেয়র আয়ুব বখ্ত জগলুল তাঁকে ১০১ টাকায় কালীবাড়ী রোডের পৌর মিনি মার্কেটের দুই তলায় একটি বাড়ি লিজ দেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানেই বসবাস করেন। স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার। ছোট মেয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। ছেলে থাকেন ফ্রান্স। সামাজিক কাজে স্ত্রী সালেহা চৌধুরী সবসময় উৎসাহ দেন জানিয়ে তিনি বলেন, জীবনের বাকি দিনগুলোয় সামাজিক নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান।
Related News
মাধবপুরে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ পাবলিক লাইব্রেরি
মাধবপুরে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ পাবলিক লাইব্রেরি বছরের পর বছর ধরে বন্ধ থাকায় হবিগঞ্জের মাধবপুরRead More
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ আরব উপদ্বীপের দেশ কুয়েত থেকে কফিনে করেRead More