লিবিয়ার আটককেন্দ্রে বন্দি নারীর মরদেহের ভিডিও প্রকাশ

নিউজ ডেস্ক:
লিবিয়ার একটি আটককেন্দ্রের ভেতর থেকে প্রায় বিবস্ত্র এক অভিবাসী নারীর মৃতদেহের ভিডিও প্রকাশ হয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের পর মঙ্গলবারে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ওই ভিডিওর মধ্য দিয়ে লিবিয়ার অভিবাসী আটককেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে আবারো আলোচনা শুরু হয়েছে৷
ত্রিপোলির আবু সালিম ডিটেনশন সেন্টারের ভিতরে এক নাইজেরিয়ান নারী ভিডিওটি ধারণ করেছেন বলে জানা গেছে৷ ডিটেনশন সেন্টারের ভেতরে গুদামের মতো দেখতে একটি খোলা জায়গায় দিয়ে হাঁটছিলেন ওই নারী৷ ওই সময় আরো অনেক নারীকণ্ঠ শুনতে পান তিনি৷ তারা চিৎকার করে সাহায্য চাইছিলেন৷ ওই ডিটেনশন সেন্টারটিকে সেখানে থাকা নারীরা ‘কারাগার’-এর সঙ্গে তুলনা করছিলেন বলেও শুনেছেন ওই নাইজেরীয় নারী৷
ভিডিওতে দেখা যায়, প্রায় বিবস্ত্র একজন নারীর মরদেহ মেঝেতে পড়ে আছে৷ তার চোখ খোলা ছিল৷ তখন ভিডিও ধারণ করা ওই নাইজেরীয় নারীকে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওকে দেখুন, আজ সকালে তিনি মারা গেছেন৷’’
মারা যাওয়া ওই নারী সোমালিয়ার নাগরিক ছিলেন বলেন জানা গেছে৷ মরদেহেও ছিল ক্ষতের দাগ৷
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আবু সালিম ডিটেনশন সেন্টারে আটক অভিবাসীরা এই ভিডিওটি শেয়ার করেছিলেন৷ কারণ, তারা নানাভাবে সেখানে নিপীড়নের শিকার হন৷ অনেক অভিবাসীর কাছ থেকে মুক্তিপণও আদায় করা হয়৷ গেল সপ্তাহের শুরুর দিকে ভিডিওটি নজরে আসে৷ কারণ, লিবিয়ায় শরণার্থীদের সংগঠন রিফিউজিস ইন লিবিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি শেয়ার করে৷ ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন অভিবাসী অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন এমএসএফ এবং জাতিসংঘের একটি সূত্র৷
জাতিসংঘের সূত্রটি গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, ওই নারী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়ে থাকতে পারেন৷ এটি একটি সংক্রামক রোগ, যা জনাকীর্ণ আটককেন্দ্রে অন্যদের মাঝেও সংক্রমিত হতে পারে৷ আটককেন্দ্রে তাদের চিকিৎসার সুযোগ নেই৷ গার্ডিয়ান দাবি করেছে, আটককেন্দ্রটিতে থাকা বেশ কয়েকজন অভিবাসী এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন৷
রিফিউজিস ইন লিবিয়া তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, ওই অভিবাসী নারীর মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তারা৷ কিন্তু সংস্থাটি বলছে, ওই নারী একজন নাইজেরিয়ান নাগরিক৷ তীব্র অপুষ্টি এবং অমানবিক নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন তিনি৷
যখন মৃত্যুও বিস্ময় জাগায় না
লিবিয়ায় অভিবাসীদের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন স্যালি হেইডেন৷ তিনি আটককেন্দ্রটিতে থাকা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন৷ সেই নারী জানিয়েছেন, ভিডিওটি দেখে মোটেও বিস্মিত হননি তিনি৷
অ্যামেরিকান পাবলিক রেডিও প্রোগ্রাম দ্য ওয়ার্ল্ডকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হেইডেন বলেন, ‘‘[আটককেন্দ্রের ভেতরে] মূলত সব ধরনের অন্যায় আচরণ করা হয়: অনাহার, চিকিৎসা না দেয়া, অবহেলা, জোরপূর্বক শ্রম৷’’
আবু সালিম ডিটেনশন সেন্টারে পাঁচ মাস কাটিয়েছিলেন সিয়েরা লিওনের এক অভিবাসী৷ পরে তিনি টিউনিশিয়া পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন৷ সেই নারীও ভিডিওটি দেখে খুব একটা চমকে উঠেননি৷ আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘‘লোকেরা সেখানে মারা যায়, খাবার দেয়া হয় না, আটককেন্দ্রে থাকার সময় বন্দুকের মুখে ধর্ষণ করা হয়৷’’
আবু সালিমে আটক থাকা অনেক অভিবাসী গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, মুক্তিপণ দেয়াই সেখান থেকে মুক্তির একমাত্র পথ৷
এমএসএফ-এর মতো বেসরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা এই আটককেন্দ্রটিতে অভিবাসীদের ওপর সহিংস আচরণের অনেক তথ্য উপাত্ত সামনে এনেছে৷ ২০২১ সালের জুনে আবু সালিম ও ত্রিপোলির আরেকটি আটককেন্দ্র মাবানিতে চিকিৎসাসেবা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো৷ কারণ, অভিবাসীদের ওপর নির্যাতনের পাশাপাশি এমএসএফ কর্মীদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়েছিল৷
সংস্থাটি সম্প্রতি জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে ত্রিপোলিতে থাকা সব আটককেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাসেবা দেয়া বন্ধ করে দেবে তারা৷
লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টারগুলো পরিচালনা করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত ডিরেক্টরেট ফর কমব্যাটিং ইলিগ্যাল মাইগ্রেশন (ডিসিআইএম)৷ লিবিয়ার উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার ইউরোপমুখী যাত্রা ঠেকাতে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি৷
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারের পর তাদের লিবিয়া ফিরিয়ে এনে এসব আটককেন্দ্রগুলোতে রাখা হয়৷
ডিসিআইএম অভিবাসীদের প্রতি অমানবিক আচরণ করছে বলে প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল৷ চলতি বছরের শুরুর দিকে এ তথ্য জানানো হয়েছে৷
Related News

পাকিস্তানকে আইএমএফ-এর ঋণ দেওয়া কেন ঠেকাতে পারেনি ভারত?
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ গত সপ্তাহে পাকিস্তানের জন্য ১০০ কোটি ডলারের ‘বেলআউট প্যাকেজ’ (সহায়তাRead More

ইউরোপে বৈধভাবে যাওয়ার উপায়
ইউরোপে বৈধভাবে যাওয়ার উপায় পৃথিবীর অন্যতম মহাদেশ ইউরোপ। প্রতিবছর বিশ্বের বিপুল সংখ্যক অভিবাসী, দক্ষ কিংবাRead More