Main Menu

জাকাত আদায়ে সম্পদে যে বরকত দেখা দেয়

ধর্ম ডেস্ক:
জাকাত ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। জাকাত বলতে ধন-সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করাকে বোঝায়। পারিভাষিক অর্থে জাকাত হলো, নিসাবধারীর ধন-মাল, জমির ফসল ও খনিজ সম্পদের ওপর ইসলামি শরিয়ত নির্ধারিত অংশ নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করা।

জাকাতের বিধান কেউ অস্বীকার করলে সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে না। কারণ, এটি মহান আল্লাহর অবশ্যপালনীয় বিধান। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।

পবিত্র আল-কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)

এই জাকাত আদায়ে মানবজীবনে প্রভূত কল্যাণ আছে। জাকাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সম্পদ বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَمَاۤ اٰتَیۡتُمۡ مِّنۡ رِّبًا لِّیَرۡبُوَا۠ فِیۡۤ اَمۡوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرۡبُوۡا عِنۡدَ اللّٰہِ ۚ وَمَاۤ اٰتَیۡتُمۡ مِّنۡ زَکٰوۃٍ تُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَ اللّٰہِ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُضۡعِفُوۡنَ

অর্থ :

তোমরা যে সুদ দাও, যাতে তা মানুষের সম্পদে (যুক্ত হয়ে) বৃদ্ধি পায়, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দেশ্যে তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাক, তো যারা তা দেয় তারাই (নিজেদের সম্পদ) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে নেয়। (সূরা রোম, আয়াত : ৩৯)

যারা নিয়মিত জাকাত আদায় করে আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পদকে বিভিন্ন ধরনের মুসিবত থেকে হেফাজত করেন। চোর ডাকাত ইত্যাদি থেকেও হেফাজত করেন। আর যারা জাকাত প্রদান করে না, আল্লাহ তায়ালা তাদের বিভিন্ন বিপদাপদ দিয়ে থাকেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যারা জাকাত আদায় করবে না, আল্লাহ তায়ালা তাদের বিভিন্ন ধরনের মহামারিতে আক্রান্ত করবেন। ’ (তাবরানি, হাদিস : ৪৫৭৭)

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সদকাকে বর্ধিত করেন (বাকারা : ২৮২)।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, দানে সম্পদ কমে না। ক্ষমার দ্বারা কেবলই সম্মান বৃদ্ধি পায়। আর যে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাআলা তার মান-সম্মান বাড়িয়ে দেন। বাস্তবেও দেখা যায়, দান-সদকার দ্বারা সম্পদে বরকত হয়। বিপদ ও দুর্যোগ থেকে সম্পদের সুরক্ষা হয়। আর জাকাত না দিলে, দান-সদকা না করলে সম্পদের বরকত নষ্ট হয়। দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ আসে। যার কারণে সম্পদ নষ্ট হয়, কমে যায়। হ

অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, জলে-স্থলে যে সম্পদ নষ্ট হয়, তা জাকাত না দেয়ার কারণেই হয় (আততারগিব)। সম্পদে যে বিপদাপদ আসে তা জাকাত না দেয়ার কারণেই আসে। সুতরাং সম্পদের হেফাজতের স্বার্থেও জাকাত দেয়া জরুরি। জাকাত দিলে আল্লাহ তাআলা সম্পদ হেফাজত করবেন। বরকত দিবেন। আর পরকালে সওয়াব তো পাওয়া যাবেই।

উপরন্তু জাকাতের হারও কিন্তু খুব বেশি নয়। শতকরা আড়াই ভাগ। তাও বছরে মাত্র একবার। তারও আবার নেসাব রয়েছে। নেসাবের কম হলে জাকাত দিতে হয় না। নেসাব হিসাব হয় নিজের ও পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের ক্ষেত্রে। অপরদিকে প্রতিদিনই কিন্তু আমাদের ট্যাক্স দিতে হয়। ট্যাক্স না দিয়ে কারও কোনো রেহাই নাই।

জাকাত দিলে সম্পদ বৃদ্ধির নমুনা

একবার হজরত ইমাম জাফর সাদিক তার পুত্রকে বললেন, তোমার কাছে খরচ করার মতো কী আছে। পুত্র বললেন, ৪০ দিরহামের মতো। তিনি বললেন, এটি দান করে দাও। পুত্র বললেন, আব্বা, আপনি ভেবে বলছেন তো? সংসারের ব্যয় নির্বাহের জন্য এ কয়টি দিরহামই আমাদের আছে। দিয়ে দিলে কাল থেকে খরচ করার মতো একটি কপর্দকও থাকবে না।

ইমাম জাফর সাদিক বললেন, তুমি কি জানো না যে, প্রত্যেক জিনিসের যেমন একটি চাবিকাঠি থাকে, তেমনি সমৃদ্ধির চাবিকাঠি হচ্ছে দান? তুমি দিয়ে দাও। দেখো, আল্লাহই সম্পদে বরকত দেবেন। তা-ই হলো। এর মধ্যে ১০ দিনও যায়নি, তার আগেই অন্য একটি কার্যোপলক্ষে জাফর সাদিক ও তার পুত্র চার হাজার দিনার পেলেন!

ইমাম রাইদা তার দাসকে একবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আজ আল্লাহর পথে কিছু দিয়েছ? সে বলল, না তো। ইমাম রাইদা বললেন, তাহলে তুমি কী করে আশা করো যে, আল্লাহ তোমাকে দেবেন। আল্লাহ বলছেন- ‘তোমরা অন্যের জন্যে যা কিছু ব্যয় করবে, তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সূরা সাবা, আয়াত-৩৯)। একইভাবে আল্লাহ বলেন- ‘হে মানুষ! ধনসম্পত্তি বৃদ্ধির জন্য তোমরা যে সুদে বিনিয়োগ করো, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য শুদ্ধচিত্তে যা দান করো, তা-ই বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।’ (সূরা রুম, আয়াত-৩৯)






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *