Main Menu

শিক্ষায় পিছিয়ে যাচ্ছে হাওরাঞ্চলের শিশুরা

নিউজ ডেস্ক:
হাওরাঞ্চলে পানির সঙ্গে শিশুদের বসবাস। বছরে ছয় মাস বাড়ির আশপাশে পানি থাকে। দুই মাস রাস্তাঘাট কাদায় ভরপুর। বিদ্যালয়ে নিয়মিত যেতে পারে না শিশুরা। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল, বন্যা ও বজ্রপাত হাওরাঞ্চলে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ। সে কারণে প্রতিবছর ঝরে পড়ছে হাজারো শিশু। ফলে শিক্ষার সঠিক আলো পায় না হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ শিশু।

বর্ষাকালে হাওরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পানির জন্য প্রায় সময় বন্ধ থাকে। ছাত্রছাত্রীরা নৌকায় খুবই কম আসে। ক্লাস হয় না নিয়মিত। বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে বিদ্যালয়। ফলে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে সেভাবে আগ্রহ তৈরি হয় না। এ কারণে অনেক শিশুই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারে না।

হবিগঞ্জের ১২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অনেকগুলো বর্ষাকালে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া এ জেলায় বন্যার কারণে অনেক সময় হাওরাঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং দারিদ্র্য নেমে আসে। দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারগুলোতে শিশুদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি।

পৌর মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, দারিদ্র্য ও অভিভাবকদের অসচেতনতা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে অন্যতম বাধা। অভিভাবকরা দারিদ্র্যের কারণে সন্তানদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে কাজে পাঠান। আবার অনেকে তাঁদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে পরিবারের ছোট শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে নিজেরা কাজে যান। পাশাপাশি তাদেরকে বাবা-মায়ের জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে ফসলের মাঠে যেতে হয়। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকে এবং এভাবে তারা পড়াশোনার বাইরে রয়ে যায়।

হাওর ঘুরে দেখা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পানি থেকে তুলে আনা ধান শুকাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে পরিবারের শিশুসহ অন্য সবাই। শ্রমিক সংকটের কারণে শিশুদের ধান কাটার কাজে লাগানো হচ্ছে।

আজমিরীগঞ্জে হাওরপাড়ের শিশু আকবর আলী জানায়, সে পঞ্চম শ্রণিতে পড়ে। পানির জন্য তাদের ক্লাস হয় না। স্কুল বন্ধ। তাই বাবার সঙ্গে কাজ করছে।

নবীগঞ্জের শিশু মনির মিয়া বলে, বাবা ধান ঘরে তুলতে পারলে পরিবারের সবাই খেতে পারে। তাই বাবার কাজে সাহায্য করছে সে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, হাওরে যোগাযোগ ব্যবস্থার দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো নয়। সে কারণে শতভাগ শিক্ষার আলো ছড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বর্ষাকালে প্রচুর বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতের কারণে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পান অভিভাবকরা।

হাওর নিয়ে গবেষণা করা ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, মৌলিক মানবাধিকার ও সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার শিক্ষা। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলার শিক্ষার অবস্থা একেবারেই বেহাল। এটি কেবল প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা নয়; নেতৃত্বের দূরদর্শিতা, সক্ষমতা ও নৈতিকতাও এখানে বড় প্রশ্ন। প্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার হাওরের শিশুরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন হচ্ছে। ডিজিটাল থেকে এখন স্মার্ট হওয়ার অগ্রযাত্রায় দেশ। প্রযুক্তি দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করেছে, মানুষকে স্বাচ্ছন্দ্য দিচ্ছে। তবে কখনও কখনও সেটা বিপজ্জনকও। বিশেষ করে স্মার্ট মোবাইল ফোনে বিপথগামী হচ্ছে হাওরের শিশুরা। হাওরে শিশুদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই। বছরের অনেকটা সময় পানিবন্দি জীবন হওয়ায় অনলাইন গেমসে আসক্ত হওয়ার পাশাপাশি অপসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। টিকটক, লাইকির মতো প্রশ্নবিদ্ধ অনেক ওয়েবসাইট বা নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে ধাবিত হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে না হলেও বিজ্ঞাপনের লিংক নিয়ে যাচ্ছে বিপথে। এ ছাড়া সাইবার বুলিংয়ের মতো ভয়াবহ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে শিশুরা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেক অভিভাবককে।

লেখক ও গবেষক শাহ ফখরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে বদ্ধপরিকর। শিক্ষায় অগ্রগতি অর্জন করা ব্যতীত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন করা সম্ভব হবে না। আশার কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *