উপকূলে ভাসছে মরদেহ, অভিবাসন সংকটে তিউনিশিয়া
বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক:
তিউনিশিয়ার উপকূলে ভেসে উঠছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মরদেহ৷ হাসপাতালের মর্গে স্থান ফুরিয়েছে আগেই৷ তাই করিডোরে পড়ে আছ মরদেহ, কিন্তু নেই কোনো দাবিদার৷
ফেব্রুয়ারিতে তিউনিশ প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের অভিবাসী বিরোধী বক্তব্যের পর থেকেই দেশটিতে দমন পীড়নের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা৷ অনেকেই বাধ্য হয়ে নিজ দেশে ফেরত গেছেন৷ অনেকেই নিরুপায় হয়ে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের দিকে ছুটছেন৷
ইউরোপ পৌঁছাতে পারলেই জীবন বদলে যাবে, অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে—এমন বিশ্বাসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র অনুপযোগী ছোট নৌকায় চড়ে বসেন তারা৷ এসব অভিবাসীবাহী নৌকাকে বাধা দিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে দেশটির উপকূলরক্ষীরা৷ কিন্তু উপকূলরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকেই ইউরোপের পথে যাত্রা করেন৷ সম্প্রতি তিউনিশ উপকূল পাড়ি দেয়ার আগেই নৌকাডুবিতে মারা গেছেন অনেকে৷ ১৮ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে অন্তত ২১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন উপকূলরক্ষীরা৷
ভূমধ্যসাগরজুড়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা সবমিলিয়ে বেড়েছে৷ তিউনিশিয়ার উপকূলরক্ষী ন্যাশনাল গার্ডের সিনিয়র কর্মকর্তা হাশেম এডিন জেবাবলি বলেছেন, তিউনিশ উপকূল ছেড়ে ইউরোপমুখী মানুষের ঢল নেমেছে৷ আগের বছর তুলনায় অনেক বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
উপকূলরক্ষীদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে সমুদ্র পাড়ি দিতে চাওয়া ১৭ হাজার মানুষকে থামিয়েছে ন্যাশনাল গার্ড৷ একইসময়ে গেল বছর এই সংখ্যাটি ছিল মাত্র তিন হাজার৷
স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপ গিয়ে জীবন বদল করতে চেয়েছিলেন আইভরি কোস্টের নাগরকি ইব্রাহিম৷ কিন্তু ধরা পড়ে যান উপকূলরক্ষীদের হাতে৷ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে যখন তাকেও উপকূলরক্ষীদের জাহাজে তোলা হচ্ছিল, তখন বিলাপ করছিলেন ইব্রাহিম৷
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যেতে দিন! আপনাদের প্রেসিডেন্ট আমাদের প্রত্যাখ্যান করেছে, আর আপনারা আমাদের যেতে বাধা দিচ্ছেন৷’’
তিউনিশিয়া ছেড়ে যাওয়ার গল্পটাও উঠে আসে ইব্রাহিমের আকুতিতে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়৷ টিউনিশরা আমাদের বাড়িতে পাথর ছুঁড়ে মেরেছিল৷’’ ইব্রাহিমের কথাই প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল অন্যান্য আফ্রিকানদের কণ্ঠেও৷
সমুদ্রেও বিক্ষোভ
উপকূলরক্ষীদের জাহাজে করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার অভিযান দেখতে গেছেন রয়টার্সের সংবাদকর্মীরা৷ কোস্টগার্ড শিপ ৩৫০৫ নিয়ে যাত্রা শুরুর মিনিট কয়েকের মধ্যে তারা একটি অভিবাসীবাহী নৌকাকে শনাক্ত করে৷ ওই নৌকাটির গন্তব্য ছিল ইটালির লাম্পেদুসা৷
পরের ঘন্টায় আরো পাঁচটি অভিবাসীবাহী নৌকা থামিয়েছে উপকূলরক্ষীরা৷ অন্য চারটি নৌকাকে অনুসরণ করা সম্ভব হলেও তাদের তাড়া করার সময় ছিল না৷
অভিবাসী নৌকাগুলোকে তাড়া করলেই, তাদের না আটকানোর অনুনয় বিনয় করেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ এটা সেটা বুঝিয়ে উপকূলরক্ষীদের চলে যেতে বলেন৷ আবার কেউ কেউ আছেন, উপকূলরক্ষীদের বাধা দিতেও উদ্ধ্যত হন৷
রয়টার্সের সংবাদকর্মীরা দেখেছেন, নৌকায় থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা উপকূলরক্ষীদের দিকে ধাতুর মতো দেখতে ভারী কিছু ছোঁড়ে মারেন৷ লাঠি দিয়ে লড়াই করেন তারা৷ কিছু না পেলে, সমুদ্রে লাফিয়ে আত্মহত্যার ভয় দেখান৷
বিপরীতে অভিবাসীবাহী নৌকার ইঞ্জিনটি ভেঙে দেয়ার লক্ষ্য থাকে উপকূলরক্ষীদের৷ তবে ইঞ্জিন ভেঙে ফেলার বিপক্ষে অভিবাসী অধিকার গোষ্ঠীগুলো৷ কারণ, ইঞ্জিন ছাড়া নৌকাগুলো সমুদ্রে আরো ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়৷
ন্যাশনাল গার্ডের কর্মকর্তা জেবাবলি বলেন, অভিবাসীবাহী নৌকা থামানোর সময় উপকূলরক্ষীরা ঝুঁকিতে পড়েন৷
ওইদিন অন্তত ২০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী তাদের ইতালি যাওয়ার অনুমতি দিতে সমুদ্রে বিক্ষোভ করেন৷ বাতাসে গোলা ছুঁড়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেন জাহাজের ক্যাপ্টেন৷ উপকূলরক্ষীদের দিকে নৌকার নষ্ট ইঞ্জিন ছুঁড়ে মারেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ কেউ কেউ নিজেদের শরীরে আগুন দেয়ারও হুমকি দেন৷ একজনতো সমুদ্রে লাফিয়ে পড়েন৷ পরে অবশ্য তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল৷
হাসপাতালে লাশের সারি
একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইটালিতে যেতে আগে খরচ ছিল পাঁচ হাজার দিনার৷ যা প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা সমপরিমাণ অর্থ৷ কিন্তু বর্তমানে সেই খরচ কমে হয়েছে মাত্র এক হাজার দিনার৷
তিউনিশিয়ার উপকূলে মাত্র দুই হাজার দিনারে একটি ধাতব নৌকা তৈরি করা সম্ভব এখন৷ বানানোর পর নৌকাটি অন্তত ২০ হাজার দিনারে বিক্রি করা যায়৷ উপকূলের অনেকেই এখন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন৷ স্ফ্যাক্সের শহরের এক বাসিন্দা রয়টার্সের সংবাদকর্মীদের এমন একটি বাড়ি ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন, যেখানে ধাতব নৌকা তৈরি করা হয়েছিল৷
জাহাজে করা ফিরিয়ে আনা অভিবাসীদের সঙ্গে কথা হয়েছে সংবাদকর্মীদের৷ তারা জানিয়েছেন, সুযোগ পেলে আবারও ইটালির পথে রওনা হবেন৷
ওইদিন স্ফ্যাক্স উপকূল থেকে সাদা টিশার্ট আর জিনস গায়ে এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়৷ জাহাজে খবর আসে, আশপাশ থেকে আরো চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷
শহরের প্রধান হাসপাতালে পড়ে আছে ২০০টি মরদেহ৷ বেশিরভাগ মরদেহ মর্গের বাইরের করিডোরে স্তুপ করে রাখা হয়েছে৷ ওই হাসাপাতালের একজন নার্স বলেন, ‘‘মরদেহগুলো ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে৷ হাসপাতালের রোগীরা অভিযোগ করছেন৷ আমরাও এটা আর সহ্য করতে পারছি না৷’’
আঞ্চলিক স্বাস্থ্যপ্রধান হাতেম শেরিফ বলেন, ‘‘অভিবাসীদের জন্য একটি নতুন কবরস্থান নির্মাণ করবে কর্তৃপক্ষ। আর এখন আমরা প্রতিদিন ৩০ জনেরও বেশি মরদেহ দাফন করছি৷’’
Related News
ভারতীয়দের ভিসার আবেদন গণহারে বাতিল করছে আমিরাত
ভারতীয়দের ভিসার আবেদন গণহারে বাতিল করছে আমিরাত দুবাই ভ্রমণের পরিকল্পনাকারী ভারতীয় পর্যটকদের জন্য সংযুক্ত আরবRead More
ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪০,৫০০ ছাড়িয়েছে
ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪০,৫০০ ছাড়িয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও অর্ধশতাধিকRead More