লিবিয়ায় অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা
বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক:
বিপদসঙ্কুল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালির বারিতে পৌঁছে লিবিয়ায় ধর্ষণ, মারধরসহ নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী।
১০ মার্চ লিবিয়া হয়ে ইটালির দিকে আসার সময় ১০৫ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে ইমার্জেন্সি পরিচালিত ‘লাইফ সাপোর্ট’ জাহাজের উদ্ধারকর্মীরা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সময় লিবিয়া থাকাকালীন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন তারা।
অভিবাসনপ্রত্যাশী দলের একজন নারী জানান, লিবিয়ার একটি কারাগারে তাকে সাত মাস আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে বারবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি। ইউরোপে অভিবাসনের আশায় কোনো নারী একা লিবিয়ায় এলে ধর্ষণের শিকার হতে হয়ে বলেও জানান তিনি।
ওই দলের আরেক তরুণী জানান, লিবিয়ার সেই ভয়াল অভিজ্ঞতা এখনও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়
নিজের দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আরো শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীর সঙ্গে কোনোরকম নৌকায় উঠেছিলেন আরেক নারী। ওই নৌকাটির দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার। সেটিতে চড়েই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছার ঝুঁকি নিয়েছিলেন তারা।
সেদিন ছিল ৬ মার্চ, গভীর রাত। লিবিয়ার উপকূল ছেড়ে নৌকাটি যখন আন্তর্জাতিক জলসীমায় পৌঁছায় তখনই ডুবতে শুরু করে। ওইসময় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে ‘লাইফ সাপোর্ট’।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঝুড়িতে ভয়ঙ্কর সব গল্প
ইমার্জেন্সি-এর কর্মীদের কাছে নিজের গল্প বলছিলেন এক তরুণী। কিন্তু শুধু তার গল্পটিই ভয়ঙ্কর নয়। সবার কাছেই রয়েছে এমন অবিশ্বাস্য সব যন্ত্রণার গল্প।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনেকের গল্প শুনেছেন ইমার্জেন্সি-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিমোনেত্তা গোলা।
তিনি বলেন, “লিবিয়া হয়ে ইউরোপে আসার যে স্বপ্ন মানুষ দেখে, তার মধ্যে লিবিয়া অংশটা খুব ভয়াবহ। এখানে নিপীড়ন, যৌন সহিংসতা, নির্যাতন এবং ব্ল্যাকমেল খুবই নিয়মিত ঘটনা।
“অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নির্যাতন করে আবার সেসব ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ করা হয়। সেগুলো পাঠানো হয় আত্মীয়-স্বজনের কাছে। যাতে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা যায়। অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যেমন এসব কথা বলছেন, তেমনি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও এসব তথ্য উঠে এসেছে।”
এই এনজিওকর্মী আরো বলেন, “অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওপর এমন নির্যাতন ও ভোগান্তির নিন্দা জানাই। কারণ তাদের কাছে ইউরোপে প্রবেশের আইনি চ্যানেল নেই।”
উদ্ধার করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের আঘাত করে চোয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। কয়েকজনের দাঁতও পড়ে গেছে।
সিমোনেত্তা গোলা বলেন, “এই মানুষগুলো একটি ভয়ঙ্কর যাত্রা সহ্য করেছে। সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছাতে তাদের ভয়ঙ্কর অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। শরীরে নির্যাতনের চিহ্নও দেখিয়েছেন আমাদের। এমনকি সমুদ্র পথে আসার সময় অনেকের চামড়া পুড়ে গেছে। গ্যাসোলিন আর নোনা পানির কারণে এমনটা ঘটেছে।”
উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে ইথিওপিয়ার এক কিশোরও রয়েছেন। এর আগে সুদানের একটি শরণার্থী শিবিরে ছিলেন তিনি।
সিমোনেত্তা বলেন, “মায়ের সঙ্গে যখন পালিয়েছিলেন তখন তার বয়স ছিল ১৩। এখন তার বয়স ১৬। অত্যাচার, যন্ত্রণা সইতে না পেরে একাধিকবার লিবিয়া থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিবারই ধরা পড়ে গেছেন। এরপর তাকে আটকে রাখা হয় লিবিয়ার কারাগারে।”
স্বামীর মৃত্যুতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন প্রসূতি মা
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দলে আছেন ২৩ বছর বয়সি গাম্বিয়ার এক তরুণী। নিজ দেশেই স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। ভালো-মন্দ মিলিয়ে দিনগুলো চলে যাচ্ছিল তার। কিন্তু স্বামী মারা গেলে, গাম্বিয়া ছাড়তে বাধ্য হন এই তরুণী। তখন তার পেটে সন্তান। ওই অবস্থায় লিবিয়ায় আসেন তিনি।
ওই তরুণী বলেন, “আমি দুই মাস লিবিয়ায় ছিলাম। স্বামী ছাড়া একজন পোয়াতি মায়ের জন্য এটা খুবই কঠিন। কারণ তোমার কোনো অধিকার নেই, তোমার কিছুই নেই। আমার কিছুই ছিল না, আমি শুধু লিবিয়া ছাড়তে চেয়েছিলাম। আমি ঠিক করেছিলাম সমুদ্র পাড়ি দেব, আর ইটালিতে পৌঁছাবো। আমার বিশ্বাস এখানে ভবিষ্যত আছে। যে সন্তানের জন্ম হবে, তাকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পারব।”
উদ্ধারের পর ব্রিন্ডিসিতে নিয়ে আসা ১০৫ অভিবাসনপ্রত্যাশীর বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে ইমার্জেন্সি। এদের মধ্য আছেন ৫৯ পুরুষ, ১৬ নারী, অভিভাবক ছাড়া ২৪ অপ্রাপ্তবয়স্ক। আবার এই ২৪ জনের মধ্যে ছয় জনের বয়স ১০ বছরের কম।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, জলবায়ু সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ঝুঁকির কারণেই তাদের অনেকেই দেশান্তরী হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই এসেছেনি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। এগুলোর মধ্যে আছে: বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, চাদ, আইভরি কোস্ট, ইরিত্রিয়া, গিনি, মালি, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং সুদান।
Related News
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ আরব উপদ্বীপের দেশ কুয়েত থেকে কফিনে করেRead More
যুক্তরাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ে গাছচাপায় সিলেটির মৃত্যু
যুক্তরাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ে গাছচাপায় সিলেটির মৃত্যু যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম শহরে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছ উপড়ে পড়ে কাহেরRead More