Main Menu

দাম্পত্য জীবনে অন্যের হস্তক্ষেপ ক্ষতিকর

মুফতি ইবরাহিম সুলতান:
দাম্পত্য জীবন হলো একটি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক। সুখী দাম্পত্য জীবন মানুষের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। তাই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সুন্দর রাখতে ইসলাম যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে। কিন্তু আমাদের সামাজে কিছু লোকের দুষ্ট প্ররোচনায় বিভিন্ন পরিবার ও দাম্পত্য জীবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার অন্যতম একটি কারণ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ। আরবিতে যাকে তাখবিব বলে। তাখবিব বলা হয়, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক নষ্ট করার ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ।

আর এ অনুপ্রবেশকারীদের চরিত্র হচ্ছে, তারা আন্তরিক, স্নেহশীল ও পরম হিতাকাঙ্ক্ষীরূপে তাদের মাঝে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। তারা কখনো গল্পচ্ছলে স্বামীকে স্ত্রীর বিরোধী করে তোলে। কখনো পাশের বাড়ির ভাবি বা অন্য কেউ বিকেলের গল্পের আসরে অনর্থক নানা রকম বাক্যালাপ করে স্ত্রীর মনকে স্বামীর প্রতি তিক্ততায় ভরে তোলে। কখনো স্বয়ং মেয়ের মা-বাবা কিংবা বোন-বান্ধবী ও কাছের আত্মীয়-স্বজন কী দিয়েছে, কী দেয়নি এসব খোঁচা দিয়ে মেয়ে ও জামাতার মধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি করে। আবার কখনো স্বামীর পক্ষের আত্মীয়-স্বজন স্ত্রীর ছোটখাটো নানা দোষ স্বামীর সামনে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে তাদের সম্পর্ক নষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। আর এই সমস্যাটি শুধু এক-দুইটি পরিবারে নয়; বরং সমাজের প্রায় পরিবারে প্রতিনিয়ত ঘটছে।

আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে তাখবিব তথা দাম্পত্য জীবনে তৃতীয় ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় দখলের ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘তারা ওই শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই এ কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হইয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যার মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া এর মাধ্যমে কারো অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তা-ই শেখে। তারা ভালোরূপে জানে যে যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ, যদি তারা জানত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১০২)

এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) শক্ত ভাষা ব্যবহার করেছেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টিকারীকে নিজের থেকে আলাদা ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৫)

তা ছাড়া এ প্ররোচনার মাধ্যমে কখনো কখনো একটি পরিবারের সমাপ্তি ঘটে। ফলে পরিবার ও সন্তানদের জীবনে অনিশ্চয়তার পথ দেখা দেয়। পাশাপাশি মানুষের ধর্ম-কর্মেও ব্যাঘাত ঘটে। এতে শয়তান বাহিনীর সরদার ইবলিস খুবই আনন্দিত হয়। হাদিসের ভাষায়, ইবলিস পানির ওপর তার আরশ স্থাপন করত তার বাহিনী প্রেরণ করে। তন্মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জনকারী সে-ই যে সবচেয়ে বেশি ফিতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক অমুক কাজ করেছি। সে বলে, তুমি কিছুই করনি। অতঃপর অন্যজন এসে বলে, অমুকের সঙ্গে আমি সকল প্রকার ধোঁকার আচরণই করেছি। এমনকি তার থেকে তার স্ত্রীকে আলাদা করে দিয়েছি। তারপর শয়তান তাকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে হ্যাঁ, তুমি খুব ভালো। (মুসলিম, হাদিস : ৬৯৯৯)

সুতরাং প্রকৃত মুমিনের পরিচয় হলো, সে সংশোধনকারী হবে। যেকোনো ভালো কাজে এগিয়ে থাকবে। এবং স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনকে মজবুত করতে সাহায্য করবে। একান্ত প্রয়োজন কিংবা সংশোধনের চেষ্টা ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর নিজস্ব জীবনে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।

আল্লাহ আমাদের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে মানুষের দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট করা থেকে হেফাজত করুন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *