Main Menu

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজে মন্থরগতি

নিউজ ডেস্ক:
অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উপযোগী জেট ফুয়েল ডিপো ও পূর্ণাঙ্গ টার্মিনাল ভবন নির্মাণসহ ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। অথচ এখন পর্যন্ত বিমানবন্দরের মূল টার্মিনাল ও কার্গো ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফা মেয়াদ শেষ হতেও আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি। এর সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও। কিন্তু কাজ বাড়ছে না। অথচ প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগেই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছ থেকে ‘মবিলাইজেশন অ্যাডভান্স’ বাবদ ২১৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ অবস্থায় নানা সমস্যায় জর্জরিত ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জরুরি কাজগুলো মন্থর গতিতে চলায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। নিজ নির্বাচনী এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে ‘বিশেষ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ’ গ্রহণের জন্য গত সোমবার বিমান প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি)। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল বিইউসিজি।

এদিকে এই প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে গত ২৭ নভেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিমান মন্ত্রণালয়। দুই সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) খলিলুর রহমানকে। কমিটির অপর সদস্য হলেন সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী নিয়ন্ত্রক (হোটেল ও রেস্তোরা সেল) আয়েশা হক। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করে দায়দায়িত্ব নিরূপণপূর্বক একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিমান প্রতিমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে পরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘গত ২৯ ডিসেম্বর সিলেট সফরকালে আমি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করি। আমার ধারণা প্রকল্পটি এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে ‘বিশেষ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ’ না নিলে এটি আরও বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের দেশে প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে উন্নয়ন কাজ বিলম্ব করার ট্রাডিশন

রয়েছে। তবে জাপান বা চায়নার মতো দেশগুলোয় এমনটি করতে দেখা যায় না। তারা যে কোনো প্রকল্প মেয়াদের আগেই কাজ সম্পন্ন করে ফেলে। এমনকি মেট্রোরেলের কাজও ৬ মাস আগেই শেষ করে টাকা ফেরত দেওয়ার নজির দেখিয়েছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়নের কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। টার্মিনালের কাজ বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বিমানবন্দরটির উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হলেও এর সমাধান ইতোমধ্যে করা হয়েছে।’

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওসমানী বিমানবন্দরের প্রকল্প পরিদর্শন করে- দীর্ঘদিনেও কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিমান মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও। প্রকল্পের অন্যতম স্থাপনা টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজের দৃশ্যমান কিছু না দেখতে পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তারা। এ বিষয়ে প্রকল্পের পিডির (প্রজেক্ট ডাইরেক্টর) সঙ্গে কথা বলে কমিটি। এ ছাড়াও বিদেশি ঠিকাদার চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপের (বিইউসিজি) কর্মকর্তা কর্মচারী, কনসালটেন্ট, বুয়েট শিক্ষক ও প্রকল্পের সাব ঠিকাদারদের সঙ্গেও কথা বলেন এবং তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। তদন্ত কমিটি জানায়, মূলত প্রকল্পের পিডির অনভিজ্ঞতা আর অনিহার জন্য পুরো প্রকল্পটি স্থবির হয়ে আছে। এ নিয়ে দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফার মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে; কিন্তু কাজের কাজ দৃশ্যমান কিছুই হয়নি।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে অনুমোদিত ডিপিপির নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) নিয়োগ করা হয়েছে। যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ পিডি প্রেষণে নিয়োগ হওয়ায় এভিয়েশন সংক্রান্ত কাজে তিনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ নন। এ ধরনের একটি প্রকল্পে অভিজ্ঞ কাউকে পিডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দরকার ছিল। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুশাসনে বলা আছে, ওই পদের কর্মকর্তাকে অবশ্যই দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। কিন্তু পিডি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পান না। বেবিচকের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো এভিয়েশন খাতসংশ্লিষ্ট বিধায় ওই পদে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে বেবিচকের নিজস্ব জনবল থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগকৃত কর্মকর্তার এ ধরনের কোনো কারিগরি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, প্রকল্পটির ৭৫ ভাগ কাজ হচ্ছে পূর্তসংশ্লিষ্ট। বাকি ২৫ ভাগ কাজ ইলেকট্রিক্যাল-মেকানিক্যাল ও যোগাযোগ যন্ত্রাবলীর। অথচ যে কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি একজন মেকানিক্যাল ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী। এভিয়েশন সংক্রান্ত বিষয়ে তার কোনো কারিগরি জ্ঞান নেই। তা ছাড়া তিনি পেশাগত জীবনের ২০ বছর আগে প্রকৌশল পেশা ত্যাগ করেছেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আইকাও (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন)-এর অ্যানেক্স-১৪-সহ অন্যান্য রুলস রেগুলেশন, এফএএ-এর (ফেডারেশন এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অ্যাডভাইজরি সার্কুলার সংক্রান্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মূলত এ ধরনের কারিগরি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তিনি প্রকল্প নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী আমাদের সময়কে বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্য এর আগে তিনি বলেছিলেন, এ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। সিলেট বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। কাজেই এ প্রকল্প নিয়ে কেউ কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি ও খামখেয়ালি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে ২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। বাকি টাকা দেওয়া হবে বেবিচকের নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর সরকার অনুমোদন দেয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মেয়াদ ধরা হয়। দুই দফায় দরপত্র আহ্বান ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে এ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপকে (বিইউসিজি)।

জানা গেছে, বর্তমানে সিলেটে লন্ডন থেকে আসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করলেও রানওয়ের সক্ষমতা না থাকায় প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও পূর্ণ আসনের যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করতে পারছে না ওই বিমানবন্দর থেকে। তাই নতুন প্রকল্পের আওতায় এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকমানের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথক সাব-স্টেশন স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, যাত্রীদের জন্য এক্সকেলেটরসহ আরও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ রযেছে। কিন্তু ধীর গতিতে কাজ হওযায় গত ২ বছরে প্রকল্পের আওতায় প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনসহ ল্যান্ডসাইড এলাকায় শুধু মাটি খননের কিছু কাজ শেষ হয়েছে। আর বালি ভরাটের কাজ চলছে কার্গো টার্মিনাল ভবনের। সূত্র:গোলাম সাত্তার রনি- দৈনিকআমাদেরসময়






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *