Main Menu

যেভাবে কাটল বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন

নিউজ ডেস্ক:
দাওয়াতে তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বিদের তাৎপর্যপূর্ণ বয়ান, তালিম-তাশকিল এবং মুসল্লিদের নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসগারের মধ্যদিয়ে শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে কোনো এক সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটছে। মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহম্মদ জুবায়ের।

তাবলিগের ৬ উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা খুরশিদ আলম বয়ান করেন। তা বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা সাজ্জাদুর রহমান। এর মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন বাদ আসর ৭০ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মুসল্লিতে ঠাসা ময়দানে অবস্থানের সুযোগ না থাকলেও বয়ান শুনতে ও অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নিতে দ্বিতীয় দিনেও ইজতেমাস্থলে মুসল্লিরা আসেন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। সকালের ঠান্ডা বাতাস ও কনকনে শীত উপেক্ষা করে মুসল্লিদেরকে অধিক মনযোগ সহকারে মুরব্বিদের বয়ান শুনতে দেখা গেছে।

ইজতেমা উপলক্ষ্যে শিল্পনগরী টঙ্গী এখন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। এদিকে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে ৩ জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ময়দানে সাত মুসল্লি ইন্তেকাল করলেন।

দ্বিতীয় দিনে বয়ান করলেন : বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ফারুক। বাদ আসর ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান। বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা। এ ছাড়াও ওলামা-মাশায়েখদের উদ্দেশে সকাল ১০টায় বয়ান করেন মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা, আরবি তাঁবুতে বয়ান করেন মাওলানা খুরশিদ আলম, মুফতি শফি ও মাওলানা আহমদ লাট। বধির সাথীদের উদ্দেশে বয়ান করেন সানোয়ার হোসেন, নিয়াজ মাহমুদ ও মাওলানা আমির হুসেন।

মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান : মাওলানা খুরশিদ আলম বলেন, দাওয়াতের মাধ্যমে আখলাক এবং নামাজের মাধ্যমে দুনিয়ার জিন্দেগি ঠিক করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আখলাক দ্বারা আমাদের পুরো জিন্দেগিতে এমন একটি পরিবেশ কায়েম করতে হবে যাতে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রতিটি স্থানে আল্লাহ তায়ালার হুকুম ও নবি করিম (সা.)-এর তরিকা বাস্তবায়ন হয়। আমাদের জানমাল দ্বীনের দাওয়াতের কাজে ব্যয় করতে হবে। আর দাওয়াত কবুল হলে আমাদের দোয়া কবুল হবে। দোয়া কবুল হলে আমাদের জীবন পরিবর্তন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, যার কাছে বেহেশতে যাওয়ার সামান নেই, সেই হলো প্রকৃত ফকির। যার মধ্যে কলেমা আছে সেই ধনী ও ভাগ্যবান। দুনিয়ার প্রতিটি মানুষের কাছে কলেমার দাওয়াত পৌঁছানো আমাদের দায়িত্ব।

ময়দানের পুলিশের ব্রিফিং : শনিবার দুপুরে শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোলরুমে ময়দানের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তাজনিত কোনো হুমকি নেই। পুরো ইজতেমা ময়দান নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পুলিশ যে কোনো ধরনের ক্রাইম মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।

যান চলাচল বন্ধ থাকবে : শনিবার রাত ১২টার পর থেকে টঙ্গী-কামারপাড়া রোড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস এবং আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত তা বন্ধ থাকবে।

এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহনগুলোকে গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ি হয়ে এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগরা বাইপাস দিয়ে তিনশ ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

যৌতুকবিহীন বিয়ে : ইজতেমা ময়দানের অন্যতম শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান বলেন, শনিবার বাদ আসর ময়দানের মূলমঞ্চে ৭০ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়ে পরিচালনা করেন মাওলানা জুহাইরুল হাসান। তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর বয়ান মঞ্চের পাশে বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে বর ও কনেপক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে ওই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহরে ফাতেমি’র নিয়মানুযায়ী। এতে মোহরানার পরিমাণ দেড়শ তোলা রুপা বা তার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নবদম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করা হয়। এ সময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খুরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

আরও ৩ মুসল্লির মৃত্যু : শুক্রবার রাত ও শনিবার বিকাল নাগাদ ময়দানে আরও ৩ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন-খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার মলমলিয়া গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মুফাজ্জল হোসেন খান (৭০), চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানা সদরের আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৭০), নরসিংদী জেলার মনোহরদি থানার মাসিমপুর গ্রামের রহমতুল্লাহর ছেলে হাবিবুর রহমান হাবি (৭০)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়দানে লাশের জিম্মাদার মাওলানা মুহাম্মদ শাকের।

ময়দানের চারপাশে ময়লা-আর্বজনার স্তূপ : ময়দানের ভেতর দক্ষিণ-পূর্ব, মাঝামাঝি ও উত্তর-পূর্ব পাশে মুসল্লিদের ফেলা খাবারের উচ্ছিষ্ট ও ময়লা-আর্বজনার স্তূপ পড়ে রয়েছে। পচা উচ্ছিষ্ট থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে সাধারণ মুসল্লিদের ময়দানে অবস্থান ও চলাচলে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

শৌচাগার ব্যবহার ও বয়ান শুনতে সমস্যা : ময়দানের বাইরে অবস্থানকারী মুসল্লিদের বাথরুম ব্যবহার ও মুরুব্বিদের বয়ান শুনতে চরম সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি থেকে আসা মুসল্লি আব্দুল হাকিম (৬০) ও চশমত আলী (৫৫)। তারা যুগান্তরকে বলেন, টঙ্গী-কামারপাড়া রোডের ফুটপাতে কোনো মাইক না থাকায় মুরুব্বিদের বয়ান শুনতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও তাদের অবস্থান থেকে টয়লেট অনেক দূরে হওয়ায় মুসল্লিদের ভিড় ঠেলে বাথরুম করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিদেশি মুসল্লি : ইজতেমার প্রথম পর্বে শনিবার বিকাল পর্যন্ত সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, সিরিয়া, চাঁদ প্রজাতন্ত্র, ইরানসহ বিশ্বের ৬৮ দেশের প্রায় ৫ হাজার ৫২৬ জন মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদেশি নিবাসে স্থাপিত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোলরুমের এক কর্মকর্তা। জিএমপি কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা যায়, ইংরেজি ভাষাভাষি দেশের ৮৯৬ জন, আরবি ভাষার ২১০ জন, ভারতের কলকাতা, আসাম, দিল্লি থেকে ২ হাজার ৬০৫ জন ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। এ ছাড়া হিন্দি ও উর্দু ভাষাভাষি ১ হাজার ৮১৫ জন মুসল্লি তাদের নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান করে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। আজ রোববার আখেরি মোনাজাতের পূর্বে বিদেশি মেহমানের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানিয়েছেন।

বিদেশি মুসল্লিদের শুকরিয়া আদায় : ভারতের গুজরাট থেকে আসা মোহাম্মদ তৈয়ব ও সৈকত যুগান্তরকে বলেন, আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের ইজতেমা ময়দানে আসার। মহান আল্লাহ সেই আশা পূরণ করেছেন। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। আমরা এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সারা পৃথিবীতে যেন ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে পারি সেই দোয়া চাই।

বধিরদের জন্য বয়ান : বিশ্ব ইজতেমায় আগত বধির (কানে শোনে না এমন) মুসল্লিদের জন্য তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে নির্ধারিত খিত্তায় জামাতবদ্ধ করে বয়ান শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে বয়ান বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান বলেন, ইনশাআল্লাহ, আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ইজতেমা শেষ হবে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *