নিয়তের কারণেও সওয়াব মেলে
আবদুল আযীয কাসেমি:
অনেকেই মনে করেন, কেবল নামাজ পড়া, রোজা রাখা, মসজিদে গিয়ে জিকির করা, কোরআন তিলাওয়াত করা, হজ-ওমরাহ করা এবং গরিবদের দান করাই ইসলামি কাজ। অর্থাৎ আমাদের জীবনের অন্য কোনো কাজের সঙ্গে ধর্মের যেন কোনো যোগ নেই। অথচ বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা যদি আমাদের জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলোতেই একটু নিয়ত ঠিক করে নিই, তাহলে দেখা যাবে আমাদের কাজগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে সওয়াবের কাজ হয়ে যাবে। ফলে নিজের পার্থিব উপকার ও কল্যাণলাভের পাশাপাশি আখিরাতের কল্যাণও অর্জিত হয়ে যাবে।
কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক—
মেসওয়াক করা: মেসওয়াক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। মহানবী (সা.) মৃত্যুশয্যায় পর্যন্ত মিসওয়াক করেছেন এবং এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসে তিনি বলেন, ‘যদি আমার উম্মতের কষ্টের আশঙ্কা না হতো, তাহলে আমি মেসওয়াক করা সবার জন্য আবশ্যক করে দিতাম। (তিরমিজি) এই মেসওয়াকের ব্যাপারেই নবীজি বলেন, ‘মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়। (সুনানে নাসায়ি) আমরা দেখতে পাচ্ছি, মেসওয়াক পার্থিব কল্যাণের পাশাপাশি কীভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম হয়ে গেল। মুখে দুর্গন্ধ থাকলে রহমতের ফেরেশতারা কাছে আসেন না। সুতরাং মুখ পরিষ্কার করার সময় নবীজির সুন্নত পালনের নিয়ত করলে উভয় জাহানেই কল্যাণ।
টাখনুর ওপরে কাপড় পরা: এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ। হজরত ওমর (রা.) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, এক যুবক তাঁর শুশ্রূষার জন্য এলেন। যাওয়ার সময় হজরত ওমর তাঁকে বললেন, হে যুবক, তোমার কাপড় টাখনুর ওপরে ওঠাও। কারণ টাখনুর ওপরে কাপড় পরা তোমার কাপড়ের জন্য অধিকতর পরিচ্ছন্নতা এবং তোমার পালনকর্তার প্রতি অধিক তাকওয়া লাভের উপায়। (ইবনে হিব্বান) আবার বিষয়টির ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তিন ধরনের লোকের দিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকাবেন না। এক. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী। দুই. উপকারের পর খোঁটাদানকারী। তিন. মিথ্যা শপথের মাধ্যমে যে ব্যবসায়ী বাজারে পণ্য বাজারজাত করে। (মুসলিম)
সুতরাং হাদিসের নির্দেশনা মানার নিয়তে টাখনুর ওপরে কাপড় পরলে আমরা যেভাবে আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা পাব, পাশাপাশি আমাদের পরিচ্ছন্নতার দিকটাও অর্জিত হবে অনায়াসে।
স্ত্রী সহবাস: যৌনমিলন যদি অবৈধ জায়গায় অবৈধভাবে হয়, তাহলে ইসলামে তা ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। তবে কাজটি বৈধভাবে করার কারণে পাওয়া যায় সদকার সওয়াব। হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের লজ্জাস্থানেরও একটি সদকা রয়েছে।’ সাহাবিরা বললেন, ‘আমাদের কেউ স্ত্রীসহবাসের মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা পূরণ করলেও কি সওয়াব পাব?’ উত্তরে মহানবী (সা.) বললেন, ‘এই চাহিদা যদি হারাম পন্থায় পূর্ণ করা হতো, তবে কি তাতে গুনাহ হতো না? সুতরাং যখন কেউ হারাম পথ ছেড়ে বৈধ পথে তা পূর্ণ করবে, তবে সেটা তার জন্য পুণ্যে পরিণত হবে।’ (মুসলিম)
সুতরাং স্ত্রীসহবাসেও উভয় জাহানের কল্যাণ—জৈবিক চাহিদা পূর্ণ হয়, সওয়াবও পাওয়া যায়। সুতরাং ইসলামের নির্দেশনা মেনে সহবাস করলে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ পাওয়া যায়।
*লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More