Main Menu

সিলেটে ঔষধ সংরক্ষনে মানা হচ্ছে না ‘তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ’

নিউজ ডেস্ক:
সিলেটে ঔষধ সংরক্ষনে মানা হচ্ছে না ‘তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ’
বাজারের অধিকাংশ ঔষধের মোড়কের গায়ে লিখা থাকে ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে নগরীর বেশির ভাগ ফার্মেসি গুলোতে কোন ধরনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না, ফলে ঔষধের কার্যকারিতা ঠিক থাকছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সিলেটে গত কয়েক মাস ধরে প্রচন্ড গরম, এই গরমে নানা রকম রোগে ভুগছেন সকল বয়সী মানুষ। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি ও কাশি লেগেই আছে। কিন্তু কোন ধরনের ঔষধ সহজে কাজ করছে না। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরম পড়লে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষণ করা কথা থাকলেও নগরীর বেশীর ভাগ ঔষধের দোকানগুলোতে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই বললেও চলে। যার ফলে ওষুধের গুণগত মান ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায় বলে চিকিৎসকদের ধারণা।

বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মো. গোলাম রব সোয়েব বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, যে দেশে মানুষ চাইলেই ঔষধ কিনে খেতে পারে। আর দোকান থেকে ঔষধ খেয়ে তিন মাসে গর্ভপাত ঘটানোও এই দেশেই সম্ভব। কিন্তু বিশ্বের আর কোন দেশে তা হয় বলে আমার জানা নেই । তাই এ দেশে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার কোন প্রয়োজন মনে করে না ঔষধের দোকানীরা।

তিনি বলেন, গত করোনার সময় আমি নিজে অসুস্থ ছিলাম, যে কারণে একটা ইনজেকশন ব্যবহার করতে হয়েছে। কিন্তু এই ইনজেকশনটা যদিও ফ্রিজে থাকার কথা থাকলেও আমাকে দেয়া হয়েছে খোলা ঔষধের নিদিষ্ট জায়গা থেকে। তাহলে বলেন আমার কি করার ছিলো? তাই এ দেশে থাকতে হলে এভাবেই চলতে হবে বলে আমি মনে করি।

ডা. ওয়াজিমা চৌধুরী বলেন, আমরা চিকিৎসক, আমাদের কাজ হলো চিকিৎসা পত্রের মাধ্যমে ঔষধ লিখে দেওয়া। কিন্তু ঔষধ যদি কাজ না করে তাহলে ডাক্তারের বদনাম হয়, এই দোষ কি ডাক্তারে?

তিনি বলেন, সিলেটের ঔষধের দোকান গুলোতে ঔষধ ঠিক মতো রাখা হয় না, যার কারণে ঔষধের মেয়াদ থাকলেও কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এই সব ঔষধ রোগীর শরীরে কাজ করে না। সৃষ্টি হয় একটা থেকে আরেকটা সমস্যা। কিন্তু যদি দোকান গুলোতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হতো তাহলে হয়তো এই সমস্যা সৃষ্টি হতো না। ঔষধের উপর মানুষের বাঁচা মরা নির্ভর করে, তাই মানুষ জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কারো নেই বলে আমি মনে করি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহানারা খানম মিলন জানান, গত তিন মাস আগে আমার পায়ের নীচে দিয়ে লোহা ঢুকছিলো, আমি সাথে সাথে একটি ফার্মেসী থেকে টিটেনাস ইনজেকশন দিয়ে আসি। কিন্তু পরের দিন আমার পা ফুলে যায় এবং ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলেন আজই অপারেশন করতে হবে। কারণ আমার নাকি টিটেনাস হয়ে গেছে, ইনজেকশন কাজ করেনি। তার পর বাধ্য হয়ে অপারেশন করাই, কিন্তু এখনও আমার পা পুরোপুরি ঠিক হয় নি। আমি এখনো হাঁটতে পারি না।

তিনি বলেন, আমার এই ক্ষতির জন্য তাহলে কাকে দ্বায়ী করবো। যদি ফার্মেসীতে এই ইনজেকশন টা ভালোভাবে রাখা হতো তাহলে হয়তো আজ আমার এই পরিনতি হত না।

স্কুল শিক্ষক মো আব্দুল খালিক জানান, ঔষধ মানুষের জীবন রক্ষাকারী, আর সে ঔষধ যদি মানুষ মৃত্যুর কারণ হয় তাহলে কি হবে এই সব ঔষধ খেয়ে? ঔষধের দোকানগুলোতে যেনতেন ভাবে রাখা হয় সব ধরণের ঔষধ, এই ঔষধ গুলো মানুষের জীবন রক্ষা করে। কিন্তু দোকানীদের খামখেয়ালির জন্য এখন মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িছে এই সব ঔষধ।

তিনি বলেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে ঔষধের দোকানীদের কে আরো সচেতন হতে হবে।

তবে ডাক্তারদের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ ঔষধের ব্যবসায়ীরা। তারা নিজেদের স্বপক্ষে দাঁড় করাচ্ছেন বিভিন্ন যুক্তি।

আম্বরখানাস্থ রাহাত ফার্মেসির ব্যবসায়ী অনকুল দেবনাথ বলেন, আমরা আমাদের দোকানে যথেষ্ট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ঔষধ বিক্রি করি, তাছাড়া আমাদের দোকান দুইতলা থাকায় গরমটা বেশি টের পাওয়া যায় না। আর যে ঔষধ গুলো ফ্রিজে রাখা দরকার তারতো স্কেলের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

সিলেট রেলগেইটর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফার্মেসী ব্যবসায়ী জানান, আমরা আমাদের দোকানে সব ধরনের ঔষধ নিয়ম অনুযায়ী রাখি, গত কয়েক দিন আগেও ভ্রাম্যমান আদালত এসে যাচাই-বাছাই করে গেছে। সিলেট এখনো অনেক ভালো, অন্যান্য জায়গার মতো নকল ঔষধ বিক্রি হয় না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্যামিষ্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি, সিলেটের সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী বলেন, ফার্মেসীতে টেম্পারেচার ম্যান্টেইন হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের, এটি আমাদের দায়িত্ব নয়।

ঔষধ তত্বাবধায়ক, সিলেট মেহেদী হাসান বলেন, সুস্থতার জন্য গুণগতমান সম্পন্ন মেডিসিন প্রয়োজন। কিছু ফার্মেসীতে নিয়ম মানা হয় না এটি সত্য। আমরা ভিজিটে গিয়ে সব সময় ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের সচেতন করার চেষ্ঠা করি। বিষয়টি সচেতনতার বিষয়, সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *