সুরমার নদী ভাঙ্গনের কবলে সদর উপজেলা বিভিন্ন এলাকায়
নিউজ ডেস্ক:
সুরমার নদী ভাঙ্গনের কবলে সদর উপজেলা বিভিন্ন এলাকায়
সুরমা নদীর পানি যত নিচে নামছে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন প্রকট হচ্ছে। সিলেট সদর উপজেলা কান্দিগাও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হেরাখলা এবং মোগলগাঁও ইউনিয়নের যোগিরগাঁও গ্রাম এলাকায় বেশী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে সংশ্লিষ্ট গ্রামের ঘরবাড়ি, মসজিদ- প্রার্থনালয়। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে এ দুটি গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে আশংকা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুরমার তীরবর্তী হেরাখলা একটি বৃহৎগ্রাম ছিলো। নদী ভাঙ্গনে গ্রামটি এখন দুই ভাগে বিভক্ত। নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে ঘর বাড়ি ছেড়ে মানুষজন সুরমার এপার ছেড়ে অন্যপাড়ে গিয়ে ঘর বানান। ফলে দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়ে হেরাখলা গ্রামটি।
হেরাখলা গ্রামের মুরব্বি মখলিছুর রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গন আমাদের অনেককে গৃহহীন করেছে। স্বজনরা আজ একে অন্য ছাড়া। গ্রামের যে অংশটি বিদ্যমান আছে, সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে হঠাৎ করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে বর্তমান বাসিন্দাদের ঘর বাড়ি ছাড়ার উপক্রম হয়েছে। একটি গ্রাম ভেঙ্গে এখন নদীর দুই প্রান্তে দুটি গ্রামের জন্ম হয়েছে।
মখলিছুর রহমান জানান, গ্রামের একমাত্র মসজিদ এর অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। যেটুকু আছে সেখানে নামাজ পড়ার পরিবেশ নেই। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমাদের ঘর বাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। নি:স্ব হওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
কান্দিগাও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো: আব্দুল্লাহ বলেন, হেরাখলা এলাকায় হঠাৎ করে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এলাকার মানুষ হতদরিদ্র। এই পরিবারগুলোর মাথাগোঁজার স্থানটুকু বাঁচানো যাচ্ছে না। অনতিবিলম্বে ব্লক বসানো প্রয়োজন। না হয় হেরাখলা গ্রামের শেষ অংশটুকুও সুরমায় বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সামাদ জানান, কান্দিগাও ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে হেরাখলা গ্রামে। এই গ্রামের বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখন যেগুলো আছে সেগুলোও হুমকিতে রয়েছে।
তিনি জানান, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী , সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের প্রচেষ্টায় পশ্চিম দর্শা এলাকায় এক কিলোমিটার ব্লক স্থাপন করা হয়। ওই এলাকা রক্ষা পেলেও বাকী এলাকা এখনো ভাঙ্গন কবলিত। দিন দিন ভাঙ্গন বেড়েই চলেছে।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সাবাজ আহমদ বলেন, তার ওয়ার্ডটিও নদীর তীরবর্তী। সেখানেও ভাঙ্গন রয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় ব্লক স্থাপন হওয়ায় এলাকা রক্ষা পেয়েছে। তবুও ঝুঁকিতে রয়েছে ঘোপাল গ্রামটি। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
কান্দিগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল মনাফ জানান, তার ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম সুরমা নদীর তীরবর্তী। হেরাখলা ছাড়াও ধনপুর, জাঙ্গাইল এলাকায় নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সেই গ্রামগুলো রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমন এ বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন। আপাতত হেরাখলা গ্রাম বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মন্ত্রীর প্রতি নজরে এনেছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ে একটি ব্যবস্থা হবে।
পানি উন্নয় উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: ফখরুল আহমদ বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে তিনি হেরাখলা গ্রামের নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। হেরাখলা এলাকায় দ্রুত কিছু করা জরুরী। তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছেন বলে জানান।
এদিকে, সাম্প্রতিক ভাঙ্গনে সুরমা মোগলগাঁও ইউনিয়নের যোগিরগাঁও অংশে নদী ভাঙ্গনে নদীর ৪টি পরিবার নি:স্ব গেছে। নদী ভাঙ্গনে গ্রামের মোঃ আব্দুর রুফ, মোহম্মদ আজির উদ্দিন, বাবুল মিয়া ও আব্দুল আলিম এসব পরিবারকে আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্যত্র।
নদীর পাড়ে হুমকির মুখে থাকা রহিম উল্লাহ বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর থেকে সুরমা নদীর এই ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধের আশ্বাস পেলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
শুধু আশ্বাস শুনে আসছি কেউ আমাদের আশা পূরণ করছেন না বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন না।
গ্রামের আজির উদ্দিন বলেন, নদী ভাঙ্গনে এখন পর্যন্ত যোগিরগাও গ্রামের প্রায় ১০০টি পরিবার নি:স্ব হয়ে গেছে। তিনি এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোগলগাও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেছার আহমদ সম্প্রতি ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে তিনি কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।
পাউবো, সিলেট-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, নদী ভাঙ্গনের খবর পেয়ে একজন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাৎক্ষনিকভাবে হয়তো ব্লক বসানো যাবে না। তবে ভাঙ্গন রোধে আপদকালীন একটি ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, টাকা চেয়ে ঢাকায় প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আপাতত জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গনরোধের চেষ্টা করা হবে।
Related News
মাধবপুরে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ পাবলিক লাইব্রেরি
মাধবপুরে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ পাবলিক লাইব্রেরি বছরের পর বছর ধরে বন্ধ থাকায় হবিগঞ্জের মাধবপুরRead More
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ আরব উপদ্বীপের দেশ কুয়েত থেকে কফিনে করেRead More