পর্যটক টানছে ‘রাজা হরিনারায়ণ দীঘি’

নিউজ ডেস্ক:
পর্যটক টানছে ‘রাজা হরিনারায়ণ দীঘি’
প্রায় ৪শ’ বছরের পুরাতন এক রাজপরিবার। অর্থ-বিত্ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেছে ইতিহাস। তবে যে জিনিসটি আজও টিকে আছে তা হল ‘ রাজা হরিনারায়ন দীঘি’। আজ তিনি নেই। তবে রয়ে গেছে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত এই দীঘিটি। এর কোন এক পাশে ছিলো রাজার প্রাসাদ। তবে এখন তার কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট নেই। দীঘিটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর গ্রামে অবস্থিত।
রাজা হরিনারায়ণ রায় ছিলেন খুবই ন্যায়পরায়ণ শাসক। তার রাজত্বকালে রাজ্যে খাবার পানির অভাব দেখা দেয়। এতে প্রজাদের ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছিল। এই অভাব থেকে প্রজাদের রক্ষা করতে ১৫৮০ থেকে ১৬০০ সালের কোন একসময়ে রাজা প্রাসাদের সামনে একটি দীঘি খনন করেন। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও দীঘিতে পানি না উঠায় রাজা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। পরে দীঘির ভেতরে একটি কূপ খনন করান তিনি। তারপরও দীঘিতে পানি ওঠেনি।
এরমধ্যে রাজার ঘর আলো করে তার এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। হঠাৎ একদিন রাজা স্বপ্ন দেখেন, তার সহধর্মিণী ভানুমতি দিঘীর মধ্যে খনন করা কূপে শুদ্ধদেহে এক কলস জল ঢাললে দীঘিতে জল উঠবে।
পরের দিনই রাজা রাণীকে স্বপ্নের বিষয়টি বলেন। রাজার আদেশ মতো রাণী ভানুমতি একটি মাটির কলস দিয়ে পানি ঢালতেই কূপ থেকে গমগম করে পানি উঠতে শুরু করে। আর সেই পানির স্রোতে রাণী ভানুমতি সেখান থেকে আর উঠে আসতে পারেননি, দীঘিতেই ডুবে যান। অনেক খোঁজার পরও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
দীঘিতে জল উঠেছে ঠিকই, কিন্তু সহধর্মিণীকে হারিয়ে রাজা হরিনারায়ণ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাণীর শোকে কাতর রাজা রাজ্যসভায় আর মন দিতে পারেন নি। ক্রমেই রাজ্যের সব কিছু বিলীন হয়ে যায়। কালক্রমে রাজার সব কিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও মহাকালের স্বাক্ষী হিসাবে এখনও দীঘিটি এলাকার মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করে চলেছে।
দীঘির দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ও শান্ত, নিবিড় পরিবেশ মানুষকে আকৃষ্ট করে। এই দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক দীঘিটি দেখতে প্রতিদিনই এখানে পর্যটকরা ভীড় করেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখন পর্যটকে ভরপুর থাকে।
৩৬০ শতক আয়তনের দীঘিতে বর্তমানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। শীত মৌসুমে এখানে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। দীঘির প্রায় তিন দিকে রয়েছে ছায়াদানকারী গাছ। প্রতিদিন বিকেলে আগত পর্যটকরা এসব গাছের গোড়ায় বসে দীঘির সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
এখন এ দীঘি কমলগঞ্জের পর্যটন শিল্পকেও সমৃদ্ধ করছে। এদিকে দীঘিটির সৌন্দর্য রক্ষাকল্পে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন পর্যটকদের জন্য বসার স্থান ও ঘর তৈরি করছে।
দীঘিতে আসার রাস্তাটি পাকা করতে পারলে এবং আরো সৌন্দর্যবর্ধন করা হলে পর্যটকদের আরও বেশি পর্যটক এখানে ছুটে আসবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
চারিদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মঙ্গলপুর গ্রামের ভিতরে থাকা ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত রাজা হরিনারায়ণ দীঘি পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করছে। স্বচ্ছ জলে মাছের খেলায় পড়ন্ত বিকেলে এবং পশ্চিম আকাশে অস্ত যাওয়া ডুবন্ত সূর্য দেখতে আপনিও সপরিবারে ছুটে আসতে পারেন রাজা হরিনারায়ণ দীঘিতে।
Related News

সুনামগঞ্জে হাওরে জলাবদ্ধতায় বিপাকে কৃষক
সুনামগঞ্জে হাওরে জলাবদ্ধতায় বিপাকে কৃষক চলতি বোরো আবাদ মৌসুমে সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি হাওরে জলাবদ্ধতার কারণেRead More

ভারতের উচিত সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা: মির্জা ফখরুল
ভারতের উচিত সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা: মির্জা ফখরুল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,Read More