আয়ারল্যান্ডে নথিভুক্ত হচ্ছেন বাংলাদেশিরা
নিউজ ডেস্ক:
আয়ারল্যান্ডে নথিভুক্ত হচ্ছেন বাংলাদেশিরা৷
দীর্ঘদিন অনথিভুক্তভাবে বসবাস করছেন এমন অভিবাসীদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দিতে নির্ধারিত সময়ের জন্য বিশেষ স্কিম চালু করেছিল আইরিশ সরকার৷ তাতে আবেদন করেছেন প্রায় ২৫০ বাংলাদেশি৷ এর মধ্যে অনেকেই সুখবর পেতে শুরু করেছেন৷
২০১৯ সালে স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য হয়ে আয়ারল্যান্ডে যান আরমান (ছদ্মনাম)৷ এর মধ্যে দেশটিতে আশ্রয় আবেদন করলেও তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাননি৷ চলতি বছর আয়ারল্যান্ড সরকার ‘দীর্ঘমেয়াদি অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নিয়মিতকরণ’ স্কিম চালুর ঘোষণা দিলে দেরি করেননি তিনি৷
ইনফোমাইগ্রেন্টসকে আরমান বলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে আশ্রয় আবেদনের সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোনো সাক্ষাৎকারের ডাক পাইনি৷ স্কিম ঘোষণার পর শুরুতেই যারা আবেদন করেছে আমি তাদের একজন৷ ১০ ফেব্রুয়ারি আমি আবেদন করি৷ ৫ মে আমার চিঠি ইস্যু হয়৷ কিন্তু হাতে পেয়েছি ১৫ মে।’
এই চিঠির মাধ্যমে আরমান, তার স্ত্রী ও তিন সন্তান এখন আয়ারল্যান্ডের নথিভুক্ত নিয়মিত অভিবাসীতে পরিণত হয়েছেন৷ শুধু তিনি নন, তার মতো কয়েকশো আশ্রয়প্রার্থী ও অনিয়মিত বাংলাদেশি এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন৷ স্কিমটির আওতায় যাদের আবেদন গৃহীত হচ্ছে তারা এককালীন দুই বছরের বসবাস ও কাজের অনুমতি পাচ্ছেন, যা পরবর্তীতে নবায়ন করা যাবে৷ এক পর্যায়ে তারা দেশটির নাগরিক হওয়ারও সুযোগ পাবেন৷
‘এমন সুযোগ একবারই’
আয়ারল্যান্ডের সরকারের হিসাবে বিভিন্ন দেশের ১৭ হাজার অনথিভুক্ত অভিবাসী রয়েছেন দেশটিতে, যাদের মধ্যে তিন হাজার শিশু৷ এই অভিবাসীদের নিয়মিতকরণ বা বৈধভাবে বসবাস ও কাজের সুযোগ দিতে গত জানুয়ারিতে বিশেষ স্কিমটি চালু করে সরকার৷ ‘এক প্রজন্মের জন্য একবারই সুযোগ,’ এমন ঘোষণা দিয়ে অভিবাসীদের এই স্কিমের আওতায় আবেদনের আহ্বান জানায় আয়ারল্যান্ডের আইন মন্ত্রণালয়৷
একা বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে যারা অন্তত চার বছর ধরে আয়ারল্যান্ডে আছেন তারা আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন৷ আর পরিবারসহ থাকাদের ক্ষেত্রে এই সীমা ছিল তিন বছর৷ সেই সঙ্গে যারা আশ্রয় আবেদন করেছেন এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেতে দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছেন তারাও এই স্কিমে আবেদন করতে পেরেছেন৷ অনিয়মিতদের জন্য ৩১ জুলাই ও আশ্রয় আবেদনকারীদের জন্য ৭ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা ছিল৷
দেশটির আইন মন্ত্রণালয়ের বরাতে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাত হাজার ৮০০ জনের বেশি অভিবাসী আবেদন করেছেন৷ প্রতি ছয়জনের একজন বা ১ হাজার ৩১৬ জন ছিলেন ব্রাজিলের, ১ হাজার ৭৪ জন পাকিস্তানের, ১ হাজার ১৯ জন চীনের, ৭২৫ জন ফিলিপিনো, ৩৭৩ জন নাইজেরিয়ান এবং ২৫৩ জন ভারতীয়৷ আর বাংলাদেশি আবেদন করেছেন ২৪১ জন৷ আছেন মিশর, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়ার নাগরিকও৷
সিদ্ধান্ত পেতে শুরু করেছেন অভিবাসীরা
আরমান জানান, দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সাইটে আবেদন করার পর তিনি তাদের কাছ থেকে ফিরতি মেইল পান৷ তাকে একটি লিংক পাঠানো হয় সেখানে ব্যক্তিগত তথ্য এবং কোনো অপরাধের রেকর্ড আছে কিনা তার প্রমাণ দিতে বলা হয়৷ এরপর তথ্য যাচাই শেষে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চিঠিতে সিদ্ধান্ত জানানো হয়৷
আরমান জানান, তার পরিচিত যেসব বাংলাদেশি এই স্কিমের আওতায় আবেদন করেছেন তাদের অনেকেই এরইমধ্যে সিদ্ধান্ত পেয়েছেন৷ কারো আবেদন এখন পর্যন্ত প্রত্যাখ্যানের খবর তিনি পাননি৷
একই তথ্য জানান আরেক বাংলাদেশি মিঠু (ছদ্মনাম)৷ ইনফোমাইগ্রেন্টসকে তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশিরা নন, এশীয় বা অন্য যারাই এখন পর্যন্ত চিঠি পেয়েছেন আমার জানামতে তাদের সবারই আবেদন গৃহীত হয়েছে৷’
তিনি আশ্রয় আবেদন করে গত আট বছর দেশটিতে অবস্থান করছিলেন৷ আর ফেব্রুয়ারিতে স্কিমে আবেদন করে জুনে নথি পেয়েছেন৷ মিঠু বলেন, ‘আবেদনে একটি কলামে বলা ছিল স্কিমে আপনার পেপার গৃহীত হলে অ্যাসাইলাম (আশ্রয় আবেদন) অব্যাহত রাখবেন কিনা৷ আমার মূল লক্ষ্যই ছিল পেপার (বসবাস ও কাজের অনুমতি) পাওয়া৷ সেটি যেহেতু হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে আমার এখন আর অ্যাসাইলামের প্রয়োজন নেই৷’
আয়ারল্যান্ডের বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, স্কিমের আওতায় এরইমধ্যে দেড় হাজার অনথিভুক্ত অভিবাসী বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পেয়েছেন৷ এখনও ৬ হাজার ৩০০ এর উপরে আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে৷
নাগরিকত্বের হাতছানি
নিয়মিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই অভিবাসীরা এখন আয়ারল্যান্ড সরকারের প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন৷ আরমান বলেন, ‘এখানে সবাই চায় বৈধ থাকার জন্য৷ কারণ অবৈধভাবে থাকলে অনেক সুবিধাই আপনি পাবেন না৷ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন বা অনেক চাকরির ক্ষেত্রে আবেদন করতে গেলে ডকুমেন্টস লাগে৷ অনেকে চাকরিদাতারা অনেক ক্ষেত্রে অনুমতি থাকা সত্ত্বেও আশ্রয়প্রার্থীদের চাকরি দিতে চান না৷ কিন্তু এখন একজন আইরিশের যে অধিকার আছে আমিও সেই একই অধিকার ভোগ করব৷ আমার পরিবারও তাদের মতো সব সুবিধা ভোগ করবে৷’
অন্যদিকে অনিয়মিত অবস্থায় থাকার কারণে এতদিন যারা নিজ দেশে বা আয়ারল্যান্ডের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাননি তারা সেই সুযোগ পাচ্ছেন৷ গত আট বছর আয়ারল্যান্ডে থাকা মিঠু এখন দেশে যেতে চান তার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য৷ তিনি বলেন, ‘আমি বরাবরই আশাবাদী ছিলাম কাগজ পাওয়ার ব্যাপারে৷ এখন আমি দেশে যাব৷ আর পাঁচ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করব৷’
সব শর্ত পূরণ করলে স্কিমের আওতায় নিয়মিত হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্করা পাঁচ বছর পর ও আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয়া শিশুরা তিন বছর পর নাগরিক হওয়ার আবেদন করতে পারবেন৷
সূত্র: ইনফোমাইগ্রান্টস।
Related News
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ
কুয়েত থেকে লাশ হয়ে ফিরল শালা-দুলাভাইের নিথর দেহ আরব উপদ্বীপের দেশ কুয়েত থেকে কফিনে করেRead More
যুক্তরাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ে গাছচাপায় সিলেটির মৃত্যু
যুক্তরাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ে গাছচাপায় সিলেটির মৃত্যু যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম শহরে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছ উপড়ে পড়ে কাহেরRead More