যেসব আয়াত শুনলে সিজদা দিতে হয়
ইসলাম ডেস্ক:
পবিত্র কোরআনে কারিমে এমন কিছু আয়াত রয়েছে, যেগুলোর তেলাওয়াত করলে বা শুনলে মুমিন পাঠক ও শ্রোতাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি সিজদা করতে হয়। এই সিজদাকে সিজদায়ে তেলাওয়াত বলা হয়।
♦ তেলাওয়াত শব্দ করে বা নিঃশব্দে যেভাবেই করা হোক না কেন— সিজদা করতেই হবে। তবে একই আয়াত বারবার পড়লে, তেলাওয়াত শেষে— একবার সিজদা করলে যথেষ্ট হবে।
♦ এই সিজদা ওয়াজিব, না করলে গুনাহ হবে। তেলাওয়াতে সিজদার পদ্ধতি হলো- হাত না উঠিয়ে দাঁড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সোজা সিজদায় চলে যেতে হবে এবং ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ তিনবার পড়ে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়াতে হবে।
♦ সিজদা মাত্র একটি হবে। এতে তাশাহ্হুদ নেই, সালামও নেই। এ সিজদার জন্য হাত উঠাতে বা হাত বাঁধতে হবে না এবং দুইটি সিজদাও করতে হবে না। যদি না দাঁড়িয়ে বসে বসে সেজদা করে অথবা সেজদা করে বসে থাকে তাও জায়েজ আছে। পুরুষদের জন্য আল্লাহু আকবর জোরে বলা উত্তম।
♦ কেউ ইচ্ছাপূর্বক শুনে থাকুক কিংবা অন্য কাজে নিয়োজিত থাকাবস্থায় শুনে থাকুক অথবা অজুহীন অবস্থায় শুনে থাকুক— সিজদার আয়াত যে শুনবে, তার ওপরই সিজদা করা ওয়াজিব। এ জন্য সিজদার আয়াত তেলাওয়াতকালে চুপে চুপে তেলাওয়াত করা ভালো; যাতে অপর কোনো ব্যক্তিকে অসুবিধায় পড়তে না হয়।
♦ নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য যেসব শর্ত আছে, যেমন অজু থাকা, জায়গা পাক, শরীর পাক, কাপড় পাক এবং কেবলামুখি হওয়া। তেলাওয়াতের সিজদার জন্যও এসব শর্ত প্রযোজ্য।
♦ নামাজের সিজদা যেভাবে আদায় করতে হয়, তেলাওয়াতের সিজদাও সেভাবে আদায় করতে হবে। কেউ কেউ কোরআনে কারিমের ওপর সিজদা করে— কিন্তু এতে সিজদা আদায় হবে না।
♦ জেনে রাখা উচিত যে, বুঝমান নাবালেগ শিশু থেকে সিজদার আয়াত শুনলেও শ্রোতার ওপর সিজদায়ে তেলাওয়াত ওয়াজিব হয়।
♦ নামাজরত ব্যক্তি যদি বাইরের লোকের কাছে অথবা বাইরের লোক নামাজরত ব্যক্তির কাছে আয়াতে সিজদা শোনে তাহলেও তাদের ওপর সিজদা ওয়াজিব হবে। তবে নামাজরত ব্যক্তি নামাজ শেষ করে আলাদাভাবে সিজদা আদায় করবে।
হানাফি মাজহাব মতে পবিত্র কোরআনে কারিমের সিজদার আয়াতগুলো হলো-
১. সুরা আরাফ, আয়াত ২০৬। ২. সুরা আর-রাদ, আয়াত ১৫। ৩. সুরা আন নাহল, আয়াত ৪৯। ৪. সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ১০৯। ৫. সুরা মারইয়াম, আয়াত ৫৮। ৬. সুরা হজ, আয়াত ১৮। ৭. সুরা আর ফোরকান, আয়াত ৬০। ৮. সুরা আন-নামল, আয়াত ২৬। ৯. সুরা আস সিজদাহ, আয়াত ১৫। ১০. সুরা সাদ, আয়াত ২৫। ১১. সুরা হা-মীম সিজদা, আয়াত ৩৮। ১২. সুরা আন নাজম, আয়াত ৬২। ১৩. সুরা আল ইনশিকাক, আয়াত ২১। ১৪. সুরা আল আলাক, আয়াত ১৯।
প্রসঙ্গত, পুরো কোরআন মাজিদে তিলাওয়াতে সিজদার আয়াত মোট চৌদ্দটি। সুতরাং পুরো কোরআন মাজিদ খতম করার পর চৌদ্দটি সিজদা করে নিলে এক খতমের সকল সিজদা আদায় হয়ে যাবে। তবে একাধিক খতম করে কিংবা সারাজীবন যত তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে— সবগুলোর জন্য চৌদ্দটি সিজদা আদায় করে নিলেই যথেষ্ট হবে; তবে এ ধারণা ঠিক নয়। বরং যতগুলো সিজদার আয়াত যতবার তিলাওয়াত করা হয়েছে, সবগুলোর জন্য পৃথক পৃথক সিজদা দিতে হবে। শুধু এক বৈঠকে একটি সিজদার আয়াত একাধিকবার পড়লে সেক্ষেত্রে একটি সিজদা ওয়াজিব হবে।
উল্লেখ্য যে, সিজদায়ে তিলাওয়াত বিলম্ব না করে সিজদার আয়াতের পরেই আদায় করা উচিত।
তথ্যসূত্র : শরহুল মুনইয়া : ৫০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া : ১/১৫৮
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More