Main Menu

অভিবাসীদের সাগরে ফেলে দেয় গ্রিক উপকূলরক্ষীরা, পরে মৃত্যু: চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

নিউজ ডেস্ক:
ফরাসি, জার্মান ও ব্রিটিশ মিডিয়ার তদন্তে উঠে এসেছে, গ্রিক উপকূলরক্ষীরা গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিন অভিবাসীকে কোন প্রকার লাইফ জ্যাকেট ও নৌকা ছাড়াই মারধর করে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল। তাদের মধ্যে দুইজন অভিবাসী সমুদ্রে ডুবে মারা যায়। গ্রিস উপকূলে একই পরিণতি ভোগ করে জানুয়ারির শেষ দিক থেকে নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন অভিবাসী।

জোরপূর্বক ও সম্পূর্ণ অবৈধ পুশব্যাকের ঘটনা উদঘাটনের ঘটনায় ইউরোপ জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ক্যামেরুনের এক আশ্রয়প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, গ্রিক উপকূলরক্ষীকে তাকে ডুবে যাওয়া অন্য দুই ব্যক্তির সাথে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডের স্পিগেল, ফরাসি অনুসন্ধানী গণমাধ্যম মিডিয়াপার্ট, ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান এবং সহযোগী সংবাদসংস্থা লাইটহাউস রিপোর্টসের কয়েকমাসব্যাপী যৌথ তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য।

তদন্তে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরের গ্রিসের সামোস দ্বীপের কাছে তুরস্ক সীমান্তের নিকটে ঘটা একটি পুশব্যাক অভিযানের গ্রিক উপকূলরক্ষীরা পিটিয়ে তিনজন অভিবাসীকে সমুদ্রে ফেলে দেয়।

তদন্ত দলের কাছে মূলত অভিযোগটি করেন আশ্রয়প্রার্থী ইব্রাহিম। যিনি অন্য ৩৫ জন অভিবাসীর সাথে তুর্কি উপকূল থেকে সামোস দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য একটি অস্থায়ী নৌকায় চড়েছিলেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে সংগৃহীত বেশ কয়েকটি সাক্ষ্য অনুসারে, সামোসে পৌঁছে নৌকায় থাকা অভিবাসীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রিক উপকূলরক্ষীদের হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন। পাশাপাশি তাদের মোবাইল ফোন এবং সাথে থাকা নগদ অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।

অনেক অভিবাসী দাবি করেছেন, তাদের মলদ্বার এবং যৌনাঙ্গতে আঘাত করা হয়েছিল।

সামোস দ্বীপের কাছে থাকা একটি নৌকায় উঠতে তিন অভিবাসীকে বাধ্য করা হয়েছিল। বেঁচে যাওয়া অভিবাসী ইব্রাহিম তদন্ত দলকে বলেন, ‘‘নৌকাটি উপকূলে চলে আসলে গ্রিস উপকূলরক্ষীরা আমাদের তিনজনকে কোন নৌকা ও লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই ঘুষি মেরে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল।”

ঘটনার পর ১৮ এবং ২০ সেপ্টেম্বর তুরস্কের কোস্টগার্ড ও সমুদ্রে তুরস্কের টহল জাহাজ নিহত দুইজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন, ৩৬ বছর বয়সি আইভোরি কোস্টের নাগরিক সিডি কেইটা এবং ৩৩ বছর বয়সি ক্যামেরুনের নাগরিক দিদিয়ের মার্শাল কাউমাউ নানা।

তিন অভিবাসীদের মধ্যে ইব্রাহিম সামোসের বিপরীতে থাকা তুর্কি উপকূলে সাঁতার কেটে পৌছে যেতে পেরেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি গ্রিসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন।

নিয়মিত ঘটনা
তদন্ত দলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা বলেন, এই নাটকীয় ঘটনা ছাড়াও অভিবাসীদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করা গ্রিক উপকূলরক্ষীদের জন্য একটি সাধারণ ও নিয়মিত ঘটনা।

ফরাসি গণমাধ্যম মিডিয়াপার্টের সাংবাদিক টমাস স্ট্যাটিয়াস বলেন, “গ্রিক কোস্টগার্ডের দুই কর্মকর্তা আমাদের কাছে এরকম ঘটনা সংগঠিত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন। তাদের মতে এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, মানুষকে একটি রাবারের নৌকা ও লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে ফেলে দিতে কোস্টগার্ডকে খুব একটা বেগ পেতে হয় না৷

দ্বিতীয়ত, এই ধরনের পুশব্যাকের মাধ্যমে এজিয়ান সাগরের অপর প্রান্তে তুরস্কে অপেক্ষারত থাকা হাজারো অভিবাসীদের কাছে কঠিন বার্তা দেয়া হয়।”

অপরদিকে, এই অভিযোগ সম্পর্কে গণমাধ্যমগুলো যৌথ তদন্তদলের কাছে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেছে গ্রিক কোস্টগার্ড। গ্রিসের অভিবাসন ও আশ্রয়বিষয়ক মন্ত্রী নটিস মিত্রাচি বলেছেন, “গ্রিস আন্তর্জাতিক আইন এবং মৌলিক অধিকারের সনদ অনুসারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্ত রক্ষা করে।”

তিনি অবৈধ অভিবাসন নিয়ে গ্রিসের বিরুদ্ধে তুর্কি সরকারের প্রচারণার নিন্দা করেন। এক বিবৃতিতে নটিস মিত্রাচি গর্ববোধ করে বলেন, “গ্রিক কোস্ট গার্ড প্রতি বছর সমুদ্র থেকে হাজার হাজার নারী, পুরুষ এবং শিশুদের জীবন রক্ষা করে চলেছে।”

জানুয়ারি মাসে নিখোঁজ আরো এক ব্যক্তি
চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, চিওস দ্বীপে প্রবেশ করা তিন ব্যক্তিকে মধ্যরাতে জোরপূর্বক পানিতে ফেলে দিয়েছে গ্রিক উপকূলরক্ষী বাহিনী।

তাদের মধ্যে দুইজন সাঁতার কেটে তুরস্কে পৌঁছতে সক্ষম হলেও আরেকজন নিখোঁজ রয়েছেন। জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডের স্পিগেল জানিয়েছে, এই নিখোঁজের ঘটনায় গ্রিসের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তুর্কি আইনজীবীরা।

বেশ কয়েকটি অধিকার সংগঠন নিয়মিতভাবে গ্রিসকে অভিবাসী শিবিরে দুর্ব্যবহার এবং সীমান্তে অবৈধ পুশব্যাকের জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। যা এথেন্স নিয়মিত ও পদ্ধতিগতভাবে অস্বীকার করে থাকে।

গত অক্টোবরে ইনফোমাইগ্রেন্টস গ্রিসের একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যের সাথে দেখা করতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, তিনি নিজেই বছরের পর বছর ধরে এভ্রোস অঞ্চল থেকে তুরস্কের দিকে হাজার হাজার অভিবাসীকে পুশব্যাক করেছেন। সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *